ঢাকা ৫ ভাদ্র ১৪৩১, মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

টার্গেট

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৪ পিএম
আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৭ পিএম
টার্গেট
অলংকরণ: মেহেদী হাসান

তছলিম মিয়ার মুখ চুকচুকে স্বভাব। ভালো তরকারি না হলে তিনি খেতে পারেন না। মাছ ভর্তার প্রতি ছোটকাল থেকেই তার দুর্বলতা। কাজ থেকে ফিরে কোনো তরকারি না থাকলে বড়শি নিয়ে সোজা চলে যেত রাস্তার ধারের খালে কিংবা গফুর মিয়ার মাঠের পুকুরে। সেখান থেকে দু-চারটে মাছ ধরে এনে একটু বেশি করে পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল করে ভর্তা করে নিমিষেই আধা সের চালের ভাত খেয়ে ফেলত। এ রকম ভর্তা খেতে খেতে এক সময় তরকারি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে তছলিম মিয়া। তার কথা- ‘অযথা তেল, লবণ, মসলা তরকারিতে খরচ না করে ভর্তা বানালে মসলাও বাঁচে আর খরচও কমে।’ ইদানিং তছলিম মিয়ার বাড়িতে শুধু ভর্তাই চলে। এ খবর পড়শীরা জানতে পেরে তছলিম মিয়াকে ‘ভর্তা মিয়া’ বলে ডাকে।

একবার ঈদের বাজার করতে বাজারে এসে প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগে গেল তছলিম মিয়ার। তাড়াহুড়া করে খরচ সেরে ঢুকে গেল নবাবগঞ্জ বাজারের ‘সেতারা হোটেলে’। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল ছুঁইছুঁই। হোটেলে ঢুকেই বড় বড় অক্ষরের লেখাগুলো তার চোখ এড়াল না। ‘এখানে সব ধরনের ঐতিহ্যবাহী ভর্তা পাওয়া যায়’। ক্যাশটেবিলের ওপরেই থরে থরে ভর্তা সাজানো। আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা, মাছ ভর্তা, কচু ভর্তা, বাদাম ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, কালাই ভর্তা, তিল ভর্তা- এরকম আরও বিভিন্ন রকমের ভর্তা। তখন প্রায় বেশির ভাগ লোক দুপুরের খাবার সেরে আয়েশি ঢেকুর তুলে দাঁত খিলাল করতে করতে হোটেল ত্যাগ করছে। 

হোটেলের খাদ্যদ্রব্যে কিছুটা টান টান ভাব। তবুও কোনো ফাঁকা টেবিল তো দূরের কথা একটা ফাঁকা চেয়ারও জুটছে না তার ভাগ্যে। মহাজন তার বিশালদেহী ভুঁড়িটা নিয়ে ক্যাশটেবিলে বসে খাদকদের বিল নিচ্ছেন। আর সেই সাথে পেঁয়াজ, মরিচ, শশা কাটছেন। এরকম মহাজন তছলিম মিয়া জীবনে কমই দেখেছেন। চেয়ার একটা ফাঁকা হতেই তাড়াহুড়া করে চেয়ারটা দখলে নিলেন তছলিম মিয়া। ভাতের প্লেট টেবিলে দিয়েই মুখস্থ ছড়ার মতো ভর্তা, শাক-সবজি, গরু, খাসি, মুরগি, মাছ বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই অন্য টেবিলে চলে গেলো ছেলেটা। এ সময় আর একজন ক্ষুধার্ত লোক তছলিম মিয়ার টেবিলে মুখোমুখি হয়ে বসলেন। সঙ্গে সঙ্গেই ভাতের প্লেটও হাজির। তছলিম মিয়া মাছ ভর্তার অর্ডার দিতেই লোকটি বললো-‘আমারও’ । ছেলেটি চলে গেলো এবং ফিরে এলো একটা মাছ ভর্তা নিয়ে। বললো- ‘বাইজান মাছভর্তা একটা আছে, আপনি লন, আর আপনারে অন্যকিছু দেই। বলেন কী দিমু।’
লোকটি বললো- ‘না, আমাকে দে, মাছ ভর্তা ছাড়া আমি খেতে পারি না।’

তছলিম মিয়া বললো-‘না, আমাকে দে, মাছ ভর্তা আমার জান। মাছ ভর্তা ছাড়া আমার চলবেই না।’ শুরু হলো দুজনের মধ্যে ভর্তা নিয়ে টানাটানি। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠলো তছলিম মিয়ার। ভর্তা নিয়ে টানাটানির এক পর্যায়ে তছলিম মিয়া ভর্তা হাতে নিয়ে লোকটির নাকের উপর বসিয়ে দিলেন। লোকটিও থেমে থাকলেন না, তিনিও ভাতের প্লেটটি তছলিম মিয়ার দিকে ছুঁড়ে মারলেন। তছলিম মিয়া আবার ডালের বাটি লোকটির নাকে মুখে ছুঁড়ে মারলেন।

অন্য টেবিলে বসে থাকা কাস্টমারদের গায়ে ডাল, ভাত পড়ায় তারাও ক্ষেপে গিয়ে ডাল, ভাত, তরকারি যে যা পাচ্ছে তাই দিয়ে ঢিল মারছে। শুরু হলো ভাত, তরকারির বৃষ্টি। তুলোর মতো ভাত, ভর্তা, তরকারি আকাশে বাতাসে উড়ছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে কারো চোখে, মুখে, কানে ভাত তরকারি লেগে আছে। কারো সাদা শার্ট তরকারির রঙে রঙিন হয়েছে। কিন্ত সেদিকে তাকাবার একটুও ফুরসত নেই। ইতোমধ্যে দুটো গ্রুপে লোকজন ভাগ হয়ে গেছে। কেউ বলছে- ‘তছলিম মিয়া আমাদের কর্মী।’ কেউ বলছে- ‘তছলিম ভাই আমাদের নেতা।’
 
শুরু হলো দু’দলে তছলিম মিয়াকে নিয়ে টানাটানি। একদল টানতে টানতে নিয়ে যায় নবাবগঞ্জ বাজারের দিকে তো আরেক দল হেচকা টানে নিয়ে আসে সুপার মার্কেটের দিকে। এমনিতেই তছলিম মিয়ার না খাওয়া শরীর, তাতে আবার টানাটানিতে জীবন বেরিয়ে আসার অবস্থা। জোরে জোরে হাপাচ্ছে। ভাত তরকারি ভরা রঙিন শার্টটা ছেঁড়ার শব্দ হচ্ছে। কিন্ত তাতে কারো কর্ণপাত নেই। তছলিম মিয়া বলছে- ‘ভাই আমাকে ছেড়ে দেন, আমার হাত ছিঁড়ে যাচ্ছে।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। নিজের দলে তছলিম মিয়াকে নিতে কারো উৎসাহের কোন কমতি নেই।

ইতোমধ্যে তছলিম মিয়া ঈদের বাজার খরচ, পকেটের টাকা, হাতের ঘড়ি, স্যান্ডেল সব হারিয়েছে। একদল তছলিম মিয়াকে দলে নিতে না পারায় মিছিল বের করেছে। মিছিলে শ্লোগান শোনা যাচ্ছে- ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা- এই বাংলায় রাখবো না। অবিলম্বে তছলিমকে গ্রেপ্তার করো, করতে হবে। রংপুরে সন্ত্রাস কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, আরো ইত্যাদি শ্লোগান।

এদিকে আরেক দল তছলিম মিয়াকে নিয়ে মিছিল বের করেছে। ‘তছলিম ভাই এগিয়ে চলো- আমরা আছি তোমার সাথে। তছলিম ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। মহান নেতার কিছু হলে- জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।’
ইতোমধ্যে তছলিম মিয়া সুযোগ বুঝে সটকে পড়েছে। ঘটনা গড়াতে গড়াতে থানা পর্যন্ত পৌঁছালো। সঙ্গে সঙ্গেই নবাবগঞ্জ বাজার ও সুপার মার্কেট এলাকায় পুলিশে পুলিশে ভেসে গেল। পুলিশ অফিসার আদেশ দিলেন, ঘটনার মূল নায়ক ভর্তা তছলিমকে খুঁজে বের করো। ব্যাটা যাবে কোথায়, এতদিন তোমাকেই খুঁজছিলাম। ঐ ব্যাটা ভর্তা তছলিম আমার সন্দিগ্ধ তালিকার প্রথম টার্গেটেই রয়েছে।

আবু সাঈদ একটি ইতিহাস

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৪ পিএম
আবু সাঈদ একটি ইতিহাস
অলঙ্করণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

কে বলে তুমি ব্যর্থ? তুমি স্বার্থক,
তুমি জাগ্রত বাঙালি জাতির মুখরিত স্লোগান,
তুমি সাহসী নেতৃত্বে গাও নজরুলের জয়গান। 
তুমি উদিত রবির ঝলমলে সোনালি সকাল।
তুমি কোমলপ্রাণে নব উদ্যোগ-
দৃঢ় সংকল্পে- দৃঢ় বিশ্বাস। 
ব্যর্থ নও তুমি, ব্যর্থ নয় তোমার আত্মার চিৎকার;
তবে ব্যর্থ হয়েছে ওরা, সীমাহীন নির্মম নিষ্ঠুরতায়,
লজ্জার বেষ্টনীতে মোড়ানো ঠোঙার ভালোবাসায়! 
দুঃখভরা বুকে মাখিয়ে পথের ধুলি, 
বিনা অনুমতিতে বিবেকহীনে করেছে গুলি। 
তুমি রবে নীরবে ঐ  লাল-সবুজ মানচিত্রে, 
তুমি রবে শহর বন্দর চত্বরে চত্বরে দাঁড়িয়ে, 
তুমি রবে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হৃদবন্ধনে,
কিংবা নির্মিত উঁচু ভবন উল্লিখিত নামফলকে, 
কালের সাক্ষী হয়ে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। 
বাহান্নোর ভাষা সৈনিকের ন্যায় আবু সাইদ 
একটি ইতিহাস, রাতের আঁধারে তৈরি শহিদ মিনার! 
লজ্জিত জাতি ভুল সিদ্ধান্তেই করছে হাঁসফাঁস, 
স্মরণীয় দু-হাজার চব্বিশে অবিস্মরণীয় ইতিহাস।

মুগ্ধ এসেছিল লাশ হয়ে

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০১:২০ পিএম
আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৪ পিএম
মুগ্ধ এসেছিল লাশ হয়ে
অলঙ্করণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

জুতাটি কারবালা প্রান্ত থেকে ফিরে এল 
অথচ মা বলেছিল এবার আর কোনো জুতা 
হারানো যাবে না, মুগ্ধ তার মায়ের কথা রেখেছে 
গুলিটি আঠারো কোটি জনতার বুক ছিঁড়ে 
সাঈদের বুকে এসে থামলেও ছোট্ট গোপিকে
বাঁচাতে না পেরে উত্তপ্ত রাজপথে লাখো জনতার ভিড় 
পুলিশের গুলিতে রক্ত স্রোতের ঢেউ তুললেও
এখানে পানি নেই, নেই কোনো মানবতা 
ভয়ংকর পিচাশের সমস্ত শহর নিরীহ মানুষ 
আর বোনের আর্তচিৎকারে মুগ্ধ এগিয়ে এল 
এই পানি লাগবে পানি, এই দৃশ্য যেন জান্নাতের
অথবা কোনো ফেরেশতা এসেছে রক্তাক্ত বাংলায়
অতঃপর বিজয়ের হাসি নিয়ে আমরা ঘরে ফিরলেও 
মুগ্ধ এসেছিল লাশ হয়ে তার মাকে জুতা জোড়া
ফিরিয়ে দেবে বলে।

বিপ্লবীরা হয় না পরাজয়

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৪ পিএম
বিপ্লবীরা হয় না পরাজয়
অলঙ্করণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

আমি দেখেছি অনেক রক্ত, 
দেখিনি কখনো এত, 
চব্বিশে ঘটানো রক্তাক্ত প্রান্তরের মতো।
এ যেন কোনো অনাহারীর উদর পূর্ণের
তাজা প্রাণের তাজা রক্তের জোগান,
আর অনাহারী জোগানদাতাদের ভগবান। 
রক্তের স্রোতে অশ্রু ঝরাতে দেখেছি 
পাথুরে আত্মার অনেক পাষান। 
দেখেছি রক্তেরা পরস্পর কথা বলতে 
জীবন্ত আত্মার সাথে।
ওরা বলছে ওরা অনাহারীর আহার নয়,
ওরা ন্যায্য দাবির বিপ্লবীর পথপ্রদর্শক। 
বিপ্লবীরা বিশ্বে সর্বকালে হয় অকুতোভয়, 
বিপ্লবীরা হয় না পরাজয়।

প্রতিবাদের আগুন জ্বালো

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৬ পিএম
আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৪ পিএম
প্রতিবাদের আগুন জ্বালো
অলঙ্করণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

ঘুষ-দুর্নীতির রাহুগ্রাসে
মাতৃভূমি নিঃশেষ আজ,
দুর্নীতিবাজ উচ্ছ্বাস নিয়ে 
দেশের বুকে করছে রাজ!

অস্পৃশ্যরা তখ্তে বসে
নিঃস্বের ত্রাণে করছে লুট,
সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজরা
এক প্লাটফর্মে বাঁধছে জোট।

জুলুমবাজির খেলছে খেলা 
ছদ্মবেশী ডাকুর দল,
ব্যাভিচারীর নগ্ন উল্লাস 
দৃষ্টে আসে চোখের জল!

আর কতকাল সইবে দহন 
সত্য পথের পথিক গণ,
মাতঙ্গীনির নৃত্য তুলে 
দাও লাগিয়ে প্রলয় রণ!

প্রতিবাদের আগুন জ্বেলেই
আনতে হবে মোদের জয়,
সত্যপথের কাণ্ডারিদের
লড়তে আবার কীসের ভয়?

বন্ধ্যা দিন-রাত

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৪ পিএম
বন্ধ্যা দিন-রাত
আঁকা: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

প্রায়শই তেল চিটচিটে বালিশের নিচে
আশার পাখিটা বন্দি রাখি!
নইলে ফুরসত পেলেই
কেটে কুচি কুচি করতে চায় বন্ধ্যা দিন-রাত!

ফিরিঙ্গি চালচিত্রের জঠরে চালাতে চায়
অমর কুঠারাঘাত!
অগত্যা দিনলিপি হতে কিছু বুলেটপ্রুফ শব্দ দিয়ে
ধৈর্যের মোড়ক সেঁটে দিই!

পাশ ঘুরে কাত হলেই তো শুনি কালের ঘণ্টাধ্বনি!
শেষ যাত্রার প্রয়োজনে...
কিছু লৌকিক পদাবলিও কাটছাঁট করে দিই
তবু ফিরে আসুক নির্ঝঞ্ঝাট জীবনছন্দ।