![সশস্ত্র ডাকাতি আনচ্যালেঞ্জ ছেড়ে দেব না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী](uploads/2024/04/06/1712426359.Bandarban Home Ministerkk.jpg)
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে জেলার রুমা উপজেলা ও সোনালী ব্যাংক শাখার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। সশস্ত্র অবস্থায় পোশাক পরে ডাকাতি, এটা আনচ্যালেঞ্জ ছেড়ে দেবেন না বলেও উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে বান্দরবানের ঘটনায় কারো কোনো গাফিলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী।
শনিবার (৬ এপ্রিল) ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বান্দরবানে পৌঁছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি রুমার ঘটনাস্থলে যান। মন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ও ডিজিএফআই প্রধানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এভাবে তারা সশস্ত্র অবস্থায় পোশাক পরে ডাকাতি করবে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা আনচ্যালেঞ্জ ছেড়ে দেবো না। দেশের নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে যাবে। কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বান্দরবানের ঘটনায় কারো ইন্ধন আছে কী না, কে কে সহযোগিতা করেছে সব খুঁজে বের করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি থাকলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।
জনগণ যদি চায় শান্তি আলোচনা করা হবে
পরে বেলা ১১টায় রুমা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, আনসার ব্যারাক, সোনালী ব্যাংক ও মসজিদ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বেলা সাড়ে ১২টায় বান্দরবান সদরের সার্কিট হাউসে আয়োজিত জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিকসহ বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদার মতবিনিময় করেন।
মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, বান্দরবান একসময় খুব শান্তিপ্রিয় এলাকা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও অপহরণের মত বড় ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে। এর আগেও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। এসব কার্যক্রম আমরা আনচ্যালেঞ্জ হিসেবে নেব না। এদের পিছনে কোন ইন্দন আছে কী না তাও বের করে নেওয়া হবে এবং ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক ডাকাতির মতো এ ঘটনায় কোনো সংস্থার দায়িত্ব পালনে ঘাটতি বা গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। জনগণ চাইলে কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংলাপ হতে পারে। তবে কোনো অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি হতে দেওয়া যাবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব (সেবা)। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন,বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী,ৱ্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) মাহাবুবুর রহমান, আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডার মেহেদি হাসান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মুজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন প্রমূখ।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করে। টাকার পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্রও লুট করে। অপহরণ করে নিয়ে যায় ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দীনকে। যদিও প্রায় দুদিন পর তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। এর পরদিন দুপুরে রুমা থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে তিনটি গাড়িতে আসা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনার পর থেকে ওই দুই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে গত দুদিন ধরে কয়েক দফায় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে রুমা ও থানচি উপজেলায়।
এমএ/