![অটোর দখলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ভোগান্তি](uploads/2024/04/09/1712636943.Dhamrai.jpg)
ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দেদার চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এতে প্রায়ই ঘটছে না ধরনের দুর্ঘটনা। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। মহাসড়কে পুলিশি অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না এসব গাড়ি। শুধু লোকাল লেনই নয়, মাঝের লেনেও চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পুলিশ মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারচালকদের আটক করলেও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনেকেই দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিচ্ছেন অটোরিকশা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত গাড়ি নিয়ে। দেখলেই মনে হয় মহাসড়ক এখন অটোরিকশার দখলে। তবে ঈদ সামনে রেখে অটোরিকশা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা আগের চেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রবিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা রোড এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধামরাইয়ের ইসলামপুর থেকে বারবাড়িয়া পর্যন্ত কয়েক হাজার অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। এদের অনেকেই বেশি টাকা আয়ের আশায় দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু লোকাল লেনই নয়, মাঝের লেন দিয়েও যাতায়াত করছে এসব যান।
জানা গেছে, মাঝেমধ্যে হাইওয়ে পুলিশের একটি দল মহাসড়কে এসে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরলেও আবার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। অটোরিকশার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দিচ্ছে না তারা। রিকশাপ্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা জমা দিলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
একাধিক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘সব সময় হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় বের হয় না। রাস্তায় পুলিশ থাকলে আমরা যাই না। তবে মহাসড়ক দিয়ে গাড়ি না চললে ইনকাম বেশি হয় না। মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে থেকে উত্তর পাশে যাওয়ার কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। যদি আন্ডারপাস বা বিকল্প রাস্তা তৈরি করে দিত তাহলে আমরা আর মহাসড়কে উঠতাম না। তবে এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হলে মহাসড়কে উঠতেই হবে। তা ছাড়া দিনে ২০০ টাকাও ইনকাম করা যাবে না।’
নুরুল হুদা নামে এক চালক বলেন, ‘মহাসড়কে অটোরিকশা নিয়ে গেলে পুলিশের সামনে পড়লেই ২ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়। এতে তারা গাড়ি ছেড়ে দেয়। সঙ্গে মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। তবে কোনো টোকেন নেই। সব সময় পুলিশ নজরদারি করে না। হঠাৎ করে আসে, কয়েকটি রিকশা ধরেই আবার চলে যায়।’
নবীনগর থেকে ধামরাই থানা রোডে অটোরিকশা নিয়ে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, ‘আমরা মাসিক টাকা দিই। তাই আমাদের গাড়ি ধরে না। তার পরও যখন অভিযান নামে আমরা আগেই খবর পাই।’
স্থানীয়রা জানান, শুধু মহাসড়ক নয়, আঞ্চলিক সড়কেও অটোরিকশার চাপ কম নয়। অটোরিকশার চালকরা নিজেদের রাস্তার রাজা মনে করেন। কিছুদিন আগে সোমভাগ ইউনিয়নের চাপিল এলাকায় অতিরিক্ত গতিতে চলে আসা অটোরিকশার ধাক্কায় ইয়াহিয়া নামে পাঁচ বছরের এক শিশু মারা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা তুষার আহমেদ শান্ত নামে এক পথচারী বলেন, ‘রাস্তার ডিভাইডারের কারণে অটোরিকশায় অনেক পথ ঘুরে আসতে হয়। যদি আন্ডারপাসের ব্যবস্থা থাকত তাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটত না। এমনকি পুলিশেরও নজরদারির প্রয়োজন ছিল না। লোকাল রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে আয় খুবই কম। ফলে বেশি আয়ের প্রয়োজনে মহাসড়কে উঠতে হয় চালকদের। তাই দুর্ঘটনাও ঘটে।’
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ধামরাই শাখার সভাপতি এম নাহিদ মিয়া বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কে ব্যাপক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে ঝামেলা পোহাতে হয়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সড়কে ধীরগতির যানবাহন। এসব যানবাহন অতিরিক্ত মুনাফার আশায় সড়কে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে পুলিশের পাশাপাশি আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে এমন ধীরগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।’
সাভার হাইওয়ে পুলিশের ওসি আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমরা বারবার সতর্ক করার পরও অটোরিকশার চালকরা সুযোগ পেলেই মহাসড়কে উঠে যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।’