![এনবিআর বলছে ভাড়া বাড়ছে, নাকচ ডিএমটিসিএলের](uploads/2024/07/02/1712228360.DMTCL-1719860841.jpg)
মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সংযোজন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট সংযুক্ত হলে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)। তাই মেট্রোরেলের টিকিটে রেয়াত সুবিধা যেন প্রত্যাহার করা না হয়, সে জন্য সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির প্রত্যুত্তর না আসায় ডিএমটিসিএল এখনই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
সোমবার (১ জুলাই) দিনভর এ নিয়ে নানা বিভ্রান্তির পর ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান, এখনো টিকিটের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। তবে এর আগে রবিবার সকালে এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক নীতি) মোহাম্মদ হাসমত আলী বলেন, ‘যেহেতু এখনো এনবিআর থেকে কোনো বিশেষ আদেশ দেওয়া হয়নি; সুতরাং আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকে মেট্রোরেলে মূসক আরোপিত হবে।’ পরে খবরের কাগজের দুজন প্রতিবেদক শাহবাগ ও বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে জানান, মেট্রোরেলের টিকিটে অতিরিক্ত অর্থ কেটে নেওয়া হয়নি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভ্যাট বসানোর বিষয়ে এখন সরকারের সিদ্ধান্তই সব। সরকার যদি মনে করে তাহলে ভ্যাট বসবে। তবে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভ্যাট না বসানোর বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।’
২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) চিঠি দিয়ে এনবিআর জানায়, জুলাই থেকে মেট্রোরেলের সেবা ও টিকিটে মূসক পরিশোধ করতে হবে। এদিকে মেট্রোরেলের ভাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। মেট্রোরেলের টিকিটের দাম কমানোর দাবিও করেছেন যাত্রী অধিকারবিষয়ক নানা সংগঠন। এখন মেট্রোরেলের টিকিটে যদি ভ্যাট আরোপ করা হয়, সেই অঙ্ক পরিশোধ করতে হবে যাত্রীদের।
ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকে এনবিআরকে একটি চিঠি দিয়ে ভ্যাট যুক্ত করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়েছে। মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি রয়েছে, যারা নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের সচিব। তার নেতৃত্বে কমিটি ট্যারিফ নির্ধারণ করবে। তারপর সেটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হবে। সেখান থেকে সায় এলে তার পরই মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিএমটিসিএল প্রত্যাশা করছে এনবিআর মেট্রোরেলের টিকিটে রেয়াত সুবিধার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবে। আমরা এখন এনবিআরের চিঠির অপেক্ষায় আছি। চিঠি আসার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব কী করা যায়।’
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট সংযুক্তিতে এনবিআর আর ডিএমটিসিএলের মধ্যে চিঠি চালাচালির মধ্যে প্রসঙ্গত আলোচনায় এসেছে ভ্যাট আরোপিত হলে টিকিট ভাড়ায় অসংগতির বিষয়টি। টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে ২০ টাকার ভাড়া হবে ২৩ টাকা, ৩০ টাকার ভাড়া ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা; এভাবে ১০০ টাকার ভাড়া হবে ১১৫ টাকা। যারা এমআরটি পাস ব্যবহার করছেন, তাদের কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে টাকা কাটা হবে। জটিলতায় পড়বেন যারা সিঙ্গেল জার্নি টিকিট কাটছেন। একক যাত্রার টিকিট নিতে হচ্ছে কাউন্টারে অথবা টিকেট ভেন্ডিং মেশিন থেকে। কোনো যাত্রীকে যদি ২৩ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয়, তাহলে তাকে একটি এক টাকা এবং একটি দুই টাকা দিতে হবে। কিন্তু ভেন্ডিং মেশিনে টাকা দেওয়া যায় একবার। খুচরা টাকার জটিলতা তৈরি হবে কাউন্টারেও।
এ নিয়ে ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘খুচরা টাকার এ বিষয়টি এক বড় সমস্যা। যদি ভ্যাট ইনক্লুডেড হয় টিকিটে, তখন ভাড়া সেভাবেই সমন্বয় করতে হবে। দূরত্ব ভেদে তখন নতুন ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি চলে আসবে। ভাড়া রাউন্ড ফিগারেই করতে হবে।’