![রাজস্ব আয় নিয়ে আইএমএফের অসন্তোষ](uploads/2024/04/24/1713975424.IMF.jpg)
বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজস্ব আয় আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদানকারী সংস্থাটি।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ তাগাদা দেওয়া হয়। বৈঠকে অর্থনীতির চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি ঋণ পাওয়ার শর্তগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় হার আরও বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়ানো এবং আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার ওপরও তাগিদ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ অনেক শর্ত দেয়। রিজার্ভ ছাড়া প্রায় সব শর্ত পূরণ করে দুই দফায় দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছেও বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের শর্ত কতখানি কী পূরণ হলো, তার মূল্যায়ন করতে আইএমএফ মিশনের ঢাকায় আসা।
প্রথম দিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে তারা। আগামী ৮ মে পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবে আইএমএফ মিশন। এসব বৈঠক শেষে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে মিশন এবং তা ওয়াশিংটনে আইএমএফের পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনে তৃতীয় কিস্তির টাকা ছাড় পাওয়ার কথা।
সূত্র জানায়, গতকাল অর্থ বিভাগের বাজেট এবং ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে মূলত চলতি সংশোধিত ও আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্তের বাস্তবায়ন এবং সার্বিক অর্থনীতির অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত হচ্ছে চলতি অর্থবছরের পাশাপাশি আগামী অর্থবছরেও কর জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। তবে সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচন থাকায় বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বরভিত্তিক রিজার্ভ ও কর রাজস্ব আহরণসহ বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছিল আইএমএফ।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশোধিত কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বিপরীতে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা আদায় করেছে সরকার। তবে অর্থবছর শেষে আগামী জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এর প্রায় পুরোটায় আহরণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণ করে এনবিআর নিজেই জানিয়েছে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ না হওয়ার শঙ্কা এবং আগামী অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর্যাপ্ত কর্মপরিকল্পনা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। একই সঙ্গে তারা রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক বছর থেকে আলোচনা হলেও তেমন সফলতা আসেনি, বরং ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা কমে গত কয়েক বছর কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জন্য করনীতি প্রশাসন এবং কর আহরণ কর্তৃপক্ষকে আলাদা করার পুরোনো আলোচনাটিও পুনরায় উঠে এসেছে। এটি বাস্তবায়ন ছাড়া রাজস্ব বাড়ার তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে আলাদা করাসহ রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। কারণ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণে আগামীতে বৈদেশিক সহায়তা কমে যাবে। তা ছাড়া ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার ঋণে সুদহার বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। তাই ঋণ নেওয়া কঠিন হবে। বাজেট সহায়তা নিলে বিভিন্ন ধরনের শর্তের বিষয় আসে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো গেলে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিজের লক্ষ্যমাত্রা থেকেই সংস্থাটি পিছিয়ে রয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। সরকারের দেওয়া সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পুরো অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে।