![টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহে ৭৬ বছরের রেকর্ড](uploads/2024/04/26/1714152508.milon vaikk.jpg)
পাঁচ দিনের ব্যবধানে আবারও চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল যশোরে রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সেটিকে ছাপিয়ে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শুক্রবার। একই সঙ্গে রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীতেও এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে। অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বাড়ায় এপ্রিলের ২৬ দিনই ছিল তাপপ্রবাহ, যা ৭৬ বছরের আবহাওয়ার তথ্যে নতুন রেকর্ড। অপরদিকে হিট স্ট্রোকে শুক্রবারও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা গেছে গবাদিপশুও।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) তিনটি জেলার (চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী ও পাবনা) ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। টাঙ্গাইল, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় তীব্র তাপপ্রবাহ। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের তুলনায় সামান্য কমেছে। গতকাল ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এপ্রিল মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতিদিনই দেশের বেশির ভাগ আবহাওয়া স্টেশনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির বেশি হলে তাপপ্রবাহ ঘোষণা করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত বছর লাগাতার (২০২৩) ১৫ দিন ও ২০২০ সালে ১৩ দিন তাপপ্রবাহ থাকার তথ্য রয়েছে। অপরদিকে ১৯৪৮ সালের আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, এ সময়ের মধ্যে টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহের রেকর্ড নেই।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আগামী তিন দিন সিলেট বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
তাপমাত্রা বাড়ায় জনজীবনে অস্বস্তি
পাবনার ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪২.৪) রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও গরম বাতাসে মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না অনেকেই। অধিক তাপমাত্রার এ বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা অনেক চিন্তিত। তারা জানান, তেল ও ডাল চাষে বিপর্যয় হতে পারে। বিশেষ করে পাট, তিল, বাদামের ফলনে ক্ষতি হতে পারে। একই অবস্থা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহী জেলায়।
লালমনিরহাটে অটোচালক, কুমিল্লায় কৃষকের মৃত্যু
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় হিট স্ট্রোকে রাশেদুল ইসলাম (৫৪) নামে এক অটোচালকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের চামটার হাট বাজারে তার মৃত্যু হয়। রাশেদুল দীর্ঘদিন থেকে সংবাদপত্র বিক্রি করতেন। তবে সংসার চালানো কষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। স্থানীয়রা জানান, গতকাল সকালে অটোরিকশা নিয়ে ভোটমারী গোলাম মুর্তজা ক্লিনিকের মাইকিং করতে করতে চামটার হাটবাজারে যান রাশেদুল। সেখানে একটি হোটেলে খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানেই তিনি মারা যান। ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভেকেট মশিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান।
অপরদিকে কুমিল্লার দেবীদ্বারে হিট স্ট্রোকে জালাল উদ্দিন (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সকালে জমিতে ধান কাটার জন্য যান তিনি। গরমে শরীর খারাপ লাগলে বাড়িতে আসেন এবং পরে সেখানে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বড় শালঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী জেসমিন আক্তার জানান, হিট স্ট্রোকে কৃষক জালাল উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।
সাভারে গরুর মৃত্যু
সাভারে এক মাংস ব্যবসায়ীর কিনে আনা ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় গরু হিট স্ট্রোকে মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সাভার পৌরসভার ছায়াবীথি মহল্লার আমতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। মাংস ব্যবসায়ী মো. ইসহাক মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া এলাকার একটি হাট থেকে ৭২ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি কিনে সাভারে নিয়ে আসি। পরে গরুটি টিনশেডের একটি ঘরে রাখা হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ না থাকায় ভ্যাপসা গরমে হিট স্ট্রোকে গরুটি মারা যায়। প্রতি শুক্রবার আমার দোকানে একটি করে গরু জবাই করা হয়। শুক্রবার ৫০ কেজি মাংসের অর্ডার ছিল। যে কারণে বৃহস্পতিবার সকালে গরুটি কেনা হয়।
তিনি আরও জানান, পিকআপ ভাড়া, গরুর দাম, নিজেদের পারিশ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। বর্তমান মাংসের বাজারের যে অবস্থা, তাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আমার মতো ছোট ব্যবসায়ীর কমপক্ষে ২-৩ মাস সময় লাগবে।