বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিসহ বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। আগামীকাল রবিবার (২৬ মে) সন্ধ্যার দিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়রূপে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নৌপথ উত্তাল হওয়ায় যাত্রীসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার রাত ১০টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈমিত্তিক ছুটি বাতিল, কর্মস্থলে উপস্থিত, সব চিকিৎসাকেন্দ্রে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা, জরুরি চিকিৎসার প্রস্তুতি রাখাসহ ১১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অপরদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ছয় জেলাকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বরগুনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ। সম্ভাব্য ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উপকূলের জেলাগুলোতে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া শুকনো খাবার, নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী মজুত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। জনগণকে সচেতন করতে কোস্টগার্ড মাইকিংসহ প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সতর্ক করছে ফায়ার স্টেশনসমূহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক খবরের কাগজকে বলেন, রবিবার সন্ধ্যা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া বা যেকোনো সাগরদ্বীপে এটি আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটার ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ১২০ বা ১৩০ কিলোমিটার উঠতে পারে। ৮৮ থেকে ১১৮-এর মধ্যে থাকলে আমরা প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলি। প্রবলে সে রকম শক্তি হয় না। জলোচ্ছ্বাস হলে সে ক্ষেত্রে যদি উপকূলীয় এলাকায় বাঁধগুলো ঠিক থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতে পারে।’
তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী দু'দিন দেশের আট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি (ক্রমিক নম্বর-০৮) অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৮.৮° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) ঘূর্ণিঝড় রেমাল-এ পরিণত হয়েছে। এটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ছয় জেলায় বিশেষ প্রস্তুতির নির্দেশনা প্রতিমন্ত্রীর
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য উপকূলবর্তী ছয় জেলাকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সব জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলাসমূহকে অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশে ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কয়েক দিন ধরে মাঠে আগাম সতর্কবার্তা প্রচারসহ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতের কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে ঘূর্ণিঝড়সহ সব দুর্যোগে তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনায় আমরা যথাসময়ে প্রস্তুতি নিয়ে মানুষের দুর্দশা লাঘব এবং জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছি। এই ঘূর্ণিঝড়টিও যাতে একই ধারাবাহিকতায় সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো এ-সংক্রান্ত আরও খবর:
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ
চট্টগ্রাম: নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহনের জন্য লাইটার জাহাজ সিরিয়াল নেয়নি। তবে বন্দরের জেটিতে কাজ চলছে। বিকেলে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করায় বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-১ জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ যাচ্ছে না। পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। রেমালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লাইটার জাহাজ বহির্নোঙরে যাবে না। নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ৭৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ কার্যক্রমে নগদ অর্থ বরাদ্দ, চাল, গো-খাদ্য, শিশুখাদ্য ও শুকনো খাবার, কম্বল এবং ওরস্যালাইন মজুত রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারে উত্তাল সাগর, প্রস্তুত ৬৩৮ আশ্রয়কেন্দ্র
কক্সবাজার: বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল রয়েছে সাগর। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উচ্চতায় প্রভাহিত হচ্ছে জোয়ারের পানি। উত্তাল সমুদ্রে গোসল করতে দেখা গেছে হাজারো পর্যটককে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সৈকত কর্মীরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। তা ছাড়া লাইফগার্ড কর্মীরাও সাগরে অবস্থান করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছি। এদিকে দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কক্সবাজার জেলায় ৬৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৭ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খোলা হয়েছে ৯টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শতাধিক মেডিকেল টিম। এছাড়া মজুদ আছে ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখের বেশি নগদ টাকা, ঢেউটিন ২৩ বান্ডিল। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঝড়ের আগেই মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পিরোজপুরে ৫৬১ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
পিরোজপুর: ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় পিরোজপুরে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, জেলায় ২৯৫ সাইক্লোন শেল্টার ও ২৬৬ স্কুল কাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৬ লাখ ১০ হাজার নগদ টাকা, ৬১১ মেট্রিক টন চাল, ৬৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে খোলা হয়েছে কন্টোল রুম।
বরগুনায় জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বরগুনা: বরগুনায় নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীতীরের বাসিন্দারা। গতকাল জেলার পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত তিন ফুট বেড়েছে বলে জানান নদীতীরের বাসিন্দারা। বরগুনা সদর উপজেলার বড়ইতলা এলাকায় গেলে দেখা যায়, পানিতে এখানকার বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এখানে আশ্রয়কেন্দ্রের স্বল্পতা রয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। জেলার ৩টি মুজিব কেল্লা, ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৪২২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, ৩৭ লাখ নগদ অর্থ প্রস্তুত, ১০টি কন্ট্রোল রুম ও ৪২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
বাগেরহাটে প্রস্তুত ৩৫৯ আশ্রয়কেন্দ্র
বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধেয়ে আসার খবরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলার দু-এক জায়গায় শুরু হয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। তবে সকাল থেকে আকাশ কখনো রোদ আবার কখনো মেঘাচ্ছন্ন হচ্ছে। নদীতে থাকা মাছ ধরার ট্রলারগুলো উপকূলের ছোট ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় বাগেরহাটে ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কা
সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সাতক্ষীরায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণকাজে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালকে ঘিরে আতঙ্কে আছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। তাদের আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে। এ জন্য জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত তারা। সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টিরও অধিক পয়েন্টের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বরিশালে ৫৪১ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় বরিশাল জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৯৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বরিশাল জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রেমালে আহত মানুষের জরুরি সেবাদানের জন্য সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ৯৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, সিপিপি, স্কাউট সদস্য ও এনজিও কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসলের ক্ষতি কম হবে। কারণ ইতোমধ্যে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ জমির ধান কর্তন করেছেন কৃষকরা। বরিশাল জেলায় ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।
ঝালকাঠিতে প্রস্তুত ৮৮৫ আশ্রয়কেন্দ্র
ঝালকাঠি: সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলায় ৮২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৩৭টি মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিসের ৮টি উদ্ধারকারী দল। এ ছাড়া নগদ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং জরুরি মুহূর্তে বিতরণের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন চাল মজুত আছে। পাশাপাশি শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ৪২৪ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ৬টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
পটুয়াখালীতে ৭০৩ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত
পটুয়াখালী: পটুয়াখালী জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৩৫টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া ৭৩০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য, ১০ লাখ টাকার গো-খাদ্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার রয়েছে ১ হাজার ৫০০ প্যাকেট। নগদ রয়েছে ২৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। জেলায় ৮ হাজার ৭৬০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন। ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রয়েছে।