![নগদ প্রণোদনা ২০২৯ সাল পর্যন্ত রাখার দাবি](uploads/2024/06/09/posak-1717911161.jpg)
দেশের পোশাকশিল্প খাতের নেতারা চলমান সব ইনসেনটিভ আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিকল্প ইনসেনটিভ প্রবর্তন না করা পর্যন্ত চলমান ইনসেনটিভগুলো না কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এ খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আরও সহায়তার দাবি জানানো হয়েছে। এতে উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে শনিবার (৮ জুন) উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘এবারের বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে একাধিকবার মূল্যস্ফীতিকে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির জন্য কিছু নীতি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাকশিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে প্রত্যাশা ছিল। পাশাপাশি আরও প্রত্যাশা ছিল, বাজেটে ইনসেনটিভের ওপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, এইচএস কোড ও ওজনসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউর ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত, পোশাকশিল্পের ঝুটের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট ও রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি ছিল। এসব বিষয়ে বাজেটে কোনো ঘোষণা নেই। এটি এ খাতের ব্যবসায়ীদের হতাশ করেছে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘বিটিএমএ প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের সংগঠন। আমরা তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাণিজ্য সুসংহত করা, পণ্যের বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন বাজার তৈরি ও একই সঙ্গে টেক্সটাইল ও ক্লোদিং খাতের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছি। বিটিএমএর সদস্য স্পিনিং, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিলগুলোও দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড় সরবরাহের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা টেক্সটাইল ও ক্লোদিং খাতের তিনটি অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের নিয়ে একসঙ্গে বসেছি। সামনে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হলে টেক্সটাইল ও ক্লোদিং খাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে তৈরি পোশাকশিল্পের ঝুট বা বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট ও তা থেকে উৎপাদিত ফাইবার সরবরাহের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ম্যান মেইড ফাইবারের ওপর ধার্য করা ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার, ফ্লাক্স ফাইবারের ওপর থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর থেকে অব্যাহতি, আগের মতো চিলার মেশিনকে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে গণ্য করে ১ শতাংশ হারে আমদানির সুবিধা দেওয়া, টেক্সটাইল শিল্প-কারখানায় স্থাপিত ইটিপিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ শূন্য শুল্ক হারে আমদানির সুবিধা দেওয়া এবং আমদানি করা পণ্যের এইচএস কোড ভুল হলে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানা করার বিধান প্রত্যাহার করতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, কঠিন বাস্তবতায় নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবার সংকোচনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা করা হয়েছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাজেটের ইতিবাচক দিক।
এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিকে একাধিকবার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এই প্রধান খাতটির জন্য কিছু নীতি সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। তবে বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের জন্য সহায়ক প্রস্তাবনাগুলোকে আমরা সাধুবাদ জানাই, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভ্যাট আপিলের ক্ষেত্রে দাবীকৃত অর্থের ২০ শতাংশ জমা দিতে হতো। সেটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ১৭টি টেক্সটাইল পণ্যে রেয়াতি হারে আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শিল্প-কারখানায় ৫০ টন বা অধিক ক্ষমতার চিলার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বমোট কর ১০৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে এটি ১ শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির বিধান ছিল। আমরা আবার এটি ১ শতাংশ রেয়াতি হারে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘কোভিড মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভূ-রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট বিশ্বমন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। একই সঙ্গে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ফলে শিল্প একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আমাদের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের পণ্যমূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্প যখন এ রকম একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল সিংহভাগ রপ্তানি আয় অর্জনকারী পোশাকশিল্পকে সহায়তা দেওয়া এবং এর মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।’
লিখিত বক্তব্যে বিজিএমই সভাপতি বলেন, ‘তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এক্সিট পলিসি প্রবর্তন করা। কারণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং নিকট ভবিষ্যতে আরও অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে সচল কারখানার সংখ্যা ৫ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০-তে নেমে এসেছে। কোভিডকালে অনেক ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করেনি। অনেক অসাধু ক্রেতা পণ্য নিয়ে দাম দেয় না। অথচ সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো যে কাঁচামাল আমদানি করে, হোক সেটি ত্রুটিপূর্ণ, তার জন্যও মূল্য পরিশোধ করতে হয়। কারখানার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংক টাকা কেটে নেয়। এতে অনেক কারখানা পথে বসেছে। এ জন্য আমরা একটি এক্সিট পলিসি প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছি। পাশাপাশি কারখানাগুলোর সুরক্ষার জন্য এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রবর্তন করার দাবিও পুনরায় ব্যক্ত করছি।