![কালোটাকা সাদা করতে অন্তত ৫০ শতাংশ কর ধার্য করুন: জি এম কাদের](uploads/2024/06/30/G-M-Kader-1719727259.jpg)
মাত্র ১৫ শতাংশ বাড়তি কর পরিশোধে কালোটাকা সাদা করার সুযোগের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের। তিনি মনে করেন, এর প্রভাবে অর্থনীতিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
সংসদে তিনি বলেন, একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের জন্য এ ধরনের সুযোগ যদি রাখতেই হয়, সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কর ধার্য করার বিধান রাখা যেতে পারে। ঢালাওভাবে এ ধরনের অবৈধ কাজকে দায়মুক্তি দিয়ে আইনসিদ্ধ আগে কখনো করা হয়নি বলেও বিরোধী নেতা মন্তব্য করেন। গতকাল শনিবার সংসদের অধিবেশনে বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিদিন নিম্নগামী হচ্ছে মন্তব্য করে তা রোধ করাকে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমাণ। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি এখনো প্রতিদিন নিম্নগামী। উত্তরণ তো দূরের কথা, অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিরাজমান অস্থিরতার বেশ কিছু কারণও সংসদে তুলে ধরেন জি এম কাদের। তার মধ্যে রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকঋণের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা ইত্যাদি।
সংসদে বিরোধী দলের নেতা বলেন, চলতি বছর এপ্রিল শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১২.৮০ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে ২ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। অথচ কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। বর্তমানে আমদানি ব্যয় যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করার পরও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আমদানি ব্যয় একটা পর্যায়ের নিচে কখনোই নামানো সম্ভব হবে না। যেহেতু দেশে আমদানি চাহিদার একটি নিম্নতম স্তর আছে। তা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়, টাকার অবমূল্যায়ন হয় এবং মূল্যস্ফীতি হয়। আমদানি ব্যয় সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা না গেলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশৃঙ্খল আবস্থা দেখা দেবে।
ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন ছাড়া ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সংকটময় বলা যায়। সারা বিশ্বে কম-বেশি অর্থনৈতিক মন্দা রয়েছে, যা থেকে প্রায় দেশই উত্তরণের পথে। কিন্তু আমাদের ক্রমাবনতি চলমান।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোনো দিকনির্দেশনা বা উদ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ করা যায় না। সব কটি না হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে চিহ্নিত সমস্যাগুলো এবং দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোনো দিকনির্দেশনা বা উদ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ্য করা যায় না।’
জি এম কাদের বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ (১০.৮৩ বিলিয়ন ডলার) কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘাড়ে এটি এক বড় বোঝা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এটা বাধা সৃষ্টি করবে। ব্যাংক খাতের চলমান খারাপ অবস্থার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি খেলাপি ঋণকে দায়ী করেন।