সরকার দমন-পীড়ন করে মানবাধিকার চরম লঙ্ঘন ঘটিয়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। অভিযোগ করে তারা বলেন, সরকার চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে এখন আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত হয়ে উঠেছে। খেয়াল-খুশি মতো হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম-খুন, গ্রেপ্তার , অত্যাচার-উৎপীড়ন এবং ফরমায়েসী সাজার মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক তৎপরতাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে। ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতেই এসব করে চলছে সরকার।
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন নেতারা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশ থেকে আগামী ১২ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে জোটটি।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে এখন মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার নেই। বড় বড় প্রকল্প নিয়ে বেশি টাকা খরচ করে লুটপাটের উৎসব করছে সরকার। সরকারের কারও আয় বেড়েছে ৫০ গুণ। সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি, তাদের জন্য বাড়ানো হয়েছে পেঁয়াজের দাম। উন্নয়নের নাম করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোট হবে না। ওই দিন দেখা যাবে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। অপেক্ষা করেন সব ঋণ শোধ করতে হবে। যত টাকা লুট করেছেন, তা পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে। অপেক্ষা করেন, ঐকমত্য থাকেন। লড়াই চলবে।
সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনে ও গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এ দেশের মানুষকে অত্যাচার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছে। বিরোধী দল করার কারণে বাবাকে না পেয়ে মাকে ধরে নিয়ে গেছে, শিশুসন্তান রাস্তায় বসে কাঁদছে। বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে দুনিয়ার দরবারে গুম-খুনের দেশ হিসেবে পরিচিত করছে এ সরকার। এ সরকারকে হটিয়ে সমতার ও মর্যাদার দেশে পরিণত করতে চাই। ন্যূনতম দায়বোধ আছে, এমন মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না বলে মন্তব্য করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ সরকার মানবাধিকার হরণকারী সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত। প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মতো বন্ধুরা বন্ধুরা মিলে তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করছে। পোলাও বরাদ্দের মতো আসন ভাগ-বাঁটোয়ারা করছে।
জোট নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশে যে একটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আছে সেটাই এখন বোঝা যায় না। এই কমিশন দেশের মানুষের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কোনো উদাহরণ আর রাখছে না। এবং তাদের ন্যূনতম দায়িত্বও পালন না করে সরকারের তাবেদারি করে চলেছে। এইভাবে তারা বাংলাদেশকে এবং দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক পরিসরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে স্যাংশনের মুখোমুখি করছে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ও কূটনৈতিক দিক থেকে ভয়ঙ্কর ও বিপদজনক খাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমম্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।