![মোংলায় আ.লীগের বিরুদ্ধে আ.লীগ, তিন ভাগে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা](uploads/2024/05/25/2.-Bhat-1716607319.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মোংলায় আওয়ামী লীগে কোন্দলের সৃষ্ট হয়। এ কোন্দল শেষ না হতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ। এতে করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাধারণ কর্মীরা যেমন বিভ্রান্তিতে পড়ছেন, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বাড়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। তারা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন তিন ভাগে। পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচনি প্রচার, জনসংযোগ, মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকে তুমুল ব্যস্ত প্রার্থীরা। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদেরই নেতা-কর্মীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তিনজনই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় বিভেদ চরম আকার ধারণ করছে।
নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ক্ষমতাসীন দলের তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। আর তাদের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে এ উপজেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব এখনো চলমান। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা বর্তমান উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন।
সব মিলিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তৃণমূলের এই বিভেদ থেকে বিরোধী দলগুলো ফায়দা নেবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (দোয়াত-কলম প্রতীক) ইব্রাহীম হোসেনের পক্ষে সরাসরি প্রচার চালাচ্ছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র শেখ আ. রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইস্রাফিল হাওলাদারসহ অন্য নেতারা। এ ছাড়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (আনারস প্রতীক) ইকবাল হোসেনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী ইজারাদার, পৌর যুবলীগের সভাপতি ও পৌর প্যানেল মেয়র কবির হোসেন, সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার, পৌর আটজন কাউন্সিলরসহ অনেকে।
তবে বর্তমান চেয়ারম্যান (চিংড়ি প্রতীক) আবু তাহের হাওলাদারের নির্বাচনি প্রচারে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কাউকে দেখা না গেলেও অনেক নেতা-কর্মী তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের এক কর্মী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তিনজনই হ্যাভিওয়েট প্রার্থী। স্বাভাবিকভাবে একজনের পক্ষে গেলে আরেকজন ক্ষুব্ধ হবেন। এমন অবস্থায় আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। আমরা তৃণমূলের রাজনীতি করি পদ-পদবির আশায়। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ নিলে আস্থাভাজন না হওয়ার অপরাধে ভবিষ্যতে পদ না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এক্ষেত্রে নেতা-কর্মীদের মাঝেও বিভেদ তৈরি হয়েছে।’
এ বিষয়ে মোংলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র শেখ আ. রহমান বলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়নি। অন্য দল নির্বাচনে না থাকায় আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার ও প্রচারণায় কাজ করছেন। এতে তাদের মধ্যে এক ধরনের বিভেদ তৈরি হয়েছে, যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় কিছুটা বিরোধ তৈরি হয়েছে সত্যি। তবে নির্বাচনের পর তা আর থাকবে না বলে আশা করি।’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, ‘এটি দলীয় নির্বাচন নয়, তাই দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। নির্বাচনি আচরণবিধিতে সংসদ সদস্যদের কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমিও কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিইনি। জনগণ যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই নির্বাচিত করবে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্রনিং কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে মোংলা উপজেলায় ব্যালটে ভোট হতে যাচ্ছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যদি কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা প্রতিহত করবে।