![বিরোধী জোট ও দলের বাজেট প্রতিক্রিয়া](uploads/2024/06/06/Budget-2024-24-1717693505.jpg)
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব দলের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এই বাজেটকে কল্পনা-বিলাসী, অবাস্তব এবং বাস্তবায়ন অযোগ্য হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এই বাজেট কল্যাণ বয়ে আনবে না: জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশাল আকারের কল্পনা-বিলাসী যে অবাস্তব বাজেট পেশ করা হয়েছে, তাতে দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা, মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিক খাতে দুর্নীতি রোধকল্পে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
নতুন বাজেট বার্ষিক লুটপাটের বরাদ্দপত্র: চরমোনাই পীর
বৈধতাবিহীন সরকারের বাজেটও বৈধ নয়। তাদের বাজেট বার্ষিক লুটপাটের বরাদ্দপত্র। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল করীম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঋণনির্ভর বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ সুদ প্রদানেই চলে যাবে। অর্থাৎ এ বছর আগের ১২ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে, যা মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। চরমোনাই পীর বলেন, নতুন বাজেট জনগণের ওপর নতুন করে দ্রব্যমূল্যের খড়গ চাপিয়ে দেবে।
গরিবের পকেট কাটার বাজেট: ১২-দলীয় জোট
বাজেটকে জনকল্যাণহীন ও গরিবের পকেট কাটার বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন ১২-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, জনরায়হীন একটি অবৈধ সরকারের বাজেট কখনোই জনগণের কল্যাণে আসতে পারে না। ঋণ ও ঘাটতির এত বড় বাজেট আগেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবারও সম্ভব হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কার ও দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পের ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগ এ সরকার গ্রহণ করেনি। বাজেট প্রত্যাখ্যান করে জোট নেতারা বলেন, বেনজীর ও আজিজের মতো মহাদুর্নীতিবাজ তৈরিতে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই অবৈধ সরকার কালোটাকা সাদা করার বিধান রেখেছে।
দুর্নীতির দায় নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপাবে: সিপিবি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ঘোষিত বাজেট ধনিক শ্রেণির দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় মেহনতি ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপাবে। নানাভাবে কর ও মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটার পথ আরও প্রশস্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেবে না। তারা বলেন, এ বাজেট আয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে সাধারণ জনগণের ওপর। কিন্তু জনগণের জন্য বাজেটে কল্যাণমূলক ব্যয় আরও হ্রাস করেছে।
জনগণকে ঋণের মহাসাগরে ডোবাবে: গণফোরাম
প্রস্তাবিত বাজেট জনগণকে ঋণের মহাসাগরে ডোবাবে উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বাস্তবতা-বিবর্জিত লোপাটের বাজেট লুটপাটের জন্য প্রস্তাবিত হয়েছে। জনগণের জন্য এই বাজেট ভয়ংকর ফাঁদ। বিদেশি ঋণনির্ভর এই বাজেটে জনগণ শুধু ভোগান্তিতে পড়বে। পক্ষান্তরে ঋণখেলাপি ও পাচারকারীরা চুরির বিজয়োল্লাস করবে।
বাজেট লুটেরা সরকারের প্রতিচ্ছবি: মান্না
বাজেটকে লুটেরা সরকারের প্রতিচ্ছবি বলে বর্ণনা করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে। বাজেট ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। বরং এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দ্রব্যমূল্য কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে: এবি পার্টি
প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। মিছিল শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, রাজনৈতিক বৈধতাবিহীন সরকারের বাজেট কখনোই জনকল্যাণকর হতে পারে না। এই বাজেট ট্যাক্স ও ঋণ বাড়ানোর বাজেট। এই বাজেটকে জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বাজেট: খেলাফত মজলিস
প্রস্তাবিত বাজেটকে ঋণনির্ভর ও অবাস্তব অখ্যায়িত করেছে খেলাফত মজলিস। দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বাজেট। এ বাজেট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কোনো ভূমিকা রাখবে না। বরং নতুন করে বহু জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের পকেট কাটার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর বাজেটে প্রদত্ত কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেশে ঘুষ-দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে।
জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হবে: লেবার পার্টি
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বাজেটের নামে গরিবের সম্পদ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে লুটেপুটে খাচ্ছে সরকার। ঘোষিত বাজেটে গরিব, বেকার, কর্মহীন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য কোনো সুখবর নেই। এতে ধনী-গরিবের শ্রেণিবৈষম্য আরও বাড়বে। বাজেটের পর দ্রব্যমূল্য দফায় দফায় আরও বাড়বে এবং জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।