![যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন](uploads/2024/04/04/1712221674.25.jpg)
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা মুজাদালা, সুরা হাশর, সুরা মুমতাহিনা, সুরা সাফ, সুরা জুমুআ, সুরা মুনাফিকুন, সুরা তাগাবুন, সুরা তালাক ও সুরা তাহরিম তেলাওয়াত করা হবে। পারা হিসেবে ২৮তম পারা পড়া হবে। এই অংশে তালাক, পারিবারিক ও বৈবাহিক জীবন, স্ত্রীর ভরণপোষণ, বৈঠকের আদব, আনসারদের সুসংবাদ, কাফেরদের সঙ্গে মুসলমানদের আচরণনীতি, নবিজির গুণাগুণ, আজান হলেই জুমার নামাজে যাওয়া, দুনিয়াতে নারীর জান্নাতের সুসংবাদ, মানুষের বিভক্তি ও আল্লাহর পথে ব্যয়সহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে।
মায়ের সঙ্গে স্ত্রীকে তুলনার বিধান
নিজ স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে হারাম নারীর হারাম অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘জিহার’ বলে। যেমন- স্ত্রীকে এ কথা বলা, তুমি কিংবা তোমার ওই অঙ্গ আমার মা-বোনের মতো ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এমন ঘটনা ঘটেছিল। সাহাবি আওস ইবনে সামেত (রা.) স্ত্রীকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার স্ত্রী খাওলা (রা.)-এর আর্তনাদকে কেন্দ্র করে শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান দিয়ে সুরা মুজাদালার শুরুর আয়াতগুলো নাজিল হয়। আওস খাওলাকে বললেন, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো’, অর্থাৎ, ‘তোমাকে আমার জন্য আমার মায়ের মতো হারাম করলাম।’ ইসলামপূর্ব যুগে এই বাক্যটি স্ত্রীকে চিরতরে হারাম করে দেওয়ার জন্য বলা হতো। খাওলা পেরেশান হয়ে রাসুলের দরবারে এসে সমাধান পেলেন না। ইসলামে তখনো এ সম্পর্কে বিধান নাজিল হয়নি। তিনি নবিজির সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করে দিলেন। পরে খাওলা কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন। তখন আল্লাহ এর সমাধান দিয়ে সুরা মুজাদালার ১ থেকে ৫ নম্বর আয়াত নাজিল করেন। সেখানে বলা হয়, স্ত্রী-স্বামীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকবে না যতক্ষণ না স্বামী ‘কাফ্ফারা’ আদায় করে। আর জিহারের কাফ্ফারা হলো ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠে যে সওয়াব
কোরআনের ৫৯তম সুরা হাশর মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ২৪। এ সুরায় আল্লাহর প্রশংসা, অপরাধের কারণে বনু নজিরকে মদিনা থেকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গ, বিনাযুদ্ধে অর্জিত সম্পদের বণ্টননীতি, আনসারদের সুসংবাদ, মুনাফিকদের নিন্দা ও তাকওয়ার বিবরণ রয়েছে। সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে সকালে তিনবার ‘আউজুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। এ সময়ে সে মারা গেলে শহিদের মৃত্যু লাভ করবে। যে এটি সন্ধ্যায় পড়বে, তা হলে তার একই মর্যাদা রয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৯০)
সুরা মুমতাহিনায় যে বিষয়ের আলোচনা
কোরআনের ৬০তম সুরা মুমতাহিনা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ, এর আয়াত সংখ্যা ১৩। এ সুরায় কাফেরদের সঙ্গে মুসলমানদের আচরণনীতি, কিয়ামতের দিন কেউ কারও উপকারে না আসা, ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শ, বিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার, ঈমানদার নারী কাফেরের জন্য হারাম এবং মুসলমান পুরুষের জন্য কাফের নারী হারাম হওয়ার বিবরণ রয়েছে।
সুরা সফের বিষয়বস্তু
কোরআনের ৬১তম সুরা সফ। এটি মদিনায় অবতীর্ণ, এর আয়াত সংখ্যা ১৪। এ সুরায় আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা, অঙ্গীকারের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়ার জন্য মুসলমানদের প্রতি কঠোর সতর্কতা, তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা, বনি ইসরাইল, জিহাদ, নবিজির ব্যাপারে ইসা (আ.)-এর সুসংবাদ, জানমাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম, আল্লাহর সাহায্য, মুমিনদের গুনাহ মাফ ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।
জুমার নামাজের গুরুত্ব
সুরা জুমার ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনেরা, জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে শিগগির ধাবিত হও, ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’ জুমা মুসলমানদের সমাবেশের দিন। সপ্তাহের সেরা দিন। আমলের দিন। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে জামাতে পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আজানের সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ ফেলে মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ না দিলেও জুমার নামাজের ব্যাপারে দিয়েছেন।
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে আল্লাহ এবং শয়তানের দল, কৃপণতা, কানাঘুষা, আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর দীনের সাহায্যকারী, ইহুদি সম্প্রদায়, রিসালাতের উদ্দেশ্য, কাফেরদের পরিণতি, ইবাদতের জন্য মুমিনের আফসোস ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক