![ঋণের কিছু অংশ ক্ষমা করলে যে সওয়াব হয়](uploads/2024/05/15/loan-1715748334.jpg)
ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ মূলত একটি আমানত। আর এ আমানত রক্ষায় পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আমানত তার প্রাপককে দিয়ে দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮)
ঋণ মানুষের সবচেয়ে বড় বোঝা। এ বোঝা শুধু দুনিয়াতেই নয়; আখেরাতেও টানতে হবে। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, “একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।’ তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তবে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে?’ তখন তিনি তাকে বললেন, ‘হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল হও, প্রতিদান লাভের আশায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও।’ তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী বললে?’ তখন সে (আবার) বলল, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তাহলে আমার সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে?’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী হও, প্রতিদানের আশায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও; তবে ঋণের কথা আলাদা। কারণ, জিবরাইল (আ.) আমাকে এ কথা বলেছেন।” (মুসলিম, হাদিস: ১৮৮৫)
ঋণগ্রস্ত হওয়া ভালো নয়। তবে ঋণগ্রস্ত হলে দ্রুতই তা পরিশোধ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগে যাবতীয় ঋণ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দরিদ্র হওয়ার কারণে অনেক সময় ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়া উত্তম কাজ, সওয়াবের কাজ। সুন্নাহও বটে। যেন ঋণ পরিশোধ করা তার জন্য সহজ হয়। কাব (রা.) মসজিদের ভেতরে ইবনে আবি হাদরাদ (রা.)-এর কাছে তার পাওনা ঋণের তাগাদা দিলেন। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চবাচ্য হলো। এমনকি তাদের কথার আওয়াজ শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘর থেকে পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে এলেন। এরপর ডাক দিলেন, ‘হে কাব।’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার পাওনা ঋণ থেকে এতটুকু ছেড়ে দাও।’ হাতে ইশারা করে বোঝালেন। অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কাব (রা.) বললেন, ‘আমি ছেড়ে দিলাম হে আল্লাহর রাসুল।’ তখন তিনি ইবনে আবি হাদরা (রা.)কে বললেন, ‘যাও এবার বাকিটা পরিশোধ করে দাও।” (বুখারি, হাদিস: ৪৫৫)
এ কাজটি অনেকের কাছে একটু কষ্টকর মনে হবে। কারণ, তা করতে গেলে ঋণদাতার অধিকার লাঘব হয়। কিন্তু ঋণগ্রহিতা যদি বাস্তবেই ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখনই এই সুন্নাহ অবলম্বন করা উচিত।
আজকাল অনেক ব্যাংকও ঋণগ্রস্তদের কিছু ঋণ মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) পনেরো শ বছর আগে এ কাজটি করেছেন। শুধু তাই নয়, ঋণের সামান্য অংশ মাফ করছে না দেখে অনেক ঋণদাতার ওপর তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দরজার কাছে বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন; দুজনই উঁচু আওয়াজে কথা বলছিল। একজন আরেকজনের কাছে ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার, সহানুভূতি দেখানোর (কিছু সময় দেওয়ার) অনুরোধ করছিল। আর অপর ব্যক্তি বলছিল, ‘না, আল্লাহর শপথ। আমি তা করব না।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে তাদের কাছে এসে বললেন, ‘সৎ কাজ করবে না বলে যে আল্লাহর নামে শপথ করেছে সে ব্যক্তিটি কোথায়?’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি।’ সে যা ভালো মনে করে তার জন্য তাই হবে।” (বুখারি, হাদিস: ২৫৫৮) অর্থাৎ সেই সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুপারিশ মেনে নিয়ে ঋণগ্রস্তের চাহিদা অনুযায়ী কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার মাধ্যমে সওয়াব পাওয়া যায়। নবিজি (সা.)-এর সুন্নতের ওপর আমল হয়।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক