ঢাকা ৫ ভাদ্র ১৪৩১, মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

পরকীয়ার শাস্তি ভয়াবহ

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম
পরকীয়ার শাস্তি ভয়াবহ
প্রতীকী ছবি

পরকীয়া হলো বিবাহিত কোনো নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া। ইসলামে পরকীয়া হারাম। শরিয়তে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। 


ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। পবিত্র ধর্ম। নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে প্রয়োজন ছাড়া গায়রে মাহরাম নারী-পুরুষের কথা বলাই নিষেধ; দেখা করা তো হারাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্যে উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আবরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে...।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১)


যেখানে দৃষ্টি সংযত রাখতে আদেশ করা হয়েছে, সেখানে কথা বলা তো আরও জঘন্য অপরাধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান, তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেয়ো না। এক আনসার সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম, ২৪৪৫)।

সর্বোপরি, ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়ের চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩২) 


ব্যভিচারকারীদের শাস্তি হিসেবে অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারকারী নারী ও পুরুষ উভয়কে ১০০টি করে বেত্রাঘাত করো।’ (সুরা নুর, আয়াত: ২)। এটা অবিবাহিত জিনাকারীর শাস্তি। আর পরকীয়া কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে বিবাহিত নারী-পুরুষ যদি জিনায় লিপ্ত হয়, তাদের জন্য ইসলামে আরও ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। 


এ শাস্তির বিধান কার্যকর করার জন্য রাষ্ট্রীয় আদালতে শতভাগ ইসলামি আইন-কানুন থাকা আবশ্যক। ইমরান ইবনুল হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক নারী নবির (সা.) কাছে এসে জিনার স্বীকারোক্তি করল। তিনি তার দেহে তার পরিধেয় বস্ত্র শক্ত করে পেঁচিয়ে তাকে রজম (পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা) করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাজার নামাজ পড়লেন।’ (ইবনে মাজাহ, ২৫৫৫) 

 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

স্বপ্নে জুমার নামাজ দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম
আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০২:০২ পিএম
স্বপ্নে জুমার নামাজ দেখলে কী হয়?
জুমার নামাজের আগে জুমার খুতবা শুনছেন মুসল্লিরা। ছবি: ইন্টারনেট

জুমার দিন নামাজ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা কল্যাণকর সফর করবে, যাতে সে রিজিক লাভ করবে এবং সুনাম অর্জন করবে। জুমার নামাজ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টার বিচ্ছিন্ন কাজগুলো সুরাহা হবে। জটিলতার পর সফলতা লাভ করবে। কেউ তার ব্যাখ্যায় বলেন, হয়তো সে কোনো কাজকে ভালো মনে করবে, কিন্তু আসলে সেটা তার জন্য কল্যাণকর হবে না।

নামাজ পূর্ণ করে নামাজ থেকে বের হতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লাহর নেয়ামত ও প্রশস্ত রিজিক লাভ করবে। যদি দেখে যে, লোকেরা জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ছে, আর সে একা একা তার ঘরে বা দোকানে বা গ্রামে পড়ছে আর রুকু, সেজদা, সালাম, তাকবির, তাশাহহুদ ইত্যাদি শুনছে এবং মনে মনে ধারণা করছে যে, মুসল্লিরা নামাজ শেষে ফিরে গেছে, আর সে যদি ওই শহরের প্রশাসক হয়, তা হলে তাকে বরখাস্ত করা হবে। স্বপ্নে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে ও তার হেফাজত করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা সম্মান লাভ করবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যারা তাদের নামাজের হেফাজতকারী।’ (সুরা মায়ারিজ, আয়াত: ৩৪) 

কেউ যদি স্বপ্নে দেখে নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেছে, তা হলে সে কল্যাণ ও রিজিকপ্রাপ্ত হবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন নামাজ শেষ হবে, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ সন্ধান কর। এবং বেশি বেশি আল্লাহর জিকির কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০) 

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত) 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কেন পড়তে হয়?

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৫ এএম
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কেন পড়তে হয়?
আরবিতে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ লেখা ছবি। ইন্টারনেট
‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’—এর অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই; কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই।’ ইসলামে বাক্যটি অনেক মূল্যবান ও ফজিলতপূর্ণ। আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আমাকে বললেন, ‘তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা কি বলে দেব?’ আমি বললাম, অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি বললেন, ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (বুখারি, হাদিস: ২৯৯২; মুসলিম, হাদিস: ২৭০৪)
 
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কখন পড়তে হয়?
যখন মানুষ নিজের সক্ষমতার বাইরে কোনো পরিস্থিতি ও কাজের মুখোমুখি হয়, যা সম্পাদন করা তার ওপর কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে তখন এই ব্যাকটি পড়তে হয়। এ ছাড়াও শয়তানের কোনো প্রতারণা ও আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এই দোয়াটি পড়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে আল্লাহতায়ালার কাছে নিজের গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথবা যেকোনো দোয়া করবে, আল্লাহতায়ালা তার দোয়া কবুল করবেন। দোয়াটি হলো—
 
আরবি—
 
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ 
 
বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লু শাইয়িন কাদির। আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। (বুখারি, হাদিস: ১০৮৯)
 
আবু জর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে একবার বললেন, ‘আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনগুলোর একটির সন্ধান দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল। তিনি বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।
 
মুয়াজ্জিন আজানের সময় যখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলে তখন ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ‘ বলতে হয়। (মুসলিম, হাদিস: ৫৭৮)
 
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘যে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়াটি পড়বে আল্লাহতায়ালা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন এবং শয়তানও তার থেকে দূর হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো—
 
আরবি—
 
بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
 
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৪৩১)
 
লেখক: আলেম ও অনুবাদক

স্বপ্নে দোয়া, জিকির ও ইসতেগফার পড়তে দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৫ এএম
স্বপ্নে দোয়া, জিকির ও ইসতেগফার পড়তে দেখলে  কী হয়?
তাসবিহের ছবি। ফ্রিপিক

স্বপ্নে কোনো নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা ফরজ নামাজ আদায় করবে। যদি এমন কোনো দোয়া পড়ে, যাতে আল্লাহতায়ালার নাম না থাকে, তা হলে সে লৌকিকতাপূর্ণ নামাজ পড়বে। যদি দেখে শুধু নিজের জন্যই দোয়া করছে, তা হলে সে পুত্রসন্তান লাভ করবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন সে তার প্রতিপালককে ডাকল মৃদুস্বরে বা নির্জনে।’ (সুরা মরিয়াম, আয়াত: ৩) 

অন্ধকারে আল্লাহতায়ালাকে ডাকতে দেখলে সে দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি পাবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং সে (ইউনুস আ.) অন্ধকারে থেকে তার প্রতিপালককে ডাকল।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭) 

স্বপ্নে শ্রেষ্ঠ দোয়া পড়তে দেখা, শ্রেষ্ঠ দ্বীন ধর্মের প্রতীক। দোয়া কুনুত পড়তে দেখা আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের লক্ষণ। অধিক হারে আল্লাহর জিকির করতে দেখা আল্লাহতায়ালার সাহায্যপ্রাপ্তির ইঙ্গিত। আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অধিক হারে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ২২৭) 

আল্লাহতায়ালার কাছে ইসতেগফার করতে দেখলে হালাল জীবিকা এবং পুত্রসন্তান লভ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০) 

নামাজ শেষ করে আল্লাহতায়ালার কাছে ইসতেগফার করতে এবং তার চেহারা কেবলার দিকে থাকতে দেখলে, তার দোয়া কবুল করা হবে। পক্ষান্তরে চেহারা কেবলার দিক ছাড়া অন্যদিকে থাকতে দেখলে, সে কোনো পাপ করবে এবং সেই পাপের কারণেই মৃত্যুবরণ করবে। ইসতেগফার হতে বিরত থাকতে দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টার মুনাফিকির আলামত। 

যদি কোনো নারীকে স্বপ্নে বলা হতে দেখে, তুমি তোমার গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তা হলে তাকে কোনো গুনাহ বা অশালীন কাজের জন্য অপবাদ দেওয়া হবে। এর প্রমাণ হলো, জুলাইখার ঘটনা।

স্বপ্নে সুবহানাল্লাহ বলতে দেখলে, তার দুশ্চিন্তা এমনভাবে দূর হবে যে, সে কল্পনাও করতে পারবে না। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা দুশ্চিন্তামুক্ত হবে, যাতে সে লিপ্ত আছে। একপর্যায়ে শাহাদাতের অমীয় সুধায় সিক্ত হবে।

স্বপ্নে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে দেখলে, মনের কামনা-বাসনা পূরণ হবে। শত্রুদের ওপর বিজয় লাভ হবে। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা আলো লাভ করবে এবং দীনের আলোকবর্তিকা লাভ করবে। আল্লাহর শোকর আদায় করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা অধিক নিয়ামত ও শক্তি লাভ করবে। স্বপ্নদ্রষ্টা যদি কোনো প্রশাসক হয়, তা হলে সে কোনো আবাদী ও সচ্ছল-সজীব এলাকার শাসক হবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। স্বাস্থ্যকর শহর এবং ক্ষমাশীল পালনকর্তা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১৫) 

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত) 

লেখক: আলেম ও লেখক

ইসতেখারা নামাজের দোয়া

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
ইসতেখারা নামাজের দোয়া
নামাজ আদায়রত এক ব্যক্তির ছবি। ফ্রিপিক

ইসতেখারা কখন করতে হয়?
ইসলামের নির্দেশনা হলো যেকোনো নতুন কাজ শুরু করার আগে ইসতেখারা করে নেওয়া। আর কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়, তবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ইসতেখারা করার বিকল্প নেই। সুন্নতের অনুসরণে ইসতেখারা করলে মহান আল্লাহ বান্দাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইঙ্গিত প্রদান করেন। তাই নতুন যেকোনো কাজ কিংবা কাজের সঠিক সিদ্ধান্ত পেতে ইসতেখারা কীভাবে করতে হবে, তাও বলে দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি (সা.)। সুতরাং বিয়ে-শাদি, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিদেশ-সফরের বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়।

ইসতেখারা করার নিয়ম
যেহেতু ইসতেখারা করা সুন্নত আর ইসতেখারা মানুষের জন্য অনেক কল্যাণের; সেহেতু ইসতেখারা করার জন্য উত্তম হলো—

  • নামাজের শুরুতে ভালোভাবে অজু করে নেওয়া।
  • ইসতেখারার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে সুরা ফাতেহার পরে যেকোনো সুরা পড়া যায়।
  • নামাজের সালাম ফেরানোর পর আল্লাহতায়ালার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে করে একান্ত বিনয় ও আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া পড়া।

জাবের বিন আবদুল্লাহর আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সাহাবিদের সব বিষয়ে ইসতেখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন।

তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজের উদ্যোগ নেয়, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। অতঃপর বলে (আরবি দোয়া) 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ ـ فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ ـ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي  بِهِ‏

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা ওয়াস্তাক দিরুকা বি কুদরাতিকা; ওয়া আসআলুকা মিন ফাজলিকাল আজিম। ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তালামু ওয়ালা আলামু; ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন্কুন্তা তালামু আন্না হা জাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা মনে মনে উল্লেখ করবেন) খাইরুনলি ফি দ্বীনি, ওয়া মাআশি ওয়া আকিবাতি আমরি (অথবা বলবে, আ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি); ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লি, সুম্মা বারিকলি ফিহি; ওয়া ইন কুনতা তালামু আন্না হাযাল আম (এখানে নিজের কাজের কথা মনে মনে উল্লেখ করবেন) শাররুন লি ফি দ্বীনি ওয়া মাআশি ওয়া আ কিবতি আমরি (অথবা বলবে আ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি); ফাসরিফহু আন্নিম ওয়াসরিফনি আনহু, ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মারদ্বিনি বিহি।

বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ,আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৩৮২)

ইসতেখারার নামাজ
দুই রাকাত নামাজ পড়বে। তারপর নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা করবে অর্থাৎ আল্লাহর হামদ পড়বে, তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর দরুদ পড়বে। তারপর ইসতেখারার দোয়া পড়বে।

ইসতেখারার শর্ত

  • নিয়ত করা (মনে মনে)।
  • প্রয়োজনীয় সকল চেষ্টা করা। অর্থাৎ ওয়াসিলা গ্রহণ করা।
  • আল্লাহর হুকুমে খুশি থাকা।
  • শুধু হালাল কিংবা বৈধ বিষয়ে ইসতেখারা করা।
  • তওবা করা, অন্যায় করে কিছু গ্রহণ না করা, হারাম উপার্জন না করা, হারাম মাল ভক্ষণ না করা।
  • যে বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে অর্থাৎ বিষয়টি তার ইচ্ছার অধীনে, সেসব বিষয়ে ইসতেখারা না করা।

লেখক: আলেম ও অনুবাদক

আরবি ১২ মাসের নামকরণের ইতিহাস

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম
আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৮ এএম
আরবি ১২ মাসের নামকরণের ইতিহাস
শিল্পীর তুলিতে আঁকা আরবি বারো মাসের নাম। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটি। এর মধ্যে চারটি সম্মানিত।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)

আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যেদিন থেকে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় ও কাল আবর্তিত হয়ে আসছে নিজ চক্রে ও অবস্থায়। বারো মাসে এক বছর হয়ে থাকে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস হলো—জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম এবং চতুর্থ মাস রজব। রজব মাসটি জুমাদাল উখরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি, হাদিস: ৩০২৫)

১. মুহাররম: অর্থ নিষিদ্ধ, হারামকৃত বা মর্যাদাপূর্ণ। এ মাসের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ মনে করা হতো। এ জন্য এ মাসকে মুহাররম বলা হয়। 

২. সফর: অর্থ খালি, শূন্য। মুহাররম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যেত বা খাবার সংগ্রহ করার জন্য ভিন্ন কোথাও যেত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। এ জন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় সফর। 

৩. রবিউল আউয়াল: অর্থ প্রথম বসন্ত বা বসন্তের সূচনা/শুরু। এই মাস থেকে আরবে বসন্তের শুরু হয় বিধায় এ মাসের নাম রাখা হয়েছে রবিউল আউয়াল। 

৪. রবিউল আখের: অর্থ শেষ বসন্ত বা বসন্তের শেষ। বসন্তকালের শেষ পর্যায়ে এই মাস হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে রবিউল আখের। 

৫. জুমাদাল উলা: অর্থ জমে যাওয়া বা স্থবিরতার প্রথম বা শুরু। আরবে এ সময় থেকে শীতের সূচনা ঘটত। ঠান্ডায় জমে যেত সবকিছু। এই জন্য প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে জুমাদাল উলা।

৬. জুমাদাল আখেরা: অর্থ জমে যাওয়ার বা স্থবিরতার শেষ। শীতকালের শেষ সময় হওয়ার কারণে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে জুমাদাল আখেরা। 

৭. রজব: অর্থ সম্মান, মর্যাদা। এই মাসেও যুদ্ধ নিষিদ্ধ এবং এই মাসকে সম্মান করে আল্লাহর মাস বলা হতো। এসব সম্মান ও মর্যাদার কারণে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে রজব। 

৮. শাবান: অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিক্ষিপ্ত। এ মাসে আরবরা যুদ্ধের জন্য ছড়িয়ে পড়ত। অন্য বর্ণনায় এসেছে আরবরা এ মাসে পানি ও খাবার খুঁজতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ত। এসব কারণে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে শাবান। 

৯. রমজান: অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, ভস্মীভূত করে দেওয়া। এই মাসে আমল-ইবাদত ও রোজার মাধ্যমে যেহেতু মানুষের গুনাহ ভস্মীভূত হয়ে যায়, অথবা এই মাসে যেহেতু আরবে অনেক গরম থাকে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে রমজান।  

১০. শাওয়াল: অর্থ তোলা ও উঠানো, উঠে দাঁড়ানো। আরবরা এ মাসে শিকারের জন্য কাঁধে অস্ত্র উঠাত, এ সময় উঠনি বাচ্চা দেওয়ার জন্য লেজ উঠাত। এসব কারণে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে শাওয়াল। 

১১. জিলকদ: অর্থ যুদ্ধবিরতি, বসে থাকা। আরবরা এই মাসে যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকত, বিধায় এ মাসের নাম রাখা হয়েছে জিলকদ। 

১২. জিলহজ: অর্থ হজ, তীর্থযাত্রাকাল। এ মাসে আরবরা হজ পালন করত বিধায় এ মাসের নাম রাখা হয়েছে জিলহজ। (গিয়াসুল লোগাত, ৪৫৭; রেসালায়ে নুজুম, ২২৯; ইবনে কাসির, ২/২৩৬)

লেখক: গবেষক