![ক্ষমা করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন](uploads/2024/05/19/forgives-1716110582.jpg)
আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল। তিনি বান্দাদের ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। আল্লাহতায়ালা মুহাম্মাদ (সা.)-কে এই গুণ অর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে ভালো বিষয়ের আদেশ করুন। আর মূর্খদের উপেক্ষা করুন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯৯)
কোরআনের অপর এক আয়াতে মানুষকে ক্ষমা ও ছাড়ের ব্যাপারটাকে আল্লাহতায়ালা খুবই আশাব্যঞ্জক ও পরকালীন সমৃদ্ধির উপকরণ বলে বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সম্বরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককার লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)
মুসলিম সমাজ সব সময় শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ থাকবে এমনটিই চাইতেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজের মূল উপাদান হলো ক্ষমা করা। ক্ষমা মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা তৈরি করে। আল্লাহ ক্ষমাকারীর সম্মান বাড়িয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে অর্থসম্পদে ঘাটতি হয় না। যে ক্ষমা করবে আল্লাহ তার সম্মান বাড়িয়ে দেবেন। আর যে আল্লাহর জন্য নম্রতা অবলম্বন করবে, আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা উঁচু করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৮)
বাস্তবে ঘটে যাওয়া দুর্নীতি, অনাচার ও ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করাই হলো ক্ষমা করা। ক্ষমা করার প্রবৃত্তি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানের নিশ্চয়তা দেয়। অপরদিকে কেউ যদি নিজের শতভাগ অধিকার আদায় করতে উঠেপড়ে লেগে যায়, তা হলে তার মাধ্যমে সমাজে পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্ষমা করার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দিতে গিয়ে বারবার কীভাবে ক্ষমা করতে হয়, তার কিছু উদাহরণ টেনেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, “এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, গোলামকে আমি কতবার ক্ষমা করব?’ রাসুল (সা.) চুপ রইলেন। এরপর সে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি কতবার ক্ষমা করব?’ এবার রাসুল (সা.) উত্তরে বললেন, ‘প্রতিদিন ৭০ বার।” (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৪৯)
একজন গোলাম তো প্রতিদিন আর ৭০ বার ভুল করতে পারে না। ৭০ বারের কথা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বারবার ক্ষমা করা বোঝানোর জন্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্ষমা করতে পছন্দ করতেন। এটি সুন্নত। ক্ষমায় সমাজে শান্তি ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। মানুষকে ক্ষমা করলে কী পুরস্কার পাওয়া যায়, আল্লাহ তা কোরআনে ঘোষণা করেছন, ‘এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতুল্য। তা সেই মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এমন পুণ্যবানদের ভালোবাসেন।’
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক