![পরিবর্তন না হলে মনোনয়ন জমার সময় শেষ হচ্ছে কাল](uploads/2023/11/29/1701241979.EC-bhaban.jpg)
আসন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল (৩০ নভেম্বর) শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। ওই সব দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা কার্যক্রমও চালাচ্ছেন। তবে দেশের অন্যতম একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং দলটির জোটসমর্থিত বেশ কিছু দল এখনো এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটসহ ইতোমধ্যে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসিতে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় আরও অন্তত ৭ দিন বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। এতে বিভিন্ন মহল থেকে গুঞ্জন উঠেছে তফসিল পেছানোর। কিন্তু গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘোষিত তফসিল পরিবর্তন বা মনোনয়ন ফরম জমা নেওয়ার সময় বাড়ানো হবে কি না, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বাইরে থাকা বিএনপিসহ অন্যসব দলকে ভোটে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ নির্বাচন কমিশনাররা। তারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, বিএনপিসহ সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তফসিল পেছানোর সুযোগ তাদের রয়েছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচন প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে চার নির্বাচন কমিশনারও বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের এলে তফসিল পেছানোর উদ্যোগসহ ইসির পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
সংসদীয় সব আসনে প্রার্থী মনোনীত করে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি। সম্প্রতি ইসির নিবন্ধন পাওয়া নতুন রাজৈনতিক দল তৃণমূল বিএনপিও ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করে আলোচনায় উঠে এসেছে। যুক্তফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ৩০ নভেম্বর থেকে পেছানো হতে পারে, নাও হতে পারে। যদি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন বিলম্ব হয়, তাহলে বাকি তারিখগুলো আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে অংশ নেবে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও তাদের জোট মিত্রদের অনেকের অবস্থান এখনো বিপরীত মেরুতে।
বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে কি না, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হবে কি না কিংবা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বৃহৎ স্বার্থে পুনঃতফসিল বা ভোটের তারিখ পেছানো হতে পারে কি না, এসব নিয়েই এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহলে। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসলেও তাতে সাড়া মেলেনি বিএনপির। দলটির নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে সংসদ বিলুপ্ত এবং ইসি পুনর্গঠন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা এবং বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এ দাবির পক্ষে সরব।
অন্যিদকে বিএনপি যদি ভোটে অংশগ্রহণ করে তবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে পুনঃতফসিল তথা নির্বাচনও পেছানো হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে আসছে ইসি। গতকাল ২৮ নভেম্বর মাদারীপুরে নির্বাচনী সফরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ‘যারা আসেননি তাদের আহ্বান করেছি এবং আহ্বান অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনে আসেন। যদি এমনো হয় যে, সংবিধান অনুযায়ী যে সময়সীমা রয়েছে সেটাকে রি-অ্যাডজাস্ট করে নির্বাচন পেছানোয় আমরা রাজি আছি।’ অন্যদিকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সিলেটে বলেছেন, দলটি যদি নির্বাচনে আসে, তাহলে নির্বাচনের তফসিল পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। এ ছাড়া দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় দু-তিন দিন বাড়ানো যেতে পারে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সংকট উত্তরণের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হতে পারে সংলাপ। যদিও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে এখন বলছেন, তফসিল হয়ে গেছে। এখন আর সংলাপের কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সব আসনের জন্য কত সংখ্যক মনোনয়ন ফরম আসনগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে গতকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনে মোট ১৭৪টি মনোনয়ন বিতরণ করেছেন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা। গতকাল ২০টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৪ সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ২৬টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৯ জন প্রার্থী। ঢাকার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৭৪টি। আর সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে প্রার্থীরা নিয়েছেন ১০০টি মনোনয়নপত্র। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
অন্যদিকে মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলেনি ইসির অনলাইন মাধ্যমে। গতকাল পর্যন্ত ইসির অনলাইনে একটি আবেদনও জমা পড়েনি। তবে আবেদনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন ২৪০ জন প্রার্থী।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ৫২ দিন আগে গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি (রবিবার)। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা।