ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

নতুন বছরে বিপাকে ভাড়াটিয়া

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:০০ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫৪ এএম
নতুন বছরে বিপাকে ভাড়াটিয়া
ছবি : সংগৃহীত

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। ব্যয় জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে বাধ্য হয়ে নিয়মিত খাবারের তালিকা থেকে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের মতো খাবার কাটছাঁট করছেন। এরই মধ্যে বেশির ভাগ বাড়ির মালিক নতুন বছরের শুরুতেই ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন। বাড়তি ভাড়া জোগাড়ের চিন্তায় দিশেহারা ভাড়াটিয়া, অনেকে নতুন বাসার খোঁজে নেমেছেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর খবরের কাগজকে বলেন, বাড়িওয়ালাদের বেশির ভাগই সমাজের প্রভাবশালী ধনী মানুষ। তারা বিবেচনাহীনভাবে ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি ভাড়া কম দেখিয়ে করও ফাঁকি দেন। অনেকে ই-টিআইএন পর্যন্ত নেননি। ভাড়া আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আইন করেছিল। কিন্তু প্রভাবশালী ভাড়াটিয়ারা এতই ক্ষমতাবান যে তাদের দাপটে সে আইন বাতিল করতে সরকার বাধ্য হয়। 

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে,‍ ‘ভাড়া নির্ধারণে ভাড়াটিয়াদের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক। বাড়ির মালিক প্রতি দুই বছর পরপর যুক্তিগত পরিমাণে ভাড়া বাড়াতে পারবে। অগ্রিম হিসেবে এক মাসের ভাড়ার বেশি নেওয়া যাবে না। বাড়িওয়ালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভাড়াটিয়ার কাছে ধার্য করা ভাড়ার সঙ্গে অধিক জামানত, প্রিমিয়াম অথবা কোনো সালামি গ্রহণ করতে পারবেন না।’ 

এ আইন সুরক্ষা দিতে পারছে না ভাড়াটিয়াদের। আমাদের দেশে বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়ার সামর্থ্য বিবেচনায় ভাড়া নির্ধারণ করেছেন, এমন নজির নেই বললেই চলে। ভাড়া কত হবে, কত দিন পর, কী পরিমাণ বাড়ানো হবে, অগ্রিম হিসাবে কত নেওয়া হবে- এসব নির্ভর করে বাড়িওয়ালার মর্জির ওপর। বাড়িওয়ালার চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে ভাড়াটিয়ারা বিপাকে পড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যাদের সামর্থ্য থাকে না, তারা তল্পিতল্পা গুটিয়ে ছোটেন অন্য ঠিকানায়। বাড়িওয়ালাদের বিবেচনাহীন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়াদের আইনি আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অনেকে ঝামেলা এড়াতে এ পথে আসেন না। অনেকে আবার আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানেনই না। অনেক সাধারণ ভাড়াটিয়া প্রভাবশালী বাড়িওয়ালার ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নেন না।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, উচ্চবিত্তের বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর চাপ কম থাকে। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষই প্রভাবশালী। তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নেন। ভাড়া বেশি বাড়ানো হচ্ছে নিম্ন, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে চাপিয়ে দেন। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ, বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে বস্তির ঘর ভাড়া বেড়েছে ১১ শতাংশ এবং মেস রুমের ভাড়া গড়ে ৮ শতাংশ। 

মিরপুর-১০ নম্বরে মাসে ১৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী জুবায়ের হাসান। তিনি মাসে ৩৫ হাজার টাকা বেতন পান। খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, যাতায়াত খাতে বেতনের সবটা খরচ হয়। প্রায় প্রতি মাসেই পাড়ার মুদি দোকানে বাকি এবং ধারদেনাও করেন। 

জুবায়ের হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেতনের প্রায় অর্ধেক ব্যয় করি বাসা ভাড়ায়। জানুয়ারির ২ তারিখ বাড়িওয়ালা ২ হাজার টাকা ভাড়া বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। চাল, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংসসহ সব খাবারের দাম বেশি। দুই সন্তানের স্কুলের বেতন, ওষুধের দাম, রিকশা ভাড়াসহ প্রায় সব খরচ বেশি। প্রতি মাসেই ধারদেনা-বাকি করি। কিন্তু আমার বেতন তো বাড়েনি। বাড়তি বাসা ভাড়া কোথা থেকে দেব?’

তেজকুনি পাড়ায় ভাড়া থাকেন রাশেদ কবীর। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে তিন বছর ধরে এই বাসায় বসবাস করছি। চারবার ভাড়া বাড়িয়েছেন বাড়িওয়ালা। এ ছাড়া ভাড়া নিয়ে কোনো চুক্তি করেন না। অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে বাসা পাল্টানো অনেক ঝামেলার। আইনি ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়ির মালিক এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার সঙ্গে আইনি ঝামেলায় গিয়ে এখানে থাকতে পারব না।’ 

সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর-১০, ১, ২, ১৩, নম্বর, মোহাম্মদপুর, ফামর্গেট, ধানমন্ডি, গুলশান, সেগুনবাগিচা, উত্তরা, টঙ্গী, জিগাতলা, শ্যামলী, বনশ্রী, শংকর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিজাত, সাধারণ মানের, এমনকি বস্তি এলাকাতেও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির শুরুতেই অনেক বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন। 

মিরপুরের-১৩ নম্বর সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করেন সুফিয়া বেগম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অভাবে ঢাকায় আইছি আয় করতি। বাসাবাড়িতে কাম করি ৭ হাজার ট্যাকা পাই। দুই মাস আগে মিরপুর-১০ নম্বরে বাসা নিচ্ছি। ২ হাজার ৫০০ টাকা এক ঘরের ভাড়া। অন্য ভাড়াটিয়ার লগে বাথরুম আর রান্নাঘর। গত ৫ তারিখ বাড়িওয়ালা ৩০০ টাকা ভাড়া বাড়ানোর কথা জানাইছে। কেমন কী হবে? বুঝতে পারতাছি না।’

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের অভিজাত এলাকার বাড়ির মালিকদের রাজস্ব পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখতে নামেন। ২০১১ সালে এনবিআর কর্মকর্তারা ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে দুই ধাপে ছয় লাখের বেশি বাড়িওয়ালার ওপর রাজস্ব পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখেন, ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি ই-টিআইএন গ্রহণ করেননি, ই-টিআইএন থাকলেও রিটার্ন দাখিল করেননি ১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি এবং ৯৮ হাজার হিসাবের চেয়ে কম পরিশোধ করেছেন। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, বেশির ভাগ বাড়ির মালিক ভাড়ার পরিমাণ কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দেন। ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ভাড়ার রসিদ দেন না। অনেকে রসিদ দিলেও কম লিখে রাখেন। 

২০১১-১২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে কঠোর আইন করা হয় যে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়ি ভাড়া হলে ব্যাংকে আলাদা হিসাব খুলে আদায় করতে হবে। কিন্তু সরকারের এ আইন শেষ পর্যন্ত পাল্টাতে হয়। প্রভাবশালী বাড়িওয়ালারা এক জোট হয়ে এ আইন সংশোধনে উঠেপড়ে লাগেন। বাড়ির মালিক কিছু বড় মাপের ব্যবসায়ী, অনেক আমলা, কিছু সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীও ছিলেন এ দলে। আইনটি কার্যকরের ২১ দিন পর আইনটি সংশোধনে বাধ্য হয় এনবিআর। সংশোধনীতে বলা হয়, বাড়িওয়ালার ইচ্ছা হলে ভাড়ার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়েও থাকতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে এনবিআর আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে না।

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সে সময়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালারা অনেকেই প্রভাবশালী। তাই ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া আদায়ে আইন করে বাড়ি ভাড়াওয়ালাদের ওপর নজরদারি সম্ভব হয়নি।

বাসস্থান প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই বিষয়ে লক্ষ রেখে বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের আবাসনপ্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের এ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের জাতীয় গৃহায়ণ নীতিতে সাধ্যের মধ্যে সবার আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে, বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য। কিন্তু দেশের রাজধানীসহ সারা দেশে সবচেয়ে বেশি আবাসনসংকটে রয়েছে এ দুই শ্রেণির মানুষ।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, নতুন ঋণ ও সুদহার কমানোর প্রস্তাব দেবে ঢাকা

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, নতুন ঋণ ও সুদহার কমানোর প্রস্তাব দেবে ঢাকা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিন পিং

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বেইজিং সফরকালে শীর্ষ বৈঠকে বেইজিংয়ের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা, নতুন ঋণ ও ঋণের সুদহার কমানোর মতো প্রস্তাব দিতে পারে ঢাকা। অন্যদিকে বেইজিং চায় ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ঢাকার সমর্থন। এ ছাড়া তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে হলেও থাকতে চায় চীন। বেইজিং এ অবস্থায় ঢাকার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর কথা বলছে।  

আগামী ৮-১১ জুন বেইজিং সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরকে চীন ও ভারতের মধ্যে ভারাসাম্য রক্ষার সফরও বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর হবে উন্নয়নমূলক। এই সফরে ভারতের আপত্তি নেই। 

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতকে যেমন খুশি রাখা জরুরি, তেমনি চীনকেও খুশি রাখা জরুরি। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। দেশটির কাছ থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ পায় বাংলাদেশ। কাজেই বাংলাদেশ চাইলে চীন ও ভারত উভয়কেই তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত করতে পারে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা নিতে চীনকে অনুরোধ করবে ঢাকা

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গ উঠলে নয়াদিল্লি ঢাকাকে বেইজিংয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তখন ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরকালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরাও মনে করেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অফিশিয়ালি চীন বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যস্থতা করছে এবং দেশটির মধ্যস্থতায় তিনটি বৈঠকও হয়েছে ঢাকা-নেপিদোর মধ্যে। 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী লি জিয়ান চাও সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট বেইজিং। কিন্তু রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এ ক্ষেত্রে চীন যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছে, যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও শুরু করা যায়।’ 

এ প্রসঙ্গে বেইজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘চীনের সঙ্গে মায়ানমারের সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ চাইবে ঢাকা 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ চাইবে ঢাকা। এটা দুই দেশের সম্পর্কে ‘গেম চেঞ্জারে’র ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে বেইজিং। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এবং ৫ বিলিয়ন ডলার চীনা মুদ্রা ইউয়ানে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে, যেটা আমদানিসহ বাণিজ্যে ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়া সফরকালে ৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তাও চাওয়া হতে পারে। 

প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সফরকালে যৌথ বিবৃতির বিষয় চূড়ান্ত করা হয়। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ৭ প্রকল্পে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে ঢাকা। এ ছাড়া গাবতলী থেকে সদরঘাট হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেলে (মেট্রোরেল-২) ঋণ দিতে আগ্রহী চীন। এই প্রকল্পে ৬০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এ ছাড়া বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন বিস্তৃত করা হবে। এ জন্য দরকার ৪১ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণেরও প্রস্তাব দেবে ঢাকা। 

এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘চীনের সুবিধা হচ্ছে তাদের অনেক উদ্বৃত্ত টাকা আছে। ভারতও কিন্তু চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়। কিন্তু অন্যরা চীনের কাছ থেকে ঋণ নিলে তাদের গায়ে জ্বালা করে।’ 

সুদহার কমানোর প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ঋণের সুদহার কমানোর প্রস্তাব দিতে পারে ঢাকা। গতবার যখন প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গিয়েছিলেন, তখনই বিষয়টি নিয়ে বেইজিংকে অনুরোধ করেছিল ঢাকা। সূত্র জানায়, এবারও একই অনুরোধ করা হতে পারে। 

এই অনুরোধের বিষয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তখন চীন সরকারকে অনুরোধ করে বলা হয়েছিল যে আমরা গরিব দেশ। তখন বেইজিং একটা ক্যাপ দিয়েছিল যে কোনোভাবেই সেটি ২ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু ঢাকা এটাকে ১ শতাংশ করতে বলেছিল। এবারও হয়তো এমন প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।’ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রও বলছে, ২০১৬ সালে যেসব ঋণচুক্তি হয়েছিল, এবার তার চেয়ে ভিন্ন মডেলে ঋণচুক্তি সই হবে  বলে আশা করা হচ্ছে। 

ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে হলেও তিস্তা প্রকল্পে থাকতে চায় বেইজিং

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, চীন আশা করেছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর চীনকে তিস্তা প্রকল্পের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকা সফরকালে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগে নয়াদিল্লির আগ্রহের কথা জানান। 

এ অবস্থায় বেইজিং ঢাকাকে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে যে দিল্লির সঙ্গে যৌথভাবে হলেও তারা তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায়। যদিও ঢাকা এখন পর্যন্ত বেইজিংয়ের এই নতুন প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। 

চীন যে এমন প্রস্তাব ঢাকাকে দিয়েছে, সেটি প্রথম ইউরেশিয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। তারপর সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পাশাপাশি তিনি এটাও জানান যে বেইজিং ঢাকার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে এবং ঢাকার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হবে। 

ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ঢাকার সমর্থন চাইতে পারে বেইজিং  

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূ-রাজনৈতিকভাবে চীন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও চীনের এই ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থেই ভূ-রাজনৈতিকভাবে বেইজিংকে সমর্থন করতে হচ্ছে ঢাকাকে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কিছু ইস্যুতে বেইজিংও ঢাকাকে পাশে চায়। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সম্প্রতি চীন কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ফিলিপাইনের জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নিয়ে চীন চিন্তিত। এই ইস্যুতে তারা হয়তো বাংলাদেশকে তাদের পাশে চাইবে। এদিকে কোয়াডে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চাপ রয়েছে। এই ইস্যুতে বেইজিং বরাবরই তাদের বিরোধিতার কথা ঢাকাকে জানিয়েছে। 

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন করিব খবরের কাগজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখনকার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে চীনারা হয়তো চাইবে বাংলাদেশ তাদের অবস্থানকে সমর্থন করুক। যেমনটা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় দেখেছি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যে দ্বিপক্ষীয় গভীর সম্পর্ক আছে, সেটাকে পুঁজি করেই আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাগুলোর সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ক্রমাগত আরও বলিষ্ঠ হবে এবং সফরটি সফল হবে বলে আমি আশাবাদী।’

কোটাবিরোধী আন্দোলন নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে পুলিশ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে পুলিশ
ছবি: খবরের কাগজ

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকার কোনো সড়কে যাতে কোটা নিয়ে কেউ অরাজকতা করতে না পারে সেই দিকে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশের শাখাগুলোকে। শুরু থেকে যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের গতিবিধি নজরদারি এবং তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে কোটা আন্দোলনের মূল স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে। এই ইস্যুতে গণ অধিকার পরিষদের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখছে পুলিশ।  

এই আন্দোলনে নুর ও তার দলের কোনো উসকানি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের মাঠে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় মাঠের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগ বাড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঘটনাস্থলের আপডেট তথ্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেসব পরামর্শ দেবেন সেসব পরামর্শ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। 

সাম্প্রতিক এই ইস্যুতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় সভা করেছেন। এই সভাগুলোতে সভাপতিত্বে করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। এই সভায় ডিএমপির পক্ষ থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ৭টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সেগুলো হলো, আন্দোলনের নামে কেউ সড়কে অরাজকতা সৃষ্টি করে ও আইন হাতে তুলে নিলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে, এই আন্দোলনে যাতে কেউ সরকারবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারে সেই বিষয়টি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে না করতে পারে সেই দিকে খেলাল রাখা ও মনিটরিং বাড়ানো, ২০১৮ সালে যারা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের অবস্থান নির্ণয় করা, মোবাইল ট্র্যাকিং বাড়ানো ও আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন গতকাল বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতীতের দিকে নজর দিয়ে চলমান কোটা আন্দোলনের বিষয়ে আমরা পরিস্থিতি নজরে রেখেছি। আইন ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়েছিল। অতীতের বিষয়টি মাথায় রেখেছে পুলিশ। গত এক সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আবারও মাঠে নেমেছেন। 

গতকাল শনিবারও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, তাদের দাবি মেনে কোটার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এতে পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে। যদি হঠাৎ এই আন্দোলনে অরাজকতা হয় সেই ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আগেই নির্ধারণ করে রেখেছে পুলিশ। 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এই কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এই সব তরুণ নেতৃত্বের গ্রামের বাড়িতেও তার পরিবারের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে গোয়েন্দারা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে। এই বিষয়টি আমলে নিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই নেতা আন্দোলনকারীদের অর্থ সরবরাহ করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মাঠপর্যায়ের তদন্তকারীরা।

 সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিষয়ে নজরদারি রেখেছে পুলিশ। এই আন্দোলন নিয়ে তার সাম্প্রতিক গতিবিধি খুব একটা ইতিবাচক দেখছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েক দিনে তিনি একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এই আন্দোলনে তার উসকানি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

সার্টিফিকেট ছাড়াই ৬ বছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের!

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
সার্টিফিকেট ছাড়াই ৬ বছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের!
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস পরিচালনা করতে এয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) সার্টিফিকেট নেওয়ার নিয়ম করে গেজেট প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের  ছয় বছরের বেশি সময় পর গত দুই সপ্তাহ আগে কেবল শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও ২-এর জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ  (বেবিচক) থেকে এ সার্টিফিকেট নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। 

সার্টিফিকেট ছাড়াই ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বিমানের মতো সংস্থা দেশের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিচালনা করে। এ ছাড়া এবার যে সার্টিফিকেট পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ, তা কেবল ঢাকার জন্য, দেশের অন্যান্য পোর্টের ক্ষেত্রে এখনো সার্টিফিকেট ছাড়াই বিমান হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে। 

দেশের বিমানবন্দরগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব গেজেট প্রকাশের অনেক আগে থেকেই পালন করে আসছিল বিমান। তবে গেজেট আকারে প্রকাশের পরও বিমানের এভাবে কাজ করার বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল বেবিচক। কিন্তু নবনির্মিত থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদানকারীদের বেলায় এই নিয়ম যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে চায় বেবিচক। 

গত বছরের আগস্টে এক গণমাধ্যমে বেবিচকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছিলেন, ‘লাইসেন্স নেওয়ার গেজেট ২০১৮ সালে হয়েছে। কেউ এখনো লাইসেন্স নেয়নি। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কাজ পাবে না।’ 

মূলত এরপর থেকেই থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পেতে শেষ সময়ে এই সার্টিফিকেট নিতে দৌড়ঝাঁপ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। 

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং লাইসেন্স প্রদান করতে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিমানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে দ্রুত একটি সভা করার নির্দেশও দেওয়া হয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং লাইসেন্স পেতে পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্ট এ বছরের ১৮ এপ্রিল বেবিচককে দেয় বিমান। যা একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পর সরেজমিন পরিদর্শন করে বেবিচক। 

বেবিচকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, আইকাও নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ শেষ করে দুই সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনেকটা তোড়জোড় করেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এএনও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে বিমানকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এবং টার্মিনাল-২-এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বেবিচক হেডকোয়ার্টার থেকে বিমানের লাইসেন্স রয়েছে। 

বিমানবন্দরে যাত্রীর বোর্ডিং পাস, ব্যাগেজ আনা-নেওয়া, কার্গো মালামাল ওঠানো-নামানো, এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে মূলত বলা হয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। যে কাজ সংস্থাটি ১৯৭২ সাল অর্থাৎ তার জন্মলগ্ণ থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে প্রায় এককভাবে করে আসছে। সে হিসেবে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব রয়েছে বিমানের হাতে। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি ৩৬টি ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা। তবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ আরও বেসরকারি বেশির ভাগ এয়ারলাইনস নিজস্বভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে আসছে।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং কার্গো পরিষেবা দিয়ে বিমান প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করে থাকে। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ বিমানের সদ্য নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাহিদুল ইসলাম ভূঞা জানান, কার্গো থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি আয়ের আশা করছেন তারা। 

সংস্থাটি বলছে, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং কার্গো পরিষেবাও যদি তাদের হাতে আসে, তবে এ আয় দাঁড়াবে চার হাজার কোটি টাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল মাসুদ খান খবরের কাগজকে বলেন, এএনও সার্টিফিকেট একটি বিমানবন্দরের নামেই নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বেবিচক থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এএনও সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছে। কবে নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তার উত্তর পাওয়া যায়নি। 

এ ছাড়া যদি বিমানবন্দরের নামেই যদি এএনও নেওয়া হয়, তবে দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোর এএনও বিমানের আছে কি না, জানতে চাইলে গত দুই দিনেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবার জন্য বিমান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে নিবন্ধন এবং স্বীকৃতির প্রশংসাপত্র পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরেক তথ্য সূত্র অনুসারে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ঢাকা এয়ারপোর্টে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে নিয়োজিত। ২০০৯ সালে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা পরিচালনার অনুমোদন পায়। এরপরে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-সংক্রান্ত এএনওর আলোকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমান বাংলাদেশ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ফি পরিশোধ করেছে। 

এ বিষয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার মনে হয় সার্টিফিকেট ছাড়া বিমানের এ কাজ করার দায় যতটা না বিমানের, তার থেকেও বেশি বেবিচকের। কারণ তারাই এটার রেগুলেটরি বডি। তারা কীভাবে বিমানকে সার্টিফিকেট ছাড়া কাজটি করতে দিচ্ছে? আর বিমান যে এভাবে সার্টিফিকেট ছাড়া কাজ করেছে, এটা গুরুতর অপরাধ। অন্যদিকে বেবিচক কেন এতদিনেও এ সার্টিফিকেট দেয়নি বা এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত।’

জেলায় জেলায় বানভাসিদের দুর্ভোগ

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৪১ পিএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৪ পিএম
জেলায় জেলায় বানভাসিদের দুর্ভোগ
বন্যার পানিতে কুড়িগ্রামের উলিপুরে চর গুজিমারী এলাকায় ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। নৌকাই এখন বানভাসি এক পরিবারের একমাত্র আশ্রয়স্থল। ছবি: গোলাম মাওলা সিরাজ

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে নদ-নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্য দিয়ে লুকোচুরি খেলছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। এ ছাড়া জামালপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত। এসব এলাকার অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেকে বসতবাড়িতে জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে বসতবাড়িতে আটকে থাকা মানুষদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান-

সিলেট ব্যুরো: লুকোচুরি খেলছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। এক দিন নদীর পানি কমে তো আরেক দিন বাড়ে। নদীর পানি বাড়া-কমার এই দোলাচলে সকালে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও বিকেলে উন্নতি হয়। সারা বর্ষা মৌসুম সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির এমন দোলাচল থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সিলেট ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলার নদ-নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪ দশমিক ৩ মিলিমিটার। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, এই বর্ষাকালে এমন পরিস্থিতি চলমান থাকবে।

জামালপুরে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
জামালপুরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই সব এলাকার ৫০ হাজার মানুষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী সড়কের একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ও কাঠারবিল এলাকায় দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের ৩০ মিটার ভেঙে গেছে। 

জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তারেক মো. রওনাক আখতার জানান, বন্যার কারণে ইসলামপুর উপজেলার ১২টি এবং মেলান্দহ উপজেলার ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

ইসলামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বন্যার পানি বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়ায় উপজেলার ১২টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

গাইবান্ধায় ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি, বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট 
গাইবান্ধায় করতোয়া, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে জেলার চার উপজেলায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এর মধ্যে ওই সব উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নে ২৮ হাজারেও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি। তারা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে, দুর্গম চর ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি আরও বেশি করুণ।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩ হাজার ৫০টি শুকনা খাবারের প্যাকেট ও ১৬৫ টন চাল চার উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানিয়েছেন, নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার কারণ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। এ পানি ঘাঘট নদীতে প্রবেশ করেছে। একই কারণে করতোয়ার পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিডবোট প্রস্তুত রয়েছে। জেলা-উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং লাইভস্টক টিম গঠন করা হয়েছে। 

কুড়িগ্রামে নতুন এলাকা প্লাবিত
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে গতকাল দিনে নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এদিকে চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে অঘোষিত ছুটি। এদিকে চরাঞ্চলের বাড়ি ছেড়ে নৌকায় বসবাস করছেন। অনেকে উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারি ত্রাণ বিতরণের খবর মিললেও তা প্রয়োজন তুলনায় অপ্রতুল। তাই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেশির ভাগ বানভাসি মানুষ। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা দ্রুতগতিতে বাড়বে পানি। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, থেমে থেমে ভারী-মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে থাকবে। 

টাঙ্গাইলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
টাঙ্গাইলে সব কয়টি নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার নলীন, গোবিন্দাসী, কালিহাতীর বেলটিয়া, পটল ও সদর উপজেলার তোরাপগঞ্জ, ছিটবাড়িসহ কয়েকটি গ্রাম নতুন করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। 

এতে করে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া এলাকার একটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন-ঝুঁকিতে রয়েছে ওই উপজেলার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যে এলাকাগুলোতে পানি বেড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে, সে এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হবে।

৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্প পরামর্শকের দায়িত্বে ছাত্র!

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৩ পিএম
পরামর্শকের দায়িত্বে ছাত্র!

বিআইডব্লিউটিএর জন্য ‘৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। নদীপথে সহজে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর শুরু হয় কাজ। এরপর এক দফা সংশোধন করা হয়েছে। তার পরও গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ।

এদিকে ড্রেজার ও জলযানের নির্মাণকাজ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট)। তবে পরামর্শক হিসেবে বুয়েটের এক ছাত্র সেই দায়িত্ব পালন করছেন। 

প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে। 

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএর বহরে মাত্র ২৫টি ড্রেজার রয়েছে। তাতে বছরে মাত্র ১১৪ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা যায়। বেসরকারি ড্রেজারসহ সব মিলিয়ে ড্রেজিং সক্ষমতা বছরে প্রায় ৮৪৬ লাখ ঘনমিটার। আর বিআইডব্লিউটিএর চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৬৫৫ লাখ ঘনমিটার। অর্থাৎ বছরে বার্ষিক ঘাটতি থাকছে ৮০৮ ঘনমিটার। প্রকল্পটি ২০১৮-এর ১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। সংশোধন করে দুই বছর অর্থাৎ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকার প্রকল্প খরচ ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকায় ঠেকেছে। প্রকল্পটি ৬১টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প এলাকা হচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জের শিবালয় ও আরিচা, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শিমুলিয়া ও মাদারীপুর সদর উপজেলা। এ ছাড়া বরিশালের বরিশাল সদর উপজেলা, বাগেরহাটের রামপাল, গাইবান্ধা সদর, কক্সবাজার সদর, সিলেটের ছাতক ও সদর উপজেলা এবং জামালপুরের সদর উপজেলা রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যানগাড়ি কেনার জন্য ২০২০ সালের ২২ মার্চ টেন্ডার আহ্বান করার পর প্রায় ৮৫ কোটি টাকায় ভ্যান দুটি কেনা হয়। একইভাবে একটি জিপগাড়ি কেনার জন্য ২০২০ সালের ২৩ মার্চ টেন্ডার আহ্বান করার পর ৭ জুন ৫৭ কোটি টাকায় সেটি কেনা হয়। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি ভালোই ছিল। তবে ড্রেজার কেনা প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ সময় চলে গেলেও মাত্র ৪০টি সহায়ক জলযান ও কিছু আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা ছাড়া মূল কাজে অগ্রগতি হয়নি। 

প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে সরকার গত (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলারসংকটের কারণে এলসি খুলতে পারছে না বলে প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে আইএমইডি মনে করে। আবার যেসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে, তা ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। অন্যদিকে এসব যন্ত্রপাতি মাঠপর্যায়ে কোথায় অবস্থান করছে, তা জানতে পারেনি আইএমইডির টিম।

এদিকে প্রকল্পের কাজ তত্ত্বাবধানের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বুয়েটকে। কিন্তু সরেজমিনে বুয়েটের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে বুয়েটের একজন ছাত্র প্রকল্পের তত্ত্বাবধানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনিই কাজের মান তদারকি করেন, যা কাম্য নয়। এভাবে সব দিক থেকে কাজের ব্যাপারে ঘাটতি দেখা গেছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) মো. মজনু মিয়া খবরের কাগজকে জানান, জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। বুয়েটের ছাত্র প্রকল্প মনিটর করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মনিটরিংকারী একজন নৌ-স্থাপত্য বিষয়ের স্নাতক প্রকৌশলী। বুয়েট থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়ে থাকে। সে কারণে অধ্যায়নরত ছাত্র প্রকল্প কাজ মনিটর করেন। সিনিয়র পরামর্শকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলমান কাজ জুনিয়র পরামর্শকরা তদারকি করে থাকেন। এ ছাড়া সিনিয়র পরামর্শকরাও নিয়মিত কাজের তদারকি করেন।

আগামী এক বছরে কি ৭৭ শতাংশ কাজ করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজ চুক্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালে সম্পন্ন করা হবে। কাজের ধীরগতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমদানি করা বিভিন্ন মালামালের সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটায় মালামাল আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। এ জন্য প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের অগ্রগতি প্রত্যাশার তুলনায় কম হচ্ছে।’

প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও কোনো প্রকল্প পরিচালক পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করেননি। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. আবদুল মতিন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেরিন) গোলাম মোহাম্মদ ২০২২ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মো. মজনু মিয়াও ২০২২ সালের ২ নভেম্বর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। 

প্রকল্পের কাজ ভালোমতো দেখভাল করতে তিন মাস পরপর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা হওয়ার কথা। এ প্রকল্পে তা মানা হয়নি। দীর্ঘ সময়ে এ পর্যন্ত মাত্র ৯টি পিআইসি ও ৮টি পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।