![কথার লড়াই রূপ নিচ্ছে সংঘাতে](uploads/2023/12/25/1703480022.Chottogram.jpg)
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শোডাউন এবং কথার লড়াই এবার সরাসরি সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। এসব ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি হচ্ছে মামলাও।
জেলা আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের পক্ষ থেকে কর্মী-সমর্থকদের সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি মানার বিষয়ে জোর দিয়ে তারা বলছেন, এভাবে মারামারি করলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন না। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আচরণবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আচরণবিধিই যথেষ্ট। এসব মানানোর জন্য নির্বাচন কমিশন আছে। রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রার্থীদের সহনশীল হতে হবে। তবেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘সংঘাত কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়া হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চললে সংঘাত হওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে প্রার্থীদের সহনশীল হতে হবে। মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে ভয় পাবেন।’ প্রার্থীদের আচরণবিধি মানাতে বাধ্য করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর প্রথম যুদ্ধ ছিল বাছাইয়ে অভিযোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মনোনয়ন কোনোভাবে বাতিল করা। কেউ কেউ এতে সফলও হয়েছেন। এরপর থেকে চলছে শোডাউন এবং কথার লড়াই। যা এখন কোনো কোনো এলাকায় সংঘাতে রূপ নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগেই মীরসরাই আসনে নৌকার প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রুহেল জমি দখলসহ নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তোলেন গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার পরদিন ওই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন।
তবে কথার যুদ্ধ আর কথাতে থেমে থাকেনি। শেষ পর্যন্ত তা সংঘাতে জড়িয়েছে। গিয়াস উদ্দিনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নিয়াজ মোরশেদ খবরের কাগজকে জানান, পোস্টার লাগানোর কারণে তাদের এক সমর্থকের ওপর হামলা হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় উপজেলার ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার ওই সমর্থকের নাম দিল মোহাম্মদ অপু (২২)। তিনি একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ছেলে। গুরুতর আহত অপুকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠিয়েছি। যতটুকু জেনেছি পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কেউ এখনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে নৌকার প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে কথার লড়াই চলছে আরও অনেক আগে থেকে। নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ এমপি তার নির্বাচনি এলাকায় বড় বড় পোস্টার লাগিয়েছেন। সেখানে তিনি ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ভোট চোরদের ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। যারা নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করছেন তাদেরকে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে দেশের বাইরে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি একবার খালা ডাকেন আরেকবার ফুফু ডাকেন। ৮৬ সালে জামায়াতের হয়ে নির্বাচন করেছেন। সব খবর আছে আমাদের।’
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী প্রচারকালে তার কর্মী-সমর্থকরা বাধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে ওই আসনে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অভিযোগ, পটিয়ায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সামশুল হক চৌধুরী ষড়যন্ত্র করছেন।
বড় ধরনের মারামারি এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া আসনে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। পরে পাল্টা হামলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কয়েকজন আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের ঘটনা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের এক অনুসারী নৌকার মিছিলে হামলার অভিযোগ এনে একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমানের ৯ জন সমর্থকের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান খবরের কাগজকে জানান, এ বিষয়ে তারা সতর্ক আছেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রার্থীদের ডেকে আচরণবিধি মানার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আশা করি তারা তা মেনে চলবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।