গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে আসামিদের সাজা বাড়ানোর আবেদন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রপক্ষ।
রবিবার (৩০ জুন) অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এ এম আমিন উদ্দিন) সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘এই মামলাটা অনেক স্পর্শকাতর। বিশাল একটা জাজমেন্ট ছিল। বিচারিক আদালতে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হলেও হাইকোর্ট রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আজীবন কারাবাস দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে হাইকোর্ট দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। শুধু বাক্যের পরিবর্তন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল, কিংবা কেন এটা দিয়েছেন তার কারণগুলো নিশ্চয়ই পূর্ণাঙ্গ রায়ে লেখা থাকবে। ওইটা দেখার পরে সরকারের সঙ্গে কথা বলে দেখব যে যুক্তিটা কী এবং এটার বিপক্ষে গেলে রাষ্ট্রের পক্ষে ফল লাভ হবে কি না, সেটা তখন আমরা বিবেচনা করব।’
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। আসামিদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনো কারণই নাই। এরা (আসামি) যে বিদেশি কিছু নিরীহ মানুষ, যারা আমাদের দেশকে সহায়তা করতে এসেছিলেন, তারা আমাদের দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে এসেছিলেন, তাদের বিনা কারণে শুধু ধর্মের নামে এবং উগ্রবাদিতার নামে হত্যা করেছে। যাদের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে, সাজা হয়েছে, তারাই কিন্তু পেছনে ছিল। মদদ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে, পয়সা দিয়েছে, সহায়তা দিয়েছে, মূল পরিকল্পনার অংশে তারাই ছিল। তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নাই। তারপরও আদালত কী কারণে অনুকম্পা দেখিয়েছেন, তা আমাদের দেখতে হবে। সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রায় অনুযায়ী মৃত্যু পর্যন্ত তাদের কারাগারেই থাকতে হবে। মৃত্যুর পর তাদের লাশ কারাগার থেকে বের হবে।’
সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড: গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। গত বছর ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রাশ, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মামুনুর রশিদ রিপন এবং শরিফুল ইসলাম খালিদ। দণ্ডপ্রাপ্ত আসমিদের সবাই এখন কারাবন্দি।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর দেওয়া হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার রায়ে সাতজন জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত। এরপর সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ‘ডেথ রেফারেন্স’ এবং আসামিপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।
আট বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে ১৮ জন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, সাতজন জাপানের, একজন ভারতীয় এবং তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক। তিনজন বাংলাদেশির মধ্যে একজনের দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিলেন। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও সেদিন জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন।