ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে চলে মাদকের রমরমা কারবার। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নেশাদ্রব্য। তথ্য বলছে, প্রকাশ্যে বাদামের ডালায় গাঁজা সাজিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বিক্রির রমরমা কারবার চলে রাজধানীসহ দেশের অলিতে-গলিতে। অনেক সময় কারারক্ষীদের মাদক কারবারে জড়িত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। অসাধু একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা এবং ধরা পড়ার পর লঘুদণ্ডের কারণে কারারক্ষীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। 

জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও বিভাগীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা যৎসামান্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বসে মাদকের হাট। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। এতে তেমন কোনো ফল আসছে না। কারণ মাদক কারবারিরা জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ করে। দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদকসেবীর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে মাদক কারবারে জড়িত নারীর সংখ্যা। তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। শিশু-কিশোর ও তরুণরা বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় অভিযানে ধরা পড়ছে মাদক কারবারিরা। সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিদিনই গ্রেপ্তার, মামলা ও শাস্তি হওয়ার পরও থেমে নেই মাদকের কারবার। রাজধানী ঢাকার সর্বত্র এখন মাদক বিক্রির স্পট। 

রাজধানীর ছয়টি এলাকা মাদকের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রেড জোনে রয়েছে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মহাখালীর কড়াইল বস্তি, কালশী বিহারি ক্যাম্প, কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী। এ ছাড়া ইয়োলো ও গ্রিন জোনের তালিকায় রয়েছে পুরো রাজধানী। 

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হয়ে ঢাকায় আসছে মাদক। সড়ক, নদী, সাগর ও আকাশপথে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে ঢুকছে মাদক। গবেষকরা বলছেন, একসময় হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন মাদকের বাজার দখলে নিয়েছে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ। বাংলাদেশে এখন এই দুই মাদকের চাহিদা তুঙ্গে। টিনএজরা সবচেয়ে বেশি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে বলেও গবেষণায় জানা যায়।

পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের একটি গবেষণায় বলা হয়, দেশে ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে খোদ রাজধানীতে ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। যদিও ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। 

এ ছাড়া দেশে ৫৮ শতাংশ পথশিশু ড্যান্ডিসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত। ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই মাদক সেবন করে। তুলনামূলক সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। 
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগরে মোট মামলা হয়েছে ৬৮৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২২০টি। অর্থাৎ এই সময়ে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি এক-তৃতীয়াংশের কম। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ খবরের কাগজকে বলেন, সারা বিশ্বে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মাদকাসক্ত হয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। মাদক কারবারের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান, গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়ার মাধ্যমে মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

মাদক কারবারে যারা জড়িত, তারা অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দেশ ও সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনকে সামাজিকভাবে মাদক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদক কারবারে যারা গডফাদার তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।

বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে

বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল ডলার আটকে থাকা এবং সিন্ডিকেটের কারণে চাহিদা বাড়লে লাগামছাড়া হয়ে উঠছে বিমানের টিকিটের দাম। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। যদি সেটা কয়েক গুণ বেড়ে যায় তখন তা সবার নজরে পড়ে। বিমান টিকিটের বেলায় যাত্রীরা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সম্প্রতি। ৩০ হাজার টাকার টিকিট লাখ টাকায় কিনেও ফ্লাইট পাননি অনেকে। এর বড় উদাহরণ হলো মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা। 

বিদেশি এয়ারলাইনসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটের দামও বাড়তি। বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসের টাকা আটকে থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছরের জুনেও একবার পাওনা আদায়ের তাগিদ দিয়েছিল আইএটিএ। সে সময় সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, প্রায় ২১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে। 

বিদেশে এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল পরিমাণ ডলার আটকে থাকায় সামনের দিনগুলোতে এই ডলারের ভবিষ্যৎ মুনাফা ধরে দাম নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে। এমন শঙ্কা অ্যাভিয়েশন খাত-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এর মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়তে পারেন বাংলাদেশি যাত্রীরা। 

গত এপ্রিলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) জানায়, বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর পাওনা প্রায় ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। অবিলম্বে এ অর্থ পরিশোধের তাগাদাও দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহসভাপতি ফিলিপ গোহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে কৌশলী হওয়া দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

এটি সরকারের জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জও। তবে সময়মতো এবং কার্যকর পদ্ধতিতে দেনা পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিমান সংযোগ হ্রাস ঠেকানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে ঠিক রাখার জন্য এটি জরুরি।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে নতুন ফ্লাইট শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে। ডলার লেনদেনের এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। বিদেশি এয়ারলাইনস যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অপারেট করতে চায়, ডলারের এই লেনদেন দেখে তারা নিরুৎসায়িত হবে। 

বর্তমানে দেশে অ্যাভিয়েশন বাজারের ৮০ ভাগের নিয়ন্ত্রণই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর হাতে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম বেড়ে গেলে তা সামগ্রিকভাবে পুরো বাজারেই প্রভাব ফেলে। এতে সামনের দিনগুলোতে বেড়ে যেতে পারে আকাশ পথে ভ্রমণ ব্যয়। 

বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, বিমানের টিকিটের চাহিদার বিপরীতে আসন সংখ্যা বেশির ভাগ রুটেই কম রয়েছে। ফলে যখন চাহিদা একটু বেড়ে যায়, অর্থাৎ আসন আছে ১০০টি আর চাহিদা ১২০টি। 

তখন এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সুযোগে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিটগুলো কিনে স্টক করে। পরে সেগুলো তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। এর পাশাপাশি দেশে যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে, তাতে সামনের দিনে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি এয়ারলাইনস যারা এ দেশে পরিচালনা করছে কিন্তু মাসের পর মাস তারা টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষতি পোষাতে নানামুখী চেষ্টা করবে। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে তাদের কস্ট অব ফান্ড সমন্বয় করছে। সামগ্রিকভাবে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। 

এর ফলে বাংলাদেশ থেকে টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে। এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। সিন্ডিকেটমুক্ত রাখতে হবে। বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। যাতে সহজেই বিমানযাত্রীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট সংগ্রহ করতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসায়ী বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করুন

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০০ এএম
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করুন

নানা চ্যালেঞ্জে সামষ্টিক অর্থনীতি। প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনায় দূরদর্শিতার চরম অভাব। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, উন্নয়ন কর্মসূচির এই দুর্বলতার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কমপক্ষে ৩৫৭টি প্রকল্প ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হয়নি। আগামী এডিপিতে স্থান পেয়েছে ৫৭টি নতুন প্রকল্প। আগের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প আছে ১ হাজার ১৮৯টি। এর মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬ এবং পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৭৪৫টি। মোট প্রকল্প ১ হাজার ২৪৬। এবারে এডিপিতে নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৭টি। পূর্ববর্তী অর্থবছরে অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু বরাদ্দ পায়নি এমন আরও ৫১ প্রকল্প আগামী অর্থবছরের এডিপিতে  স্থান পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এডিপির প্রকল্পগুলোর ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রকল্প চারবার সংশোধিত হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বারবার বর্ধিত মেয়াদ পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা ৫১৮। 

আইএমইডির পরিচালক ড. মো. তায়েবুর রহমান এক গবেষণাপত্রে বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিলম্বের বড় কারণ পর্যাপ্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও অংশীজনের মতামতের অভাব। তার মতে, দ্বিতীয় বড় কারণ দুর্বল প্রকল্প ডকুমেন্ট এবং তৃতীয় কারণ ডিপিপিতে (ড্রাফট প্রজেক্ট  প্রপোজাল) কোনো এক্সিট প্ল্যান না থাকা। এসব কারণে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হয়। এতে বারবার সংশোধন ও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়।  

সিপিডি জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের এডিপিতে সাধারণ ও বিনিয়োগ প্রকল্পের বেশির ভাগই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বারবার একই প্রকল্প এডিপিতে স্থান পায়। মেয়াদ শেষ হয় কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয় না। কোনো কোনো প্রকল্প কোনো অর্থবছরে নামমাত্র বরাদ্দ পেয়ে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকল্পের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। ফলে জনগণ কিংবা রাষ্ট্র এসব প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্ব আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি ইঙ্গিত করে। এ নিয়ে অতীতেও অনেক কথা হয়েছে কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। সমস্যা হলো, একটি বিনিয়োগ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে না পারলে ব্যয় বাড়ে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিটার্ন পাওয়া যায় না। এটি তাৎক্ষণিক না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্প যদি সময়মতো সম্পন্ন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অংশ বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন করা হয়। সুতরাং এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ঋণের দায় ও ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ে। এটি মূল্যস্ফীতির উচ্চহার সৃষ্টি ও আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে, আগামী বাজেটের ঋণ পরিশোধে সরকার ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রেখেছে। সুতরাং ঋণের দায় ও চাপ বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ আরও ঘনীভূত হবে। ঋণের বিকল্প হলো সরকারের রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু সেটি সরকার করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের নজরদারির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে ওই প্রকল্পের অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রকল্প ডকুমেন্ট শক্তিশালী এবং ড্রাফট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) পরিকল্পনামাফিক করা, সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সে জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে হবে। সেটাই সবার প্রত্যাশা।

ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫১ এএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:৫১ এএম
ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে

সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করেছে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। 

এ বাজেটে সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে নানা ক্ষেত্রে করারোপে পরিবর্তন এনেছে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নতুন শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও যানবাহন আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। নতুন বাজেটে সে সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব কার্যকর হলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। বাজেটে শুল্ক আরোপের এ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

অর্থনীতিবিদরা বলেন, যেকোনো শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিকে প্রারম্ভিক ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদ্যোক্তারা যাতে কম খরচে শিল্প স্থাপন করতে পারেন, সে জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর সব দেশে এই নীতি অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশেও এতদিন মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু এবারের বাজেটে বিদ্যমান সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। 

ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, অর্থনীতিতে এমনিতেই মন্দা চলছে। এ অবস্থায় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হলে যারা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, তারা পিছু হটতে পারেন। এতে শিল্পায়ন ব্যাহত হবে। কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

কেননা বিনিয়োগ না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। এনবিআর সূত্র বলছে, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এটি রোধ করতে ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। 

এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশকে শামিল করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশে মোট ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইকোনমিক জোন স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানিয়েছে, সরকার এযাবৎ মোট ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ১১টি অঞ্চল ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। ২৯টির জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন। 

এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ৪১টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এবং বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব শিল্প হতে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। 

এই শিল্পসমূহে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রাইভেট ইকোনমিক জোন লাইসেন্স পেয়েছে এবং এই অঞ্চলসমূহে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে। 

ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিকে প্রারম্ভিক ব্যয় হিসেবে ধরে আমদানিতে শূন্য শুল্ক নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তা হলে উদ্যোক্তারা স্বল্প খরচে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। অন্যান্য দেশের এ-সংক্রান্ত নীতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজে যাতে আকৃষ্ট হতে পারেন এবং বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। 

নদীদূষণ রোধ প্রকল্পের কাজে গতি আনুন

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:২৭ এএম
নদীদূষণ রোধ প্রকল্পের কাজে গতি আনুন

বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর দূষণ রোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর নদীর চারপাশে বসবাসরত জনগণের জীবনযাত্রার মান ও পরিবেশগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন। ইতোমধ্যে দুবার সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়।

কিন্তু তাতেও কাজ শেষ হয়নি। এখন তৃতীয়বার সংশোধন করে ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে ৩৪ শতাংশ। সময় বাড়ানো হচ্ছে আরও এক বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। 

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দূষণরোধে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য প্রকল্পটি আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর তীর অবৈধ দখল রোধ করা, নদীর পানি দূষণ কমানো, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সরকার ২০১৮ সালের ২২ মে এই প্রকল্প প্রথমবারের মতো অনুমোদন দেয়। 

তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম সংশোধন করা হয়। তখন সময় বাড়ানো হয় এক বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকায় আনা হয়। এরপর আবারও সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় এক বছর। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করতে বলা হয়। 

কাজ দ্রুত শেষ করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আবার সময় বাড়ানো হয়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার জন্য সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সঙ্গে খরচও বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, অর্থাৎ মূল খরচ থেকে ৪২৮ কোটি টাকা বা ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। 

এ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ২৫ কিলোমিটার। যা ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগকে করেছে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অবৈধ দখলমুক্ত করা ও নদী রক্ষায় শক্তিশালী অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার অবৈধ স্থাপনা। উদ্ধার করা হয়েছে নদীর দখল করা প্রায় ৩৫০ একর জায়গা। 

ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় শেষ হয়েছে তিনটি পরিবেশবান্ধব ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ, যা নদীতীরে আসা মানুষকে সবুজ পরিবেশ পেতে সহায়তা করছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর চারপাশের নদীতীর রক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। 

নদীমাতৃক বাংলাদেশে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। বিশেষ করে রাজধানীর আশপাশের নদ-নদী ও খাল-বিলগুলো দখল হচ্ছে, সেই সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও পানির দূষণ বাড়ছে। নদীর তীরবর্তী সৌন্দর্য ও প্রায় হারাতে বসেছে। 

এসব নদীকে বাঁচাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নদীর দূষণরোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের গতিশীলতা আনতে হবে। সময় ও প্রকল্প ব্যয় দুটিই কমিয়ে আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১০:১০ এএম
চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত

ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের অর্জনের কথা তুলে ধরেন। এ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় ভারসাম্য রেখেছেন।

দুই দেশই বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও ১ কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পাশে থেকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। 

দল-মতনির্বিশেষে ভারতের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতকে দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বলেছেন, চীন থেকে শেখার আছে। তিনি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করার কথা বলেছেন। 

ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার, সেটা করে যাচ্ছে সরকার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে পরিচালনা করছেন তারই পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে। দেশের উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তার সুচিন্তিত ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ অনেক অগ্রসরমাণ। 

এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে এ দেশ। কূটনীতিতেও ইতিবাচক কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই তিন দিনের সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং যাবেন। মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি ভারত সফর করে এসেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায় নয়াদিল্লি। এ অবস্থায় সফরকালে নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে ঢাকার কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই ধরনের। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারত। অন্যদিকে সহযোগিতা ও ভূ-রাজনীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে একধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে ঢাকা। 

এ ছাড়া বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত-চীনের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ভারত চায় ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকুক। চীনের প্রত্যাশাও বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, চীন-ভারত উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশ ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেই চলছে। উভয় পক্ষের সংবেদনশীলতা ও স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকাকে এগোতে হবে। 

তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে যাদের প্রস্তাব বেশি লাভবান হবে, সেটাই বাংলাদেশ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে চীন-ভারত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবসম্মত বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।  প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশ সরকার দূরদর্শী চিন্তা দিয়ে এ দেশের মানুষের জন্য যেটি কল্যাণকর সেটিই করবে। প্রধানমন্ত্রী তার কূটনৈতিক কৌশল দিয়ে ইতোমধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন, এটাই প্রত্যাশা।