![মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন](uploads/2024/06/30/Editorial-1719723887.gif)
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে চলে মাদকের রমরমা কারবার। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নেশাদ্রব্য। তথ্য বলছে, প্রকাশ্যে বাদামের ডালায় গাঁজা সাজিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বিক্রির রমরমা কারবার চলে রাজধানীসহ দেশের অলিতে-গলিতে। অনেক সময় কারারক্ষীদের মাদক কারবারে জড়িত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। অসাধু একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা এবং ধরা পড়ার পর লঘুদণ্ডের কারণে কারারক্ষীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও বিভাগীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা যৎসামান্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বসে মাদকের হাট। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। এতে তেমন কোনো ফল আসছে না। কারণ মাদক কারবারিরা জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ করে। দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদকসেবীর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে মাদক কারবারে জড়িত নারীর সংখ্যা। তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। শিশু-কিশোর ও তরুণরা বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় অভিযানে ধরা পড়ছে মাদক কারবারিরা। সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিদিনই গ্রেপ্তার, মামলা ও শাস্তি হওয়ার পরও থেমে নেই মাদকের কারবার। রাজধানী ঢাকার সর্বত্র এখন মাদক বিক্রির স্পট।
রাজধানীর ছয়টি এলাকা মাদকের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রেড জোনে রয়েছে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মহাখালীর কড়াইল বস্তি, কালশী বিহারি ক্যাম্প, কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী। এ ছাড়া ইয়োলো ও গ্রিন জোনের তালিকায় রয়েছে পুরো রাজধানী।
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হয়ে ঢাকায় আসছে মাদক। সড়ক, নদী, সাগর ও আকাশপথে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে ঢুকছে মাদক। গবেষকরা বলছেন, একসময় হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন মাদকের বাজার দখলে নিয়েছে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ। বাংলাদেশে এখন এই দুই মাদকের চাহিদা তুঙ্গে। টিনএজরা সবচেয়ে বেশি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে বলেও গবেষণায় জানা যায়।
পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের একটি গবেষণায় বলা হয়, দেশে ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে খোদ রাজধানীতে ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। যদিও ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।
এ ছাড়া দেশে ৫৮ শতাংশ পথশিশু ড্যান্ডিসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত। ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই মাদক সেবন করে। তুলনামূলক সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে।
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগরে মোট মামলা হয়েছে ৬৮৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২২০টি। অর্থাৎ এই সময়ে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি এক-তৃতীয়াংশের কম।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ খবরের কাগজকে বলেন, সারা বিশ্বে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মাদকাসক্ত হয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। মাদক কারবারের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান, গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়ার মাধ্যমে মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মাদক কারবারে যারা জড়িত, তারা অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দেশ ও সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনকে সামাজিকভাবে মাদক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদক কারবারে যারা গডফাদার তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।