![ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না সুপারিচাষিরা](uploads/2023/11/01/1698829358.SUPARI.jpg)
ক্রেতা কম থাকায় সুপারির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না লক্ষ্মীপুরের সুপারিচাষিরা। কিছুদিন আগেও চাষিরা জেলার হাটবাজারগুলোয় আকারভেদে প্রতি পোন (৮০টি সুপারি) ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা প্রতি পোন সুপারি বর্তমানে ৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে সুপারি বিক্রি করে এ জেলার কৃষকরা প্রায় ৪শ কোটি টাকা আয় করেছেন।
গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে চাষিরা তাদের উৎপাদিত সুপারি অর্ধেক দামে বিক্রি করছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের সুপারিচাষি মো. সাইফুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানান, গত বছর জেলায় প্রতি পোন সুপারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হলেও চলতি বছর তারা সুপারির কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। সুপারির দাম কমে যাওয়ার প্রকৃত কোনো কারণ তার জানা নেই। বর্তমান মূল্যে সুপারি বিক্রি করে তিনি উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
আমান উল্যা নামের এক চাষি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন্যান্য বছর সুপারি বিক্রি করে আমার সংসার খরচ মিটলেও এবার একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, অপরদিকে সুপারির দাম কম হওয়ায় সংসার চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ৫ বছরে আমি কখনো এত কম দামে সুপারি বিক্রি করিনি।’
সদর উপজেলার মান্দারী বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া জানান, চলতি বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় ক্রেতা কমে গেছে। অপরদিকে স্থানীয় পর্যায়ে যারা সুপারি স্টক করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করে থাকেন, তারা এখনো সুপারি কেনা শুরু করেননি। তারা সুপারি কেনা শুরু করলে দাম আবারও বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের অবনতি হলে দাম বৃদ্ধি না পেয়ে বরং আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের যে কয়টি জেলায় সুপারির চাষ হয়, তার মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা শীর্ষে রয়েছে। জেলার সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারির চাষ ও উৎপাদন হয়। অপর দুটি উপজেলা রামগতি ও কমলনগর উপজেলায়ও সুপারির চাষ হয়ে থাকে। তবে এ দুই উপজেলায় সুপারির চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি সুপারিগাছ রোপণের পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু হয়।
একটি সুপারি গাছ ৪০ থেকে ৫০ বছর ফলন দিয়ে থাকে। শত বছর ধরে বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে পান-সুপারি খাওয়া জড়িয়ে আছে। অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম উপাদান পান। আর পান খেতে লাগে সুপারি। অনেকেই পান না খেলেও খাবার খাওয়ার পর সুপারি চিবুতে পছন্দ করেন।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড. জাকির হোসেন খবরের কাগজকে জানান, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়ে থাকে। বাড়ির উঠান, পরিত্যক্ত উঁচু জমিতে সুপারির চাষ হয়ে থাকে। লক্ষ্মীপুর শহর, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, হায়দারগঞ্জ বাজার সুপারি কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত। এসব বাজারে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যান। জেলার বড় ব্যবসায়ীরাও স্থানীয়ভাবে সুপারি কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুরের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠান।