নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে না খুলতে না কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকেরা। টানা তৃতীয় দিনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির প্রথম দিনের ওই কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা।
এছাড়া ঢাবিসহ দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনে অংশ নিচ্ছেন বলে দাবি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিবের।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আহ্বানে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। একই সঙ্গে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। যদিও পুরো সময়জুড়ে পরীক্ষাসমূহ ওই কর্মসূচীর আওতামুক্ত ছিল।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুইয়া বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমরা আজ অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি, আগামীকাল এবং পরশু দিনও করব। এর মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী ৩০ জুন আমরা পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করা হবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হয় তাহলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মসূচি শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় প্রভোস্টরা হলে যাবেন না, বিভাগে শিক্ষকেরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না। বিভিন্ন ইন্সটিউটসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কর্মবিরতিতে থাকবেন। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ষড়যন্ত্রমূলক। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা শিক্ষকরা সর্বোচ্চ পরিশ্রম করি, যেটার নায্য পারিশ্রমিক আমরা পাই না। তারপরেও বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু গত মার্চ মাসে ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা শূন্যের কোঠায় আনা হয়েছে। যেটা আমাদের মৌলিক চাহিদার পরিপন্থি। অবিলম্বে এ বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য ড. ওহিদ্দুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. সামাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই কর্ম বিরতি থাকবে ২৭ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি থাকবে এবং দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের করবে শিক্ষকরা। এদিকে ২৪ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সূত্রে জানা যায় দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে ওই কর্মসূচি পালন করবেন।
এছাড়া আগামী ৩০ জুন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করার কথা জানানো হয়েছে, যদিও ওই সময় জুড়ে পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এদিকে ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং ক্লাস, পরীক্ষা, দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে, বলে শিক্ষক ফেডারেশনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগেও একই দাবি কয়েক দফা কর্মবিরতি পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরসহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেন। এদিকে গত ১৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কতৃর্ক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ জুলাই তারিখের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।
আরিফ জাওয়াদ/এমএ/