![নরসিংদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা, আহত ২](uploads/2024/05/29/narshindi-1716955057.jpg)
নরসিংদীর মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরও দুজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাত পৌনে ১২টার দিকে মাধবদী থানার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগিরথপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মাহবুবুল হাসান ভগিরথপুর গ্রামের হাজী ইমাম উদ্দিনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতে ভগিরথপুর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার চেয়ারম্যান মার্কেটে অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ৮ থেকে ১০ জন দলীয় নেতা-কর্মীকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মাহবুবুল হাসান। পথে ৭ থেকে ৮ জন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা করে।
এ সময় গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মাহবুবুল হাসান (৪০), ভগিরথপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শ্রমিক লীগ নেতা সাঈদ হাসান পাপ্পু (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৩২) আহত হন।
স্থানীয়রা আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন।
আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহতের সমর্থক স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সদ্যনির্বাচিত সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের হাত ধরে মাহবুবুল হাসান ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৬ সালে সর্বকনিষ্ঠ জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
এবার সদর উপজেলা নির্বাচনের মাহবুবুল হাসান আনোয়ার হোসেনের বিজয়ের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। অনেকে মনে করছেন নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বলি হয়েছেন মাহবুবুল হাসান।
মাহবুব চেয়ারম্যানের ছোট ভাই হাফিজুল হাসান ও হাফেজ মো. অলিউল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভাইয়ের জনপ্রিয়তার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার প্রতিপক্ষের লোকরা ভয় পেয়েছে, কারণ তিনি বেঁচে থাকলে আগামী নির্বাচনে তারা বিজয়ী হতে পারবে না। তারা বহুবার ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। তারা ভাইয়ের জন্য মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি করতে পারে না। এজন্য তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাই হত্যার বিচার চাচ্ছি। এই হত্যার বিচার না হলে ভালো মানুষরা জনগণের সেবা করতে আসবে না।’
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রবিন মিয়া ও ইমন মিয়া জানান, দলীয় কার্যালয় থেকে মাহবুবুল হাসানসহ তারা বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সামনে থাকা বালুর ট্রাকের ৭ থেকে ৮ জন অস্ত্রধারী চিহ্নিত দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাহবুবুল হাসানকে কোপাতে থাকে। এ সময় মাহবুবুল হাসানের সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে বাঁচাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফরহাদ ও পাপ্পু আহত হয়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) মাহমুদুল কবীর বাশার বলেন, রাত পৌনে ১টার দিকে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহবুবুল হাসানসহ তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। মাহবুব হাসানের ঘাড়ে বড় ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলির বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
সাবেক চেয়ারম্যান হত্যার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, সাবেক এই চেয়ারম্যানকে হত্যার পর পুলিশ ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে চেষ্টা করছে। পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
শাওন খন্দকার/ইসরাত চৈতী/অমিয়/