ভারতের সঙ্গে একতরফা দেশ স্বার্থ বিরোধী সমঝোতা স্মারক বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেছে ৬ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। জোটের শীর্ষ নেতারা বলেন, বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার বিনিময় হিসেবে এইসব সমঝোতায় স্বাক্ষর করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ও নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টিকারী সমঝোতা স্বাক্ষরের প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ সমাবেশ নেতারা এসব কথা বলেন। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
ভাসানী অনুসারী পরষিদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে এবং দলের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমম্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র সহ সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
সমাবেশের নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ট্রানজিটের নামে রেল করিডোর প্রদান, বন্দর ব্যবহার, যৌথ স্যাটেলাইট, সামরিক খাতে সহযোগিতাসহ সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার নয়। এসব একপেশে ও ভারসাম্যহীন সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের পরিচালনায় ভারতের কর্তৃত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে। মূলত ‘ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কি হচ্ছে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তারা বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বের সক্ষমতা হারিয়ে কেবল গদি রক্ষার স্বার্থে সবকিছুতে রাজি হচ্ছে সরকার। সেজন্যে আজ বাংলাদেশের স্বার্থ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা বন্ধ কিংবা বিপুল বাণিজ্য ঘাটতিতে অশুল্ক বাধা দূর করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ কোনটিই যথার্থ কোন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে না।
'বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে ভারতের কোন আপত্তি নেই' পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রী কোন দেশ সফর করবেন, সেটা অন্য দেশের অনুমতির অপেক্ষা রাখে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেশের সার্বভৌম মর্যাদার বাস্তব পরিণতি কোথায় দাঁড়িয়েছে সে গোমর ফাঁস করে দিয়েছে। ভোটবিহীন এই সরকারের কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা যে বিপর্যস্ত সেটা আবার নতুন করে সামনে এল।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান ছাত্রদের আন্দোলন এবং বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান নেতৃবৃন্দ। অবিলম্বে দাবি মেনে নেওয়া আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, অবৈধ সরকার যে কোন আন্দোলনে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলনকে বিরোধীদলের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা সরকারের প্রলাপ বকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সমাবেশে বক্তাগণ স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকতে হলে এই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর দরকার। বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের মধ্য দিয়েই বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হতে হবে। আর এর প্রথম পদক্ষেপ হলো জনসম্মতিহীন অবৈধ ডামি সরকারের বিদায় ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। নেতৃবৃন্দ স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে সেই পথে বাংলাদেশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে বিজয়ী করতে জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।