![দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন](uploads/2024/07/03/Editorial-1719981720.gif)
দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের সর্বত্র আলোচনা চলছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য বিদায়ী সদস্য মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে আসে।
এমনকি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানোর পরও দুর্নীতি কমেনি। সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করার দাবি করছে অনেকেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যে-ই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব। সরকারের দৃঢ় অবস্থানে আতঙ্কে মন্ত্রী-এমপিরাও। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ব্যক্তির দায় সরকার কোনোভাবেই বহন করবে না।
উচ্চমাত্রায় দুর্নীতি কমাতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং হালনাগাদ করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ বিষয়ে আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল নিশ্চিত করতে পারলে অপরাধ ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান ১৯৭৯ সালে চালু করা হয়। দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবী আছেন। তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে আচরণ বিধিমালায় এ নিয়ম যুক্ত করা হয়।
কিন্তু চার দশক ধরে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু ৪৩ বছর আগের এই বিধানকে মানছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা।
আচরণবিধি অনুযায়ী সব সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যাদের টিআইএন আছে এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদধারী কিংবা গাড়ি-বাড়ি আছে এমন চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। আয়কর রিটার্নে সম্পদের হিসাব বিবরণীর তথ্য থাকে। যদি কেউ না দিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করা হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ভয়ভীতি কাজ করবে। এতে করে দুর্নীতি কমবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত- এমন সাইনবোর্ড দেখা গেলেও অনেক অফিসে এর আড়ালে চলে ব্যাপক দুর্নীতি। শুধু সম্পদের হিসাব জমা দিলেই হবে না। দুর্নীতিবাজরা অনেকে নিজের নামে সম্পদ করে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা দুর্নীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে কাজের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দুর্নীতিবাজদের খুঁজে তালিকা করে বরখাস্ত এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। মাদকের মতো দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন এবং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।