ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪২ এএম
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের সর্বত্র আলোচনা চলছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য বিদায়ী সদস্য মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে আসে। 

এমনকি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানোর পরও দুর্নীতি কমেনি। সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করার দাবি করছে অনেকেই। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যে-ই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব। সরকারের দৃঢ় অবস্থানে আতঙ্কে মন্ত্রী-এমপিরাও। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ব্যক্তির দায় সরকার কোনোভাবেই বহন করবে না। 

উচ্চমাত্রায় দুর্নীতি কমাতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং হালনাগাদ করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ বিষয়ে আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল নিশ্চিত করতে পারলে অপরাধ ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে। 

সরকারি চাকরিজীবীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান ১৯৭৯ সালে চালু করা হয়। দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবী আছেন। তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে আচরণ বিধিমালায় এ নিয়ম যুক্ত করা হয়। 

কিন্তু চার দশক ধরে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীর প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু ৪৩ বছর আগের এই বিধানকে মানছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। 

আচরণবিধি অনুযায়ী সব সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যাদের টিআইএন আছে এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদধারী কিংবা গাড়ি-বাড়ি আছে এমন চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। আয়কর রিটার্নে সম্পদের হিসাব বিবরণীর তথ্য থাকে। যদি কেউ না দিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করা হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ভয়ভীতি কাজ করবে। এতে করে দুর্নীতি কমবে। 

দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত- এমন সাইনবোর্ড দেখা গেলেও অনেক অফিসে এর আড়ালে চলে ব্যাপক দুর্নীতি। শুধু সম্পদের হিসাব জমা দিলেই হবে না। দুর্নীতিবাজরা অনেকে নিজের নামে সম্পদ করে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা দুর্নীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে কাজের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দুর্নীতিবাজদের খুঁজে তালিকা করে বরখাস্ত এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারলে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। মাদকের মতো দুর্নীতিকে ‘না’ বলুন এবং এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।

তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়াতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়াতে পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতে রপ্তানি কমেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালিতে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। 

এর মধ্যে আবার অন্য বাজারগুলোতেও রপ্তানি কমে যাওয়ায় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। মূলত যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় ক্রয় আদেশ কমছে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

পাঁচ মাসের ব্যবধানে আবারও রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। গত রবিবার এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। একাধিক খাতের রপ্তানিকারক বলছেন, একদিকে ব্যবসার খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে প্রণোদনা কমছে। এতে পণ্য রপ্তানিতে দেশীয় কারখানাগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। তাতে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা আছে। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে সার্বিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত এবং যুক্তরাজ্য ও নতুন বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তবে বেশ কয়েকটি বড় বাজারে রপ্তানি কমেছে। ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি ও ইতালি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে আগের অর্থবছরের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এ সময়ে জার্মানির বাজারে ৫৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে ইতালির বাজারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ কম। 

ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়েছে ইইউ। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কম। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালিতে নয়, বরং নতুন বাজার ভারতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ভারতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। 

উদ্যোক্তারা বলছেন, এটা কমে যাওয়ার পেছনে দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু কারণ রয়েছে। আর তা হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের চরম সংকট। এই সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্রেতাদের কাছে যথাসময়ে পোশাক পাঠানো যাচ্ছে না। এ কারণে তারা বাংলাদেশের কোম্পানির পরিবর্তে অন্য দেশ থেকে পোশাক কিনছে। কাস্টমসের হয়রানির ফলেও শিপমেন্ট বিলম্বিত হচ্ছে। এটাও রপ্তানি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। 

সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চরম অসহযোগিতাও চলছে। সময়মতো ব্যাক টু ব্যাক এলসি করছে না। এ ছাড়া ক্রেতা দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা পণ্যের যথার্থ দাম পাচ্ছি না। কারণ শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না। তারা যে দাম দিচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে আমরা সে দামে ক্রয় আদেশ নিতে পারছি না। এসব সমস্যার কারণে রপ্তানি কমেছে বলে মনে করছেন তারা। 

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মো. রেজাউল আলম খবরের কাগজকে বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এই মন্দার কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই রপ্তানি কমছে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে আমাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে। এটা সত্য যে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে লিড টাইম বেড়ে গেছে। সে কারণে আমাদের কিছু ক্রেতা অন্য দেশে চলে গেছে। 

তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি বাড়াতে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ খাতে বিদেশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট কমিয়ে আনতে হবে। কাস্টমস এবং ব্যাংকের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান এই খাতকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সম্ভাবনাময় খাতটি আরও গতিশীল হোক, সেটিই প্রত্যাশা।

প্রত্যয় স্কিম: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:০২ এএম
প্রত্যয় স্কিম: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কর্মসূচিটি ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের সুবিধা কমবে। ব্যবস্থাটি বৈষম্যমূলক ও তাদের জন্য অবমাননাকর। 

নতুনদের জন্য তারা এ আন্দোলন করছে। বাকি দুই দাবি হলো শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি। সরকার বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪০০টির মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয় কর্মসূচির আওতায় পেনশন দেওয়া হবে। 

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই স্বল্প সময়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক।

২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সেবক নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। 

যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসংগত সমাধান করা উচিত। 

সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। সবাই এর আওতায় আসবেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সিস্টেম আছে। সেটা চিন্তা করেই আমাদের এখানে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটা পর্যায়ে সবাইকে এ কর্মসূচির আওতায় আসতে হবে। 

এ বছর শিক্ষকরা আসছেন। আগামী বছর থেকে সরকারি কর্মচারীরাও এর আওতায় আসবেন। বেসরকারি পর্যায়ে নির্দিষ্ট প্যাকেজই রয়েছে। সব উন্নত রাষ্ট্রেই বার্ধক্যকে এ ধরনের নিরাপত্তামূলক আর্থিক কর্মসূচি দিয়ে সেফগার্ড দেওয়া হয়। 

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাবির সাবেক উপাচার্য এ আজাদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, শিক্ষকদের সবার সঙ্গে মেশানো হলো আর আমলাদের আলাদা করে রাখা হলো। এতে একটা অনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই হিসেবে তো আমি এটা সমর্থন করতে পারি না। সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করায় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এটা তো সংশোধন করা যায়। আমার মনে হয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। 

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। বর্তমান চলমান সংকট নিরসন দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। তা না হলে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় একধরনের নৈরাজ্য তৈরি হবে। ছাত্রছাত্রীরা সেশনজটে পড়বেন। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক, সেটিই প্রত্যাশা।

বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে

বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল ডলার আটকে থাকা এবং সিন্ডিকেটের কারণে চাহিদা বাড়লে লাগামছাড়া হয়ে উঠছে বিমানের টিকিটের দাম। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। যদি সেটা কয়েক গুণ বেড়ে যায় তখন তা সবার নজরে পড়ে। বিমান টিকিটের বেলায় যাত্রীরা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সম্প্রতি। ৩০ হাজার টাকার টিকিট লাখ টাকায় কিনেও ফ্লাইট পাননি অনেকে। এর বড় উদাহরণ হলো মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা। 

বিদেশি এয়ারলাইনসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটের দামও বাড়তি। বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসের টাকা আটকে থাকার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছরের জুনেও একবার পাওনা আদায়ের তাগিদ দিয়েছিল আইএটিএ। সে সময় সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, প্রায় ২১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে। 

বিদেশে এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল পরিমাণ ডলার আটকে থাকায় সামনের দিনগুলোতে এই ডলারের ভবিষ্যৎ মুনাফা ধরে দাম নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে। এমন শঙ্কা অ্যাভিয়েশন খাত-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এর মধ্যে কয়েকটি এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়তে পারেন বাংলাদেশি যাত্রীরা। 

গত এপ্রিলে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) জানায়, বাংলাদেশের বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর পাওনা প্রায় ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। অবিলম্বে এ অর্থ পরিশোধের তাগাদাও দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহসভাপতি ফিলিপ গোহকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে কৌশলী হওয়া দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

এটি সরকারের জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জও। তবে সময়মতো এবং কার্যকর পদ্ধতিতে দেনা পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিমান সংযোগ হ্রাস ঠেকানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে ঠিক রাখার জন্য এটি জরুরি।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে নতুন ফ্লাইট শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে। ডলার লেনদেনের এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। বিদেশি এয়ারলাইনস যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অপারেট করতে চায়, ডলারের এই লেনদেন দেখে তারা নিরুৎসায়িত হবে। 

বর্তমানে দেশে অ্যাভিয়েশন বাজারের ৮০ ভাগের নিয়ন্ত্রণই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর হাতে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম বেড়ে গেলে তা সামগ্রিকভাবে পুরো বাজারেই প্রভাব ফেলে। এতে সামনের দিনগুলোতে বেড়ে যেতে পারে আকাশ পথে ভ্রমণ ব্যয়। 

বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, বিমানের টিকিটের চাহিদার বিপরীতে আসন সংখ্যা বেশির ভাগ রুটেই কম রয়েছে। ফলে যখন চাহিদা একটু বেড়ে যায়, অর্থাৎ আসন আছে ১০০টি আর চাহিদা ১২০টি। 

তখন এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সুযোগে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিটগুলো কিনে স্টক করে। পরে সেগুলো তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। এর পাশাপাশি দেশে যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে, তাতে সামনের দিনে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি এয়ারলাইনস যারা এ দেশে পরিচালনা করছে কিন্তু মাসের পর মাস তারা টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষতি পোষাতে নানামুখী চেষ্টা করবে। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে তাদের কস্ট অব ফান্ড সমন্বয় করছে। সামগ্রিকভাবে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। 

এর ফলে বাংলাদেশ থেকে টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে। এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। সিন্ডিকেটমুক্ত রাখতে হবে। বিমান টিকিটের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। যাতে সহজেই বিমানযাত্রীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট সংগ্রহ করতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসায়ী বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করুন

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০০ এএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:০০ এএম
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করুন

নানা চ্যালেঞ্জে সামষ্টিক অর্থনীতি। প্রকল্প গ্রহণ ও পরিচালনায় দূরদর্শিতার চরম অভাব। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, উন্নয়ন কর্মসূচির এই দুর্বলতার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কমপক্ষে ৩৫৭টি প্রকল্প ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হয়নি। আগামী এডিপিতে স্থান পেয়েছে ৫৭টি নতুন প্রকল্প। আগের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প আছে ১ হাজার ১৮৯টি। এর মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬ এবং পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৭৪৫টি। মোট প্রকল্প ১ হাজার ২৪৬। এবারে এডিপিতে নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৭টি। পূর্ববর্তী অর্থবছরে অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু বরাদ্দ পায়নি এমন আরও ৫১ প্রকল্প আগামী অর্থবছরের এডিপিতে  স্থান পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এডিপির প্রকল্পগুলোর ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রকল্প চারবার সংশোধিত হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বারবার বর্ধিত মেয়াদ পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা ৫১৮। 

আইএমইডির পরিচালক ড. মো. তায়েবুর রহমান এক গবেষণাপত্রে বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিলম্বের বড় কারণ পর্যাপ্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও অংশীজনের মতামতের অভাব। তার মতে, দ্বিতীয় বড় কারণ দুর্বল প্রকল্প ডকুমেন্ট এবং তৃতীয় কারণ ডিপিপিতে (ড্রাফট প্রজেক্ট  প্রপোজাল) কোনো এক্সিট প্ল্যান না থাকা। এসব কারণে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হয়। এতে বারবার সংশোধন ও সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়।  

সিপিডি জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটের এডিপিতে সাধারণ ও বিনিয়োগ প্রকল্পের বেশির ভাগই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বারবার একই প্রকল্প এডিপিতে স্থান পায়। মেয়াদ শেষ হয় কিন্তু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয় না। কোনো কোনো প্রকল্প কোনো অর্থবছরে নামমাত্র বরাদ্দ পেয়ে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকল্পের পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। ফলে জনগণ কিংবা রাষ্ট্র এসব প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছর এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নানা রকম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বা বিলম্ব আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি ইঙ্গিত করে। এ নিয়ে অতীতেও অনেক কথা হয়েছে কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। সমস্যা হলো, একটি বিনিয়োগ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে না পারলে ব্যয় বাড়ে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিটার্ন পাওয়া যায় না। এটি তাৎক্ষণিক না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্প যদি সময়মতো সম্পন্ন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় হয় এবং জনগণ প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন খবরের কাগজকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অংশ বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন করা হয়। সুতরাং এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ঋণের দায় ও ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ে। এটি মূল্যস্ফীতির উচ্চহার সৃষ্টি ও আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি যে, আগামী বাজেটের ঋণ পরিশোধে সরকার ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রেখেছে। সুতরাং ঋণের দায় ও চাপ বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ আরও ঘনীভূত হবে। ঋণের বিকল্প হলো সরকারের রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু সেটি সরকার করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের নজরদারির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে ওই প্রকল্পের অংশীজনের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রকল্প ডকুমেন্ট শক্তিশালী এবং ড্রাফট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) পরিকল্পনামাফিক করা, সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সে জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করতে হবে। সেটাই সবার প্রত্যাশা।

মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৪ এএম
মাদক কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে চলে মাদকের রমরমা কারবার। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নেশাদ্রব্য। তথ্য বলছে, প্রকাশ্যে বাদামের ডালায় গাঁজা সাজিয়ে সকাল-সন্ধ্যা বিক্রির রমরমা কারবার চলে রাজধানীসহ দেশের অলিতে-গলিতে। অনেক সময় কারারক্ষীদের মাদক কারবারে জড়িত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। অসাধু একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা এবং ধরা পড়ার পর লঘুদণ্ডের কারণে কারারক্ষীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। 

জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও বিভাগীয় যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা যৎসামান্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বসে মাদকের হাট। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। এতে তেমন কোনো ফল আসছে না। কারণ মাদক কারবারিরা জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ করে। দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারী মাদকসেবীর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে মাদক কারবারে জড়িত নারীর সংখ্যা। তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। শিশু-কিশোর ও তরুণরা বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় অভিযানে ধরা পড়ছে মাদক কারবারিরা। সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিদিনই গ্রেপ্তার, মামলা ও শাস্তি হওয়ার পরও থেমে নেই মাদকের কারবার। রাজধানী ঢাকার সর্বত্র এখন মাদক বিক্রির স্পট। 

রাজধানীর ছয়টি এলাকা মাদকের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রেড জোনে রয়েছে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মহাখালীর কড়াইল বস্তি, কালশী বিহারি ক্যাম্প, কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী। এ ছাড়া ইয়োলো ও গ্রিন জোনের তালিকায় রয়েছে পুরো রাজধানী। 

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা হয়ে ঢাকায় আসছে মাদক। সড়ক, নদী, সাগর ও আকাশপথে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে ঢুকছে মাদক। গবেষকরা বলছেন, একসময় হেরোইন ও ফেনসিডিলের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন মাদকের বাজার দখলে নিয়েছে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ। বাংলাদেশে এখন এই দুই মাদকের চাহিদা তুঙ্গে। টিনএজরা সবচেয়ে বেশি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে বলেও গবেষণায় জানা যায়।

পথশিশুদের একটি বড় অংশ মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের একটি গবেষণায় বলা হয়, দেশে ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে খোদ রাজধানীতে ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। যদিও ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। 

এ ছাড়া দেশে ৫৮ শতাংশ পথশিশু ড্যান্ডিসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত। ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই মাদক সেবন করে। তুলনামূলক সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। 
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগরে মোট মামলা হয়েছে ৬৮৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২২০টি। অর্থাৎ এই সময়ে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি এক-তৃতীয়াংশের কম। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ খবরের কাগজকে বলেন, সারা বিশ্বে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মাদকাসক্ত হয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। মাদক কারবারের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান, গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়ার মাধ্যমে মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

মাদক কারবারে যারা জড়িত, তারা অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। দেশ ও সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনকে সামাজিকভাবে মাদক প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদক কারবারে যারা গডফাদার তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।