![চাকরির প্রলোভনে ভারতে নিয়ে হাতিয়ে নিত কিডনি, গ্রেপ্তার ৩](uploads/2024/05/13/Kidney-1715586053.jpg)
দরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভনে ভারতে নিয়ে টাকার লোভসহ নানা কৌশলে হাতিয়ে নিত কিডনি। চক্রটি এখন পর্যন্ত দেশ থেকে ১০জন ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামে এক ভুক্তভোগী মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ১০ ও ১১ মে ধানমন্ডি ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে ও বাগেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, মো.রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো.আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)।
এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরেফ মোস্তফাসহ (৩৭) ১০-১২ জন।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দেশের দরিদ্র মানুষকে ভালো চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে ভারতে নিয়ে নানা কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নিত। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নেওয়া হয়। পরে তাকে নানা কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করায়। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাকে ছয় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে দেয় তিন লাখ টাকা।
রবিবার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন।
মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের কোনো এক তারিখে মিরপুর-১০নং শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। এই কথাবার্তা চলাকালে পাশে বসা অভিযুক্ত পলাতক আসামি মাছুমও চা পান করছিলেন। এসব কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই ভিকটিমকে বলেন, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং ওই প্রতিষ্ঠানে সে রবিনকে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো রবিনের। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হন রবিন।
তিনি বলেন, পরবর্তী সময় মাছুম ভিকটিম রবিনকে বলেন, ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ভিকটিমকে নিয়ে যায় মাছুম। সেখানে ভিকটিমের সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামি মো. রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে আসামিরা ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয় ভারতের ভিসার জন্য।
ভিসা পাওয়ার পর ভিকটিমকে মাছুম ও মো. রাজু হাওলাদার গ্রেপ্তার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার। বাংলাদেশ ও ভারতে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে বলে ভিকটিমকে জানায় আসামিরা।
পরবর্তী সময় ভিকটিমকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করে পলাতক আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। তারা ভিকটিমের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে ভিকটিমকে ফরিদাবাদ নামে একটি এলাকায় রাখা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অর্থের প্রলোভন ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হসপিটালে অস্ত্রোপরের মাধ্যমে ভিকটিমের একটি কিডনি নেওয়া হয়।
হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে ভিকটিম জানতে পারেন তার কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। এক পর্যায়ে দালাল চক্র ভিকটিমকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা দেয়। দেশে ফিরে ভিকটিম বুঝতে পারেন বড় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে তিনি কিডনি হারিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এ পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি চক্রটি এখন পর্যন্ত ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া তাদের পাইপলাইনে আরও পাঁচ থেকে ছয়জন আছে বলে জানতে পেরেছি।