ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

দুরন্ত ছড়া: বাঙলা ভাষা

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
দুরন্ত ছড়া: বাঙলা ভাষা
এঁকেছেন মুবাশ্বশিরা মুস্তারিন মম

বাঙলা ভাষা
বিজন বেপারী 

 

বাঙলা ভাষার গৌরব গাথা 
বিশ্ব ভুবন জানে
বাঙলা আমার অর্জিত ধন
সব বাঙালি মানে।

বাঙলা ভাষায় লালন হাচন
রবীন্দ্রনাথ জ্বলে 
সেই ভাষার‌ই সম্মান রাখে
রফিক শফিক দলে।

উনিশ শতক বায়ান্ন সাল
একুশে ফেব্রুয়ারি 
ঝরল রক্ত সেই দিনটাকে 
কেমনে ভুলতে পারি?

 

 

 


প্রাণের বাংলা ভাষা
জহিরুল হক বিদ্যুৎ

 

মায়ের মতো মধুর আমার
প্রাণের বাংলা ভাষা,
এই ভাষাতেই পুরাই মনের
সকল স্বপন আশা।

সুখ ও দুঃখ হাসি-কান্না
এই ভাষাতেই গাথা,
মাতৃভাষার গৌরবে আজ
হয় যে উঁচু মাথা।

দোয়েল টিয়া ফিঙে শ্যামা
বাংলাতে গায় গান,
এই ভাষারই দেশের গানে
জুড়ায় মন ও প্রাণ।

সালাম রফিক বরকতেরা
বাংলা ভাষার তরে,
বায়ান্নতে বুক পেতে সব
বীরের মতো মরে।

এই ভাষাতেই বাঁচার স্বপন
এই ভাষাতে মরণ,
রাখব ধরে ভাষারই মান
করব তাদের স্মরণ।

 

 

বই মেলায় যাবে খুকি 
শেখ সোহেল রেজা

 

বাবার সাথে যাবে খুকি 
ঘুরবে বই মেলায়
ছড়ার বই কিনে খুকি 
ফিরবে সন্ধ্যা বেলায়।

কত রকম ছড়ার বই
কিনে খুকি ধন্য
গল্পের বই কিনবে খুকি 
ছোট বোনের জন্য।

বই মেলায় ঘুরে খুকি 
দেখছে ছড়ার বই
ছড়ার বই কিনে খুকি 
করে হইচই।

 

 


বই মেলাতে যাই
কাব্য কবির

 

ইতু, মিতু, রাজু চলো 
বই মেলাতে যাই,
নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে
তৃপ্তি মনে পাই।

বই মেলাতে যায় যে পাওয়া
মজার ছড়ার বই,
মলি, কলি, ওরাও যাবে
বীণা গেল কই?

বই পড়লে বাড়ে জ্ঞান
গুণিজনা কয়
চিরদিনই এই কথাটির
একটুও নেই ক্ষয়।

বই পড়ব মানুষ হব
গড়ব সোনার দেশ,
জ্ঞানের আলোয় আলোকিত
রাখব পরিবেশ।

 

দুরন্ত ছড়া: খোকা খুকির হাসি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
দুরন্ত ছড়া: খোকা খুকির হাসি
এঁকেছে রেসতিনা ইবনাত

খোকা খুকির হাসি
সাঈদুর রহমান লিটন 

খোকা হাসে খুকি হাসে 
টুপি মাথায় দিয়ে,
খোকা খুকির হাসি দেখে
হাসে গাছে টিয়ে।

খুশির নদী বাঁধ ভেঙেছে
সবাই দিশেহারা
খুশির জোয়ার ভেসে গেছে
শহর, নগর পাড়া।

চাঁদের হাসি দেখে ওরা
আরও বেশি হাসে,
প্রভাত বেলা সূর্যি মামা
হাসে দূর্বাঘাসে।

 


বক কাব্য
শ্যামল বণিক অঞ্জন

কাঁঠাল গাছে বকের বাসায় তিনটি ছানা ফুটল, 
হঠাৎ করেই সন্ধ্যা বেলা প্রচণ্ড ঝড় উঠল!
বাসা ভেঙে ছানাগুলো মাটিতে যে পড়ল
আঘাত তিনটি ছানাই অকালে তো মরল!
মা পাখিটা শোকে কাতর হয়ে কেঁদে চলল,
চলো যাব ঝড় ছাড়া দেশ, বক বাবাটা বলল।
মা বক কয়, আঁধার কেটে আসবে দেখো আলো,
ঝড়ঝঞ্ঝা হোক বৃষ্টি তবু এ দেশ ভালো।
এই দেশেতে আছে অনেক নদীনালা ডোবা,
আছে সেথায় ব্যাঙ মাছ আর খাদ্য মনোলোভা!

 


রাজকুমারীর বিয়ে
খালিদ বিন ওয়ালিদ

তাক ডুমা ডুম, তাক ডুমা ডুম
বেজায় খুশির ধুম,
তাক ডুমা ডুম, তাক ডুমা ডুম
নেই চোখে আজ ঘুম।

রাজকুমারীর বিয়ে
সোনার পালকি নিয়ে
যাবে সে আজ রূপনগরে,
ঘোমটা মাথায় দিয়ে।

হইহুল্লোড়, হইহুল্লোড়
বর এসেছে ঘরে,
বর এসেছে টোপর পরে
ঘোড়ার পিঠে চড়ে।

 


বানর কাণ্ড
মো. দিদারুল ইসলাম 

দুষ্টু বানর নাচে মশগুল মগডালেতে উঠি,
বনের পাখি বিরক্ত সব, করে ছোটাছুটি।

হাতির পিঠে চড়ে বানর দেয় যে কানে মলা,
মনের সুখে একে একে গিলে পাকা কলা।

বানর বেটা কূট-কৌশলী, বুদ্ধি বেজায় খাসা,
বাঘ মামাকে সঙ্গে নিয়ে, ভাঙে সিংহের বাসা।

বানর মশাই এই তল্লাটের, সবার নাকি রাজা,
তার আদেশে না চলিলে, দেয় সে কঠিন সাজা।

বানর বেটার সঙ্গী শেয়াল, আরও আছে গোখরা
ভয়ে থাকে নিরীহের দল, প্রায়শই খায় তাড়া।

 


ফাগুনের রূপ
এম আব্দুল হালীম বাচ্চু

ফাগুন হাওয়ায় আগুন জ্বলে
শিমুল পলাশ ফুলে
কোকিলেরা কোথায় গেল
গান কি গেছে ভুলে?

কোকিলের গান শোনার আশায়
পেতে রাখি কান
তবু কোকিল কেন যেন
গায় না মধুর গান!

চৈতি হাওয়া বইছে যেন
গাছগাছালি বনে
ঝরছে পাতা দলে দলে
সুখ নেই তবু মনে!

ফাগুনের সেই গীতিময় দিন
আগের মতো নেই
ফাগুন ফাগুন লাগছে কেবল
আমের মুকুলেই।

কাগজের ফুল-পাখি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
কাগজের ফুল-পাখি
ওরিগামি

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই কাগজ নিয়ে খেলতে অনেক ভালোবাসো? তোমরা কি জানো কাগজে কেবল আঁকাআঁকি নয়, কাগজ ভাঁজ করেও তৈরি করা যায় নানা আকৃতির জিনিস। আর এটাকে জাপানিরা নাম দিয়েছে ওরিগামি। জাপানি শব্দ Ori মানে হলো ভাঁজ আর Kami মানে হলো কাগজ। সময়ের সঙ্গে Kami শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে Gami হয়ে যায়। সাধারণত কাগজকে কোনো ধরনের কাটা, ছেঁড়া, পিন বা আঠা লাগানো ছাড়া শুধু ভাঁজ করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়ার এই কাজটিকে বলা হয় Origami। 
ধারণা করা হয় জাপানে ওরিগামির চর্চা শুরু হয় ১৬০৩ সালে। তারপর এই চর্চা কেবল জাপানে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এক খণ্ড কাগজ আদৌ না কেটে এবং কোনোরকম আঠা ব্যবহার না করে শুধু ভাঁজ করে জীবজন্তু, পাখি ইত্যাদির রূপ দেওয়া হয় অরিগামিতে। অল্প কয়েকটি সরল ভাঁজের মাধ্যমে ওরিগামিতে তোমাদের পছন্দের অনেক কিছু তৈরি করা যায়। এই পদ্ধতিতে তুমি বানিয়ে নিতে পারো নৌকা, উড়োজাহাজ, পাখি, ফুল, প্রজাপতি, মাছ, হাতি, ঘোড়া, হার্ট, ব্যাঙ, খাম, তারা, চেয়ার, চায়ের কাপ, হাতপাখা, পাতা ইত্যাদি। 

এডিস মশার পরামর্শ

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২০ পিএম
এডিস মশার পরামর্শ
এঁকেছেন মাসুম

আয়েল ক্লাস থ্রিতে পড়ে। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী সে। আজ স্কুল থেকে এসে গোসল করে নিল। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছু হোমওয়ার্ক ছিল, সেগুলো সেরে নিল। তারপর ঘুম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে একটু খেলাধুলা ও হাঁটাহাঁটি। সন্ধ্যা হতেই পড়ার টেবিলে ফিরল সে। আয়েল পড়ছে। এই সময় দেখা দিল একটা মশা। খুব বিরক্ত করছে। ভোঁ ভোঁ করে চোখের সামনে ঘুরছে। উড়ে গিয়ে নাকের ওপর বসছে। আয়েল তাড়িয়ে দিয়ে যেই পড়তে শুরু করবে, অমনি পাজি মশাটা ওর কানে গিয়ে বসে ভোঁ ভোঁ শুরু করল। ভারি মুশকিল তো! 
আয়েলের মনে পড়ল পড়ার টেবিলের পাশেই মশার স্প্রে আছে। বাবা দিয়ে বলেছিলেন, সব সময় স্প্রে ব্যবহার করতে। মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। খুব সতর্ক হতে হবে। 
আয়েল স্প্রেটা হাতে নিতেই মশাটা বলে উঠল, আমি এডিস মশা। তুমি আমার কথা না শুনে স্প্রে করবে না কিন্তু।
আয়েল ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল, কী কথা বলো?
মশা বলল, আমি এডিস মশা জন্ম হয়েছি তোমার কারণেই। এখন তুমিই আমাকে মারতে চাচ্ছো?
আয়েল বিরক্তিবোধ করল। নাকটা খরগোশের কানের মতো খাড়া করে বলল, কী, আমার কারণেই তোমার জন্ম? 
হ্যাঁ, তোমার কারণেই— মশা চেঁচিয়ে উঠল। আবার বলল, তিন দিন ধরে তুমি একটা বাটিতে ময়লা পানি জমিয়ে রেখেছ। সেই পানিতেই তো আমি জন্মেছি। তোমার ভাগ্য ভালো যে, আমি এখনো কামড় বসাইনি।
আয়েল ইতিউতি তাকিয়ে বলল, কোথায়, কোথায় সে বাটি?
তোমার পড়ার টেবিলের নিচে। একটু নুয়েই দেখো না। বলল মশা।
আয়েল এবার নুয়ে দেখে সত্যিই পড়ার টেবিলের নিচে একটা বাটি। সেখানে পানি আছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একঝাঁক মশা বাটির ওপর উড়াউড়ি করছে। কী বিশ্রী অবস্থা। 
আয়েলের মনে পড়ল। তিন দিন আগে মা বাটিতে করে একটা ডিম আর কলা দিয়েছিলেন। ডিম কলা খেয়ে বাটিতেই হাত ধুয়েছিল সে। পানিটা ফেলে না দিয়ে পড়ার টেবিলের নিচে রেখে দিয়েছিল পরে ফেলবে ভেবে। কিন্তু আয়েল বেমালুম ভুলে গেছে। ও দৌড়ে পানিটা ফেলে দিয়ে এল। লজ্জানত হয়ে আয়েল বলল, ধন্যবাদ মশা ভাইয়া, আমাকে সতর্ক করার জন্য।
মশা বলল, আমাকে ধন্যবাদ দিলে হবে না। তোমার আঙিনা তোমাকেই পরিষ্কার রাখতে হবে। 
আচ্ছা, কী কী করলে মশা জন্ম নেবে না।—জানতে চাইল আয়েল। 
মশা বলল, আমরা মশারা তো তোমাদের অবহেলা, অসচেতনতা, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতার কারণেই জন্ম নিই এবং তোমাদের কামড়াই। তবে কিছু কাজ কাজ করলে তোমরা আমাদের থেকে রক্ষা পাবে।
কী কাজ? —উদগ্রীব হয়ে উঠল আয়েল।
মশা বলল, সামনে বৃষ্টির সিজন। এ সময় কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বাড়ির ছাদে বা উঠানে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনো পাত্রে পানি যেন জমে না থাকে। পানি জমতে পারে এমন পাত্র উল্টিয়ে রাখতে হবে। কারণ, জমে থাকা পানিতে আমরা ডিম পারি। ওটাই আমাদের জন্ম নেওয়ার স্থান।
তারপর! —আকুতি আয়েলের। তর যেন সইছে না। সব মনোযোগ এখন মশার দিকে।
বলছি, বলছি। সর্বদা চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টব, ভাঙা হাঁড়িপাতিল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ছোট বড় কৌটা, নারিকেল বা ডাবের খোসা, রেফ্রিজারেটর এবং এসির নিচে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মশা আরও বলল, আর হ্যাঁ, ঘুমাবার সময় অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে। জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করতে হবে। মশা নিধনের ওষুধ, কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। তবেই তুমি মশার জন্ম রুখতে পারবে। করতে পারবে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ। নিজে বাঁচতে পারবে। বাঁচাতে পারবে অন্যকেও।

প্রাচীনতম ভূতের গল্প

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
প্রাচীনতম ভূতের গল্প

তোমরা তো ভূতের গল্প পড়েছ কিংবা শুনেছ। মেছোভূত, গেছোভূত, শাকচুন্নি, পেত্নী কত রকমের ভূতের গল্পই জানা আছে তোমাদের। তবে তোমরা কি জানো, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ভূতের গল্পটি কোথায় লেখা আছে?
আজ তোমাদের সেই গল্প সম্পর্কে জানাব। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ভূতের গল্পটি লেখা হয়েছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সময়ে। আজ থেকে প্রায় ৩৫০০ বছর আগে প্রাচীন গ্রিস, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, তুরস্কের কিছু অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা। এটা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি। 
গল্পটি লেখা হয়েছিল কাদামাটিতে। ঠিক লেখা হয়েছিল বললে ভুল হবে। আঁকা হয়েছিল। প্রথমে কাদামাটিতে ভূতের গল্পটি আঁকা হয়। তার পর সেটাকে টাইলসের মতো আকারে কেটে শুকানো হয়েছিল, যেন সেটা অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। এই টাইলসকে বলা হয় ট্যাবলেট। 
তখনকার মানুষরা এঁকেই মনের ভাব প্রকাশ করত বলে ভূতের গল্পটি আঁকা হয়েছিল। সেই সভ্যতার মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা এটি জায়গায় অনন্তকাল বাস করবে। মৃত্যুর পর মানুষকে কবর না দিলে তার আত্মা ভূত হয়ে যাবে। শান্তি খুঁজে পাবে না। এই ভূত বা আত্মা ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি পাবে না, যতক্ষণ না মৃত ব্যক্তিকে সমাধি দেওয়া হবে। ঠিক এই ধরনের গল্প বা বিশ্বাস বোঝানো হয়েছিল মেসোপটেমিয়ার মাটির সেই চিত্রে। মাটির এই ট্যাবলেটটি রাখা আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। ট্যাবলেটটি আলোর নিচে ধরলেই ভালোভাবে বোঝা যায়। জাদুঘরের অভিজ্ঞদের মতে, চিত্রটি দক্ষ কারিগর দ্বারা আঁকা হয়েছিল।

সিংহ আর চড়ুই

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০১:২২ পিএম
সিংহ আর চড়ুই
এঁকেছেন মাসুম

গভীর বনে বাস করত এক সিংহ। নাম তার সিংহরাজ। বনের অন্যান্য প্রাণী তাকে ভীষণ ভয় পেত। সে ছিল দারুণ অহংকারী। নিজের শক্তি আর ক্ষমতা নিয়ে সে এতটাই গর্ব করত যে, ছোট-বড় কারও প্রতি সে দয়া দেখাত না।
একদিন সকালে সিংহরাজ বনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গর্জন করছিল। বলছিল, সবাই যেন তার শক্তির কথা মনে রাখে। হঠাৎ, তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল একটি ছোট্ট চড়ুই পাখি। চড়ুই পাখিটি গাছের ডালে বসে সিংহের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, রাজা সাহেব, এত গর্জন করার কী দরকার! আমি তো আপনার শক্তিকে মোটেও ভয় পাই না!
এ কথা শুনে সিংহ অবাক হয়ে চড়ুই পাখির দিকে তাকাল। মনে মনে ভাবল, এই ক্ষুদ্র পাখি তাকে চ্যালেঞ্জ করছে! সে গর্জন করে বলল, তোমার এত সাহস! আমার শক্তিকে অবজ্ঞা করছ! চাইলে, এক থাবায় তোমাকে ধরতে পারি!
চড়ুই হেসে বলল, আচ্ছা, দেখি আপনি আমাকে ধরতে পারেন কি না। যদি ধরতে পারেন, তবে আমি চিরকাল আপনার সেবা করব।
চড়ুই পাখিটির কথায় সিংহরাজ রাগে গর্জে উঠল এবং তাকে ধরতে দৌড়াতে লাগল। ওদিকে চড়ুই কখনো উড়ে গিয়ে সিংহের মাথায় বসে, কখনো লেজে ঠোকর দেয়। কানের কাছে এসে বলে, আরও জোরে দৌড়ান রাজা সাহেব! আরও জোরে।
সিংহ দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে হাঁপাতে হাঁপাতে সে থেমে গেল। চড়ুই তখন ডালে বসে মিষ্টি স্বরে বলল, রাজা সাহেব, আপনার শক্তি অনেক বেশি, কিন্তু শক্তি দিয়ে সবকিছু হয় না। কখনো কখনো ছোটদের বুদ্ধিও বড়দের হারিয়ে দিতে পারে। অহংকার আমাদের দুর্বল করে তোলে। তাই অহংকার কমিয়ে ভালোবাসা দিয়ে রাজত্ব করুন।
সিংহ মাথা নত করে বলল, তোমার কথা সত্যি। আমি ভুল করেছি। আজ থেকে আমি আর অহংকার করব না। আর যদি কোনো দিন বিপদে পড়ো, আমাকে ডাকবে। আমি তোমার বন্ধু হয়ে পাশে থাকব।
সেদিন থেকে সিংহরাজ নিজের দোষ শুধরে নিল এবং বনের সবাইকে ভালোবাসতে শুরু করল। আর চড়ুই পাখি হলো তার পরম বন্ধু।
গল্পের শিক্ষা: শক্তি নয়, বুদ্ধিই বড়। অহংকার না করে ভালোবাসা ও সহযোগিতা দিয়ে জীবনকে সুন্দর করা যায়।