![প্রবৃদ্ধি-মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব](uploads/2024/06/11/ficci-1718085743.jpg)
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এবারের বাজেট মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪.২ শতাংশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬.৫০ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
ফিকি মনে করে, এ লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী হলেও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব। প্রস্তাবিত সংস্কার, বিশেষ করে আয়কর এবং কাস্টমসের লক্ষ্য হলো রাজস্ব বৃদ্ধি, ঘাটতি কমানো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো।
সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ফিকির সভাপতি জাভেদ আখতার এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
অর্থবিলে উপস্থাপিত কয়েকটি প্রস্তাবকে চেম্বার স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা টেলিকম, কার্বনেটেড বেভারেজ, ওয়াটার পিউরিফায়ারের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক এবং ট্যাক্স আরোপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কারণ, প্রস্তুতকারকদের জন্য বর্ধিত কর এই ব্যবসার মুনাফা এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ফিকি সরকারকে আর্থিক খাতের সংস্কারের ওপর নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে যা একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক আর্থিক ব্যবস্থার গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ ফিকি বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় কম রাজস্ব অনুপাত তুলে ধরে এটি আরও উন্নীত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
গৃহস্থালি আয় সমীক্ষা অনুসারে, জনসংখ্যার ১০ শতাংশ জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ অবদান রাখে। কিন্তু এনবিআরের তথ্য অনুসারে দেশের মাত্র ১ কোটি নিবন্ধিত করদাতা রয়েছে। তাই জনগণকে ট্যাক্স নেটের আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। যেহেতু সরকার এ ব্যাপারে কাজ করছে, তাই সামনে ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করে ফিকি। এ ব্যাপারে ফিকি খাত ভিত্তিক রাজস্ব বিশ্লেষণ এবং করদাতার ভিত্তি বাড়ানোর মতো উদ্ভাবনী পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফিকি সভাপতি জানান, অর্থবিল ২০২৪ এ চেম্বারের প্রস্তাবিত সংশোধনী গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে তারা, বিশেষ করে সম্ভাব্য করের হারের বিষয়টি, যা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে। এই হার বজায় থাকলে ব্যবসাগুলোকে কার্যকরভাবে পরিকল্পনা করতে এবং বিনিয়োগ করতে সক্ষম করবে। এ ছাড়া ফিকি শিল্পের কাঁচামালের জন্য উৎসে ট্যাক্স ডিডাকশন সহজ করার জন্য তাদের প্রস্তাবকে গ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি মাসিক উইথহোল্ডিং ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য সময় বাড়ানোর বিষয়টি অর্থবিল ২০২৪-এর মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে বলে সাধুবাদ জানিয়েছে ফিকি।
কর ব্যবস্থাকে সরল করার জন্য প্রস্তাবিত কর সংস্কারের প্রশংসা করেছে ফিকি। কিন্তু উচ্চ কার্যকরী করের হার শিল্পের জন্য একটি মূল উদ্বেগের বিষয়। যদিও তারা ব্যক্তিগত তহবিলের জন্য ১৫ শতাংশ আয়কর হারের প্রশংসা করেছে, কিন্তু সরকারি তহবিলকে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়টি সরকারি এবং বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে বলে জানিয়েছে ফিকি।
ব্যক্তিগত আয়কর হার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। এই ব্যবস্থা নিয়মিত করদাতাদের কাছে অন্যায় মনে হতে পারে এবং অসাবধানতাবশত কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত করতে পারে। ট্যাক্স স্ল্যাবে এই ধরনের পরিবর্তনগুলো অনুগত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে কারণ তাদের কঠোর উপার্জনের ওপর জরিমানা করা হচ্ছে, এ ছাড়া এটি এনবিআরের বর্তমান কর- সংস্কৃতির নীতির বিরুদ্ধে। তাই চেম্বারটি ২০২৪-২৫ আয়কর বর্ষে বছরের হার প্রযোজ্য রাখার সুপারিশ করেছে। এ নীতির ফলে আরও সঠিক এবং দক্ষ কর ব্যবস্থা তৈরি করার লক্ষ্যে ট্যাক্স নেট প্রশস্ত করার সঙ্গে করের হার হ্রাস করবে। এটি কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করে, করদাতা বাড়ায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায়, সুষ্ঠু কর বণ্টন নিশ্চিত করে এবং কর প্রশাসনকে সরল করে, যা আরও স্থিতিশীল এবং অনুমানযোগ্য কর রাজস্বের দিকে নিয়ে যায়।
এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ৬০ শতাংশ। ফিকি এ লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ট্যাক্স, ভ্যাট এবং শুল্ক প্রশাসন স্বয়ংক্রিয় করার জন্য এবং কর সংগ্রহকে সহজ করবে এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ বা নির্দেশনার অভাব রয়েছে । এই সংস্কার ছাড়া, ভ্যাট ক্রেডিট জটিলতা এবং ব্যবসার ওপর আর্থিক চাপ অব্যাহত থাকতে পারে। উৎসে কর কমপ্লায়েন্সে পরিবর্তন, যেমন ১০ কোটি টাকার ওপরে সত্ত্বাকে উইথহোল্ডিং অথরিটির অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল ট্যাক্স ইন্টিগ্রেশনের উদ্যোগের লক্ষ্য ট্যাক্স প্রক্রিয়া সহজ করা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা। এই সংস্কারগুলো, যেমন এনবিআরের তিনটি শাখাকে একীভূত করা (আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস), সংগ্রহ বিভাগকে নীতি বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) প্রকল্প বাস্তবায়ন, আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে সহায়তা করবে। এই সংস্কারগলো ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রক্রিয়াগুলোকে প্রবাহিত করতে, প্রশাসনিক বোঝা কমাতে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন।