জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী ফেরদৌসী রহমান। এই কিংবদন্তির হাত ধরেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে যাত্রা শুরু হয় গান শেখানোর অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় আপাতত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গান শেখাচ্ছেন না তিনি। শিশুদের কাছে তিনি গানের খালামণি হিসেবেই পরিচিত। তবে গানের এ মানুষটি ঘরে বসেও দেশের সংগীতাঙ্গনের খোঁজ রাখেন নিয়মিত।
দেখতে দেখতে জীবন চলার পথে ফেরদৌসী রহমান আজ ৮২ পেরিয়ে ৮৩ বছর বয়সে পা রাখছেন। ১৯৪১ সালের ২৮ জুন ব্রিটিশ ভারতের কোচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন এই খ্যাতিমান গায়িকা। ফেরদৌসী রহমান বাংলাবাজার স্কুল থেকে এসএসসি, ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং পরবর্তী সময়ে ইউনেসকো ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে স্টাফ নোটেসন কোর্স সম্পন্ন করেন। ফেরদৌসী রহমান হারুনর রশীদ (হারুনুর না) পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ সিনেমার সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তবে প্রয়াত রবিন ঘোষের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ‘রাজধানীর বুকে’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার কাজ করেন প্রথম। প্রায় ২৬০টি সিনেমায় গান গেয়েছেন তিনি। ৩টি লং প্লে, ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড, প্রায় ২০টি ক্যাসেটসহ ৫ হাজারেরও বেশি গান তার রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের সঙ্গে ফেরদৌসী রহমানের বিয়ে হয়।
ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘দেখতে দেখতে জীবনের এতটা বছর পেরিয়ে আজ ৮৩তে পা রাখছি। এখন খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হই না। ঘরে বসে যাদের গান ভালো লাগে, মাঝে মাঝে তাদের গান শুনি। যেমন শাহনাজ রহমতুল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কনকচাঁপা, শাকিলা জাফর, আলম আরা মিনু- এদের সবার কণ্ঠে আমার গান শুনতে ভালো লাগে। শাহনাজ, রুনা, সাবিনার তো কালজয়ী অনেক গান আছে, যার জন্য শ্রোতা-দর্শক মনে রাখবেন তাদের আজীবন। বর্তমান প্রজন্মের অনেক শিল্পীর গানও আমার ভালো লাগে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যারা গান করছে, তারা গানের গ্রামার জেনে গানের চর্চাটা করছে না। বাকি সব ঠিকই করছে। গান আসলে সাধনার বিষয়। এর বিকল্প বা শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই। যে কারণে আমি কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিটিভির এসো গান শিখি অনুষ্ঠানটি করেছি। যাতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত গানে আমার জ্ঞানটুকু দিয়ে যেতে পারি। যা-ই হোক, আমি সবার দোয়াপ্রার্থী।’
ছোটবেলায় গানে হাতেখড়ি হয় তার পিতা পল্লিসম্রাট আব্বাসউদ্দীনের কাছে। পরবর্তী সময়ে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমুখ সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি।
ফেরদৌসী রহমান একাধারে একজন পল্লিগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ও প্লেব্যাক গায়িকা। সংগীত জীবনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা, সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ফেরদৌসী রহমান জীবনের প্রথম রেডিওর ‘খেলাঘর’ অনুষ্ঠানে গান করেন ১৯৪৮ সালে। ‘আসিয়া’ সিনেমায় তার বাবা পল্লিসম্রাট আব্বাসউদ্দীনের সুরে আব্দুল করিমের লেখা ‘ও মোর কালারে’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। যদিও আগেই ‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমা মুক্তির মধ্য দিয়ে একজন প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় নন্দিত এই শিল্পীর।
জাহ্নবী