![তুরস্কে এরদোয়ানের ‘বড়’ পরাজয়](uploads/2024/04/02/1712026386.Turkey-president.jpg)
তুরস্কে স্থানীয় ভোটে বড় পরিসরে পরাজিত হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও তার দল। এ ভোটের মধ্য দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা ও ইস্তাম্বুলের মেয়র ইকরেম ইমামোগ্লুর অবস্থান আরও পোক্ত হয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছেন প্রেসিডেন্টের মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী।
সর্বশেষ ভোট গণনায় ইস্তাম্বুলের মেয়র হওয়ার দৌড়ে ১০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে ইমামোগ্লু। এ ছাড়া তার দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) দেশজুড়ে ১৫টি শহরে মেয়র আসন জিতে নেয়।
দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ান ও তার দল একে পার্টি (একেপি) এবারই এত প্রতিকূলভাবে পরাজিত হলো। বিষয়টিকে দেশের বিভক্ত রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন পরিবর্তনের আভাস হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
নির্বাচনের আগের মতামত জরিপেও পিছিয়ে ছিলেন এরদোয়ান। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল সেটিকেও হার মানিয়েছে। পূর্বাভাসের চেয়ে রূঢ়ভাবে পরাজয় দেখতে হয়েছে একে পার্টিকে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও অসন্তুষ্ট ইসলামি ভোটারদের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫৩ বছর বয়সী ইমামোগ্লু গত রবিবার হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ ইস্তাম্বুলের এক কোটি ৬০ লাখ নাগরিক আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রেসিডেন্ট- উভয়ের উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠিয়েছেন। যারা দেশের এই বার্তা ধরতে পারছেন না, তারা একটি পর্যায়ে পরাজিত হবেন।’
নগর নির্বাচনের আগে দেশের ভেতরে জোর প্রচারণা চালিয়েছিলেন এরদোয়ান। এক সময় তিনি নিজেও ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। ভোটের পর আঙ্কারার একেপি সদর দপ্তরে জড় হওয়া জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশজুড়ে তার দল ‘অবস্থান হারিয়েছে’ এবং তারা ভোটারদের কাছ থেকে পাওয়া বার্তা অনুসারে পদক্ষেপ নিতে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভুল করে থাকি, সেটি আমরাই ঠিক করব। আমরা যদি কোনো কিছু হারিয়ে থাকি, আমরা তা পরিপূর্ণ করব।’
ইস্তাম্বুলের ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ ব্যালট বাক্সের ফলাফল বলছে, ইমামোগ্লু ভোটারদের ৫০ দশমিক ৯২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী একেপির মুরাট কুরুম পেয়েছেন ৪০ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট।
এর আগে জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছিল, ইস্তাম্বুলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এবং দেশজুড়ে বিরোধী দল সিএইচপিকে অনেক আসনে পরাজিত হতে দেখা যাবে। তবে ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা। ১৯টি প্রধান প্রধান পৌরসভা এবং বুরসা ও বালিকেসিরের মতো বড় শহরগুলোতে একেপিকে পরাজিত হতে দেখা গেছে। ৩৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে সিএইচপিকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ইস্তাম্বুলের বোগাজিসি ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মার্ট আর্সানলাপ বলেন, ২০০২ সালে দেশের ক্ষমতায় আসার পর এটি এরদোয়ানের সবচেয়ে বড় মাপের নির্বাচনি পরাজয়। তিনি বলেন, ‘ইমামোগ্লু দেখিয়ে দিয়েছেন যে তিনি তুরস্কের গভীর সামাজিক রাজনৈতিক বিভাজন পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।… এটি তাকে রাজনৈতিকভাবে এরদোয়ান শাসকগোষ্ঠীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতে পরিণত করেছে।’
তুরস্কের তরুণ বয়সীরাও দেশটিতে পরিবর্তন আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন। দেশটির ভোটার ২৭ বছর বয়সী মেহমেত ব্যাংকাসি বলেন, ইমামোগ্লু গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিএইচপির প্রার্থী হলেও নিশ্চিতভাবে জিততেন।
তুরস্কের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের বসবাস ইস্তাম্বুলে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, ওই শহর যাদের হাতে থাকে, তারা তুরস্কের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সেসব অংশের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, পর্যটন ও আর্থিক বিষয়াদি। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি