আবারও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভির হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে তুরাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন। গতকাল শনিবার তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার এ কথা জানান।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক কলেজছাত্রী। এরপর তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতভর ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে সময়ক্ষেপণ করে আসামিকে ‘অজ্ঞাত’ উল্লেখ করে অভিযোগ নেয় তুরাগ থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী জানান, তার বাড়ি টাঙ্গাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে গত দুই মাস আগে বড় মনিরের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারে তাদের প্রথম দেখা হয়। পরে গতকাল রাতে আবারও রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে ভুক্তভোগীকে তুরাগ থানাধীন প্রিয়াঙ্কা সিটিতে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান বড় মনির। সেখানেই তাকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘উনি আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। আমি বারবার তার কাছে মাফ চেয়েছি, তবুও রেহাই মেলেনি।’ ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়েই ভুক্তভোগী ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। এরই মধ্যে ওই বাসার সিসি ক্যামেরাও জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবু সাঈদ মিয়া বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়াও চলছে। গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের নামে অভিযোগ এসেছে। আসামি শনাক্ত হলে আইনি ব্যবস্থা নেব। অপরাধ যে করবে, সে যেই হোক তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
এর আগেও এক নারী ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন গোলাম কিবরিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব বড় মনিরের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন ওই নারী। সে সময় ওই তরুণী অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাকে বাসায় ডেকে বড় মনির ধর্ষণ করেন। এতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বড় মনির মূলত তার সম্পত্তির সমস্যা সমাধান করে দেবে বলে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন এবং বিভিন্ন রকমের ছবি তোলেন। ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এরপর সেই ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বড় মনির আরও কয়েকবার তাকে ধর্ষণ করেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
পরে জন্ম নেওয়া সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করে দেখা যায়, শিশুটির সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএ মেলেনি। অর্থাৎ শিশুটির জৈবিক (বায়োলজিকাল) পিতা বড় মনির নন। এর ভিত্তিতে, গত বছরের ৯ অক্টোবর ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর শুনানি শেষে বড় মনির জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের বোয়ালী এলাকার নিজের বাসা থেকে ধর্ষণ মামলার ওই বাদীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।