![কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস](uploads/2024/06/09/45454kk-1717948504.jpg)
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো। রবিবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), চট্টগ্রাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক কলেজের শিক্ষার্থীরা একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এসব কর্মসূচি থেকে কোটা পুনর্বহালের আদেশ বাতিলের জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন তারা। একই দাবিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে প্রত্যাখ্যান করে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৯ জুন) সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একে একে জড়ো হতে থাকেন তারা। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, প্রশাসনিক ভবন ঘুরে টিএসসি রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশে মিলিত হন।
প্রতিবাদ সমাবেশে ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (ইসোল) বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কোটা নামক একধরনের বৈষম্যের প্রহসন চলে আসছিল। যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছিল এক অভিশাপ। ২০১৮ সালে এ দেশের ছাত্র সমাজ দূর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়। কিন্তু ছয় বছর পর ২০২৪ সালে এসে হাইকোর্ট আবার সেই বৈষম্যকে পুনবার্সন করতে চাচ্ছেন। অবিলম্বে হাইকোর্টের এই বৈষম্যমূলক রায় প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে দুর্বার আন্দোলনের ডাক দেবেন। আমরা ছাত্রসমাজ শান্তি চাই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই।’
ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো কোটা থাকা উচিত নয়। আমি নারী হয়ে বলছি, আমি কোনো নারী কোটা চাই না। আমরা মেধার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পরিচালনা করতে চাই। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে চাই, মেধাবীদের হাতে দেশটাকে ছেড়ে দিন। মেধার মাধ্যমে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই সুযোগ দিন।’
৩০ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, ‘আমরা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের আলটিমেটাম জানাচ্ছি। যদি ৩০ তারিখের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয় তাহলে আমরা লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলব। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এক-একটি দূর্গ হিসেবে গড়ে তুলে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়া হবে।’
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন এবং এ সম্পর্কিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
একই দাবিতে গতকাল বেলা ১১ টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাকিব হোসাইন বলেন, সংবিধানে সরকারি চাকরিতে সমতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজকে কোটার মাধ্যমে মেধাবীদের অবহেলা করা হচ্ছে। যদি এই বৈষম্যমূলক কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা এই রাজপথ ছাড়বে না।
চবিতে বড় পরিসরে আন্দোলনের হুমকি
চবি প্রতিনিধি জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্ত্বরে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। অবস্থান শেষে তারা কোটা পদ্ধতি বাতিল না করা হলে আগামী মঙ্গলবার (১১ জুন) বড় পরিসরে আন্দোলন হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা সোয়া ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রবিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল জানান, শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলে তারা রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করে।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে অ্যাটার্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দীন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেন ঢাবি শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদ। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘হাইকোর্টের রায়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। পুনরায় কোটা ফিরে আসা মানে দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার তা নিশ্চিত করতে ও একটা দক্ষ প্রশাসন গড়তে মেধাভিত্তিক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। এমতাবস্থায়, সংবিধানে উল্লেখিত সুযোগের সমতার বিধান কার্যকর রাখতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের এই আদেশ/জাজমেন্টকে স্থগিত (স্টে) চেয়ে আবেদন করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আপনার ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে এক পরিপত্রের মাধ্যমে কোটা বাতিল করা হয়।