ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

উমরায় ১০ নির্দেশনা মেনে চলুন

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২১ এএম
উমরায় ১০ নির্দেশনা মেনে চলুন
প্রতীকী ছবি

সেলফি, ভিডিও এবং ইন্টারনেটের অপব্যবহার

অনেকে জেনে কিংবা না জেনে উমরায় গিয়ে মক্কা-মদিনার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জায়গার ছবি কিংবা সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ভিডিও করেন। ভিডিওকলে পরিচিতজনদের কাবাঘর ও মসজিদে নববি দেখান। ইন্টারনেটের অপব্যবহার করেন। সেখানে অবস্থানকালে টুইটার, ফেসবুক, ইনষ্ট্রাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি আপলোড দিয়ে কুড়াতে চান লাইক আর কমেন্টের প্রশংসা। রিয়া বা লৌকিকতাপূর্ণ এসব কাজ আমাদের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়, আন্তরিকতা নষ্ট করে। তাই হাদিসে এমন কাজকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) অহংকারমুক্ত হজ পালনের জন্য বিদায় হজে দোয়া করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার হজকে রিয়া ও খ্যাতির আকাঙ্ক্ষামুক্ত হজ হিসেবে কবুল করুন।’ (ইবনে মাজাহ, ২৭৯০) 

 

প্রয়োজনীয় খরচে কার্পণ্য করবেন না

কৃপণতা সব সময়ের জন্য নিন্দনীয় স্বভাব। বিশেষ করে হজ-উমরার সফরে। আয়েশা (রা.)-কে তার উমরার সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(উমরার এ সফরে) তুমি যে পরিমাণ কষ্ট সহ্য করবে ও অর্থ ব্যয় করবে; সে অনুযায়ী আল্লাহতায়ালা তোমাকে প্রতিদান ও সওয়াব দান করবেন।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, ১৭৩৩) অতএব প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে একেবারে হাত গুটিয়ে না রেখে সাধ্যমতো খরচ করুন। 

 

রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, গুনাহমুক্ত থাকুন

সব সময় রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। বিশেষ করে উমরার দিনগুলোয় রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রাগ নিয়ন্ত্রণে অনেক গুনাহ থেকে বাঁচা যায়। কারণ রাগ গুনাহ ডেকে আনে। গুনাহ উমরার ক্ষতি করে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, গুনাহমুক্ত থাকুন। 

 

সময় নষ্ট করবেন না

মক্কা-মদিনায় অবস্থানের দিনগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পার করবেন না। আমল-ইবাদত বাদ দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। যতটুকু সময় পান আল্লাহর জন্য ব্যয় করুন। বেশি বেশি তওবা করুন। নিজের জন্য, পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করুন। নামাজ, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ও নফল ইবাদতে সময় অতিবাহিত করুন। 

 

একাধিক উমরা করতে চাইলে

কেউ কেউ একবার উমরা আদায়ের পর পুনরায় উমরা আদায়ের লক্ষ্যে তানয়িমে অবস্থিত মসজিদে আয়েশা থেকে ইহরাম করে একাধিক উমরা আদায় করেন। অথচ এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের থেকে একাধিক উমরা করার কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। তাই অনেক আলিমের মতে নফল উমরার চেয়ে নফল তাওয়াফ অধিক উত্তম। এজন্য এভাবে নফল উমরা না করে তাওয়াফ বেশি করা কাম্য। 

 

মক্কায় থাকাবস্থায় ইচ্ছা করলে নফল উমরাও করতে পারেন। উমরার নিয়ত নিজেই করবেন, নিজেই পালন করবেন। তবে বলবেন, ‘হে আল্লাহ, এই উমরাটি আপনি কবুল করুন। এর সওয়াব আমার পিতাকে দান করুন।’ স্বাস্থ্য ভালো থাকলে একাধিক উমরা করতে পারেন। এর জন্য মিকাতের বাইরে যেতে হবে। মক্কার নিকটাবর্তী মিকাত হলো মসজিদে আয়েশা। জেদ্দা, মদিনা ও তায়েফের দিকে গেলেও মিকাত আছে।  প্রতিটি নফল উমরা করে জীবিত বা মৃত আত্মীয়স্বজনের জন্য দোয়া করা। ব্যক্তি সমাজ ও দেশের জন্য দোয়া করা কর্তব্য।

 

আমলে ভিন্নতা দেখে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই

মক্কা-মদিনায় নামাজ, উমরা প্রভৃতি আমলের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ভিন্নতা দেখতে পাবেন। এতে বিচলিত কিংবা বিভ্রান্ত হবেন না। এ নিয়ে কারও সঙ্গে বিতর্কেও জড়ানো যাবে না। এসব ক্ষেত্রে দেশের যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার প্রতি আপনার আস্থা রয়েছে, তার কাছ থেকে সমাধান জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করবেন। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে হানাফি মাজহাব অনুসরণে যে আমল করা হয়ে থাকে, তার স্বপক্ষেও কোরআন-সুন্নাহর মজবুত দলিল রয়েছে। এমনিভাবে হানাফি মাজহাবসহ স্বীকৃত চারটি মাজহাবের কোনোটিই কোরআন-সুন্নাহ থেকে ভিন্ন কোনো বিষয় নয়। মক্কা-মদিনায় হজ ও উমরা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চারও মাজহাবের লোকজন আসেন। তাদের সবারই নামাজের আলাদা পদ্ধতি রয়েছে; তা দেখে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। 

 

সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত ও জানাজার নামাজে পদ্ধতিগত যে দু চারটি ভিন্নতা চোখে পড়ে তাও সুন্নাহসম্মত এবং তারও মূল ভিত্তি সুন্নাহ। আর আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করা হয় তারও ভিত্তি সুন্নাহ। উভয় পদ্ধতিই সুন্নাহ ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এজন্য সেখানে কোনো ভিন্ন পদ্ধতি দেখে নিজ দেশের আলেমদের প্রতি অনাস্থা নিয়ে আসবেন না। এছাড়া মাতাফে নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে সকলের জন্য অতিক্রম করা জায়েজ। আর মাসজিদুল হারামেও প্রয়োজনে নামাজির সামনে দিয়ে তাওয়াফকারীদের চলাচল করা জায়েজ। (ইবনে হিব্বান, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১২৮)

 

জুমার নামাজ

হাম্বলি মাজহাবে এক মত অনুসারে, জাওয়ালের (জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া) আগেই জুমার ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। সম্ভবত এ কারণেই হারাম শরিফে জাওয়ালের বেশ আগেই জুমার প্রথম আজান হয়ে যায়। আবার জোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার পরপরই জুমার দ্বিতীয় আজান দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খুতবা শুরু হয়ে যায়। ফলে ওয়াক্ত হওয়ার পর জুমার সুন্নত আদায়ের সুযোগ পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে দুটি কথা-ক. হারামা শরিফে জুমার প্রথম আজানের পর আপনি তাহিয়্যাতুল মসজিদ-সহ বিভিন্ন নফল নামাজ পড়তে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন মাকরুহ ওয়াক্তে (জাওয়ালের সময়) নামাজ পড়া না হয়। খ. আর জুমার পূর্ববর্তী সুন্নত ফরজের পর আদায় করে নেবেন। (কিফায়াতুল মুগতাজি, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৪৮)

 

জানাজার নামাজ

মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে প্রায় প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর জানাজা নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনিও জানাজার নামাজে অবশ্যই শরিক হবেন। সেখানে ইমাম সাহেব শুধু একদিকে সালাম ফিরিয়ে জানাজা শেষ করে থাকেন। তো এক্ষেত্রে দুটো কথা মনে রাখুন—জানাজার নামাজে দুদিকে সালাম ফেরানো কিংবা একদিকে সালাম ফেরানো—দুটিই হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। যেহেতু উভয় আমলই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, অতএব আপনি দুই দিকে সালাম ফিরাতে পারেন। আবার ইমামের অনুসরণে একদিকে সালাম ফিরিয়েও জানাজা শেষ করতে পারেন। (ফায়জুল বারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৫৭) 

 

এবার দেশে ফেরার পালা

উমরা শেষ হলে দেশে ফেরার আগে চারটি কাজ করুন। প্রথমত, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করুন। দ্বিতীয়ত, উমরার আমলগুলো কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তৃতীয়ত, হারামাইনে জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতে হওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। চতুর্থত, হারামাইনের সংস্পর্শে এসে যে নেক আমলের অভ্যাস তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখার সংকল্প ও চেষ্টা করুন।চারটি কাজ শেষে দেশে ফেরার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করুন। ব্যাগ-লাগেজে প্রয়োজনীয় মালপত্র গুছিয়ে নেন। সময়মতো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। 

 

উমরা থেকে ফিরে

সফর থেকে ফিরে এসে উমরার শিক্ষাকে জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাহলেই এ বরকতময় সফরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জিত হবে এবং তা গোটা জীবনের জন্য আলোকবর্তিকার ভূমিকা পালন করবে।

 

মনে রাখবেন, এ প্রত্যাবর্তন সাধারণ কোনো সফর থেকে নয়; বরং আল্লাহর ঘর জিয়ারত করে ফিরে আসা। এ সম্মান রক্ষার্থে জিয়ারতকারীর ওপর আরোপিত হয়ে গিয়েছে বহুবিধ দায়িত্ব-কর্তব্য।

 

লেখক: মুহতামিম (প্রশাসন), জামিয়া ইকরা বাংলাদেশ, রামপুরা

 

ইসমে আজম কী?

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
ইসমে আজম কী?
আরবিতে ‘আল্লাহ’ লেখা ছবি। ফ্রিপিক

‘ইসম’ অর্থ নাম আর ‘আজম’ অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। ‘ইসমে আজম’ হলো শ্রেষ্ঠ বা মহান নাম। আল্লাহতায়ালার অনেক নাম রয়েছে। এসব নামের মধ্যে যে নামগুলো দিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়, সেগুলোকে ইসমে আজম বলা হয়। 

পবিত্র কোরআনে ইসমে আজম
আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসমে আজম দুটি আয়াতের মধ্যে নিহিত। 

এক.

বাংলা উচ্চারণ: ‘ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদ, লা ইলাহা ইল্লাহু, আর রাহমানুর রাহিম।’ 

বাংলা অর্থ: তোমাদের উপাসক তো এক, তিনি ছাড়া আর কোনো উপাসক নেই, যিনি দয়াবান ও পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৩)

দুই.

সুরা আল ইমরানের প্রথমাংশ

বাংলা উচ্চারণ: ‘আলিফ লাম মিম, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু, আল হাইয়ুল কাইয়ুম।’

বাংলা অর্থ: আলিফ লাম মিম, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাসক নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৯৬)

হাদিসে ইসমে আজম
আনাস (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপস্থিতিতে নিচের শব্দমালার মাধ্যমে দোয়া করেছিলেন, 

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা বিআন্না লাকাল হামদ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, ওয়াহদাকা লা শারিকা লাকা, আল মান্নান, বাদিআস সামাওয়াতি ওয়াল আরজ, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকটই চাই, প্রশংসা শুধু আপনারই, আপনি ছাড়া কোনো উপাসক নেই। আপনি এক, আপনার কোনো অংশীদার নেই, আপনি অনুগ্রহকারী, হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। হে চিরঞ্জীব ও সর্বনিয়ন্তা।

তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি জানো, তুমি কি দিয়ে দোয়া করেছ? তুমি দোয়া করেছ ইসমে আজম দিয়ে, যা দিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন এবং তা দিয়ে কিছু চাইলে আল্লাহ তা প্রদান করেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৪; আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৯৫)

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা, আন্নি আশহাদু, আন্নাকা আনতাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল আহাদুস সামাদ, আল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি, আর সাক্ষ্য দিই যে, আপনিই একমাত্র আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আপনি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।

বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া সম্পর্কে বলেছেন, ‘এতে ইসমে আজম আছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৯৩)

ইসমে আজম নিয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মধ্যে নানা কথাবার্তা আছে। ৪০টি মতও পাওয়া যায় এ নিয়ে। আল্লামা সুয়ুতি (রহ.) তার রচিত আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফিল ইসমিল আজম নামক বইয়ে ২০টির মতো উল্লেখ করেছেন। আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, ইসমে আজম হলো, ‘আল্লাহ’ শব্দ। তবে শর্ত হলো, তা পূর্ণ একাগ্রতা ও ইখলাসের সঙ্গে বলতে হবে।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৬)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

আকিকা দেওয়ার নিয়ম

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম
আকিকা দেওয়ার নিয়ম
শিল্পীর তুলিতে আঁকা দুই মুসলিম শিশুর ছবি। ফ্রিপিক

শিশুদের আকিকা করা মুস্তাহাব। আকিকা হলো নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবাই করা। আলেমদের অনেকেই আকিকা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন। সন্তানের অভিভাবক সক্ষম হলে আকিকা করবেন। আকিকা করা অভিভাবকের ওপর আবশ্যকীয় নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। তাই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৯২)

আকিকার বরকতে নবজাতক শিশুর বিপদ দূর হয়। সন্তান ছেলে বা মেয়ে হোক; উভয়ের জন্য আকিকা করতে হবে।

আকিকা কখন করতে হয়?
সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর আকিকা সপ্তম দিনে করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৮৩৪)। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে বা ২১তম দিনে করা ভালো। তাও সম্ভব না হলে, অন্য যেকোনো দিন আদায় করে নেওয়া যাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে এবং তাও সম্ভব না হলে ২১তম দিনে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)

কোন ধরনের পশু দিয়ে আকিকা করতে হয়?
উট, গরু, মহিষ, ভেড়া বা ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হবে। কোরবানির পশুর মতো আকিকার পশু সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হওয়া ভালো। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করার নির্দেশ করেছেন।’ (তিরমিজি, ১/১৮৩; আবু দাউদ, ১/৪৪)
উম্মে কুরজ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুটি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে।’ (তিরমিজি, ১/১৮৩; আবু দাউদ, ২/৪৪)

আকিকার গোশত কারা খেতে পারবেন?
আকিকার গোশত সন্তানের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন সবাই খেতে পারবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)। হাদিয়াও দেওয়া যায়। (ফাতহুল বারি, ৯/৫০৭)। গরিবদেরও দান করা যায়। গোশত হাদিয়া দেওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়ানো উত্তম। নববি (রহ.) বলেন, ‘মুস্তাহাব হলো আকিকার গোশত কাঁচা সদকা করবে না; বরং তা রান্না করে খাওয়াবে। (আল মাজমু, ৮/৪১০)

লেখক: আলেম ও গবেষক

 

ট্রান্সপারেন্ট মসজিদ

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
ট্রান্সপারেন্ট মসজিদ
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ট্রান্সপারেন্ট মসজিদের ছবি

‘প্যারাডাইজ হ্যাজ ম্যানি গেটস’ অর্থাৎ ‘জান্নাতে অনেক দরজা’ নামক আর্ট প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ মসজিদ। এটি সৌদি আরবের চিত্রশিল্পী আজলান ঘারেম নির্মাণ করেছেন। দেখতে বেশ চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন। মসজিদের বাইরে থেকে ভেতরের অংশ পুরোপুরি দেখা যায়। 


দূর-দূরান্ত থেকে এ মসজিদ দেখতে আসেন মানুষ। তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। যারপরনাই অভিভূত হন। ঘারেমের জন্য শুভকামনা জানান। ঘারেম জানান, ‘সহজ-সরল পন্থা অবলম্বন করে মসজিদটি বানানো হয়েছে। আমি মানুষকে দারুণ এক বার্তা দিতে চাই এর মাধ্যমে। নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে চাই। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে, তারা কীভাবে এটি দেখছেন।’


ঘারেম চিত্তাকর্ষক এ মসজিদটি বিভিন্ন দেশের মানুষকে দেখাতে চেয়েছেন। দ্য ইসলামিক ইনফরমেশনের তথ্যমতে, বর্তমানে মসজিদটি কানাডার ভ্যানকুভারের ভ্যানিয়ার পার্কে রাখা আছে। সেখানে দুই বছর রাখা হবে। এরপর নিয়ে আসা হবে সৌদি আরবে। পরে সুবিধামতো অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হবে। নান্দনিক এই স্বচ্ছ মসজিদটি ঘূর্ণিত ইস্পাত, প্লেক্সিগ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম এবং বৈদ্যুতিক তারের সমন্বয়ে বানানো হয়েছে।

একই ম্যাটেরিয়ালস স্টিল, প্লেক্সিগ্লাস, অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংযোগে ইউরোপের সীমান্ত দেয়াল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জেল গুয়ান্তানামো বে নির্মাণ করা হয়েছে। সীমান্ত বেড়া অসহায় অভিবাসীদের আগমন ঠেকিয়েছে। মজলুম মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে কারাগার প্রকোষ্ঠে। এ মসজিদ নির্মাণে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হয়েছে। এমন একটি মসজিদ বানিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন আজলান ঘারেম।

লেখক: সাংবাদিক

গিবত-পরনিন্দার পরিচয় ও পরিণাম

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম
গিবত-পরনিন্দার পরিচয় ও পরিণাম
প্রতীকী ছবি

গিবত অর্থ পরনিন্দা, পরচর্চা, পেছনে সমালোচনা করা বা কুৎসা রটানো। গিবত হলো কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমরা কি জানো, গিবত কী জিনিস? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, গিবত হলো, তোমার ভাইয়ের এমন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন আসলো, আমি যা বলেছি তা যদি তার মাঝে থেকে থাকে, তাহলে? তিনি বললেন, তুমি যা বললে তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তার গিবত করলে। আর যদি না থাকে, তা হলে তো তার প্রতি অপবাদ দিলে।’ (মুসলিম, ৬৩৫৭)

একবার খুতবায় দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মুসলমান ভাইয়ের গিবত করো না এবং তাদের দোষ খোঁজ করে বেড়িও না। কেননা, যে অন্যের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহতায়ালাও তার দোষ তালাশে লেগে যান। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তিনি তাকে নিজ ঘরেও লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।’ (আবু দাউদ, ৪৮৮০)

পবিত্র কোরআনে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি বের করা ও গিবত করা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এর ভয়াবহ শাস্তিরও ইঙ্গিত রয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কারও গোপন দোষ-ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না এবং একে অন্যের গিবত করবে না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? এটাকে তো তোমরা মারাত্মকভাবে ঘৃণা করো।’ (সুরা হুজুরাত, ১২)

মেরাজের রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘...তারপর আমাকে এমন লোকদের কাছ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো, যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহের গোশত আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘এরাই তাদের ভাইদের গিবত করত এবং তাদের ইজ্জতহানি করত।’ (আবু দাউদ, ৪৮৭৮)

লেখক: শিক্ষক, বাইতুল আকরাম কমপ্লেক্স, টঙ্গী

 

ভ্রমণের সুন্নত ও আদব

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
ভ্রমণের সুন্নত ও আদব
পাসপোর্ট, টিকিট, ট্রাভেল ব্যাগ ও চেকলিস্টের ছবি

ভ্রমণ শুরু করার আগে যেসব সুন্নত ও আদব জেনে রাখা উচিত, সেগুলো হলো

হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা: সফরে যাওয়ার আগে পরিবারের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সফরের জন্য হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা। কারণ হালাল রুজি ছাড়া কোনো ভালো কাজই আল্লাহতায়ালা কবুল করেন না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া কবুল করেন না।’ আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করো এবং নেক আমল করো।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৫১)

দেনা-পাওনা ও অসিয়ত লিখে রাখা: সফরে বের হওয়ার আগে দেনা-পাওনার হিসাব এবং অসিয়ত থাকলে লিখে রাখা উচিত। কারণ কোনো মানুষই জানে না, সে কোথায়, কখন মারা যাবে। (সুরা লোকমান, আয়াত: ৩৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার কাছে অসিয়তযোগ্য কিছু (সম্পদ) থাকাবস্থায় সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে অসিয়ত লিখিত থাকবে না।’ (বুখারি, ২৭৩৮)

সম্ভব হলে স্ত্রী সঙ্গে নেওয়া: দীর্ঘদিনের উদ্দেশ্যে সফরকালে সম্ভব হলে ও ব্যবস্থা থাকলে স্ত্রীকে সঙ্গে নেওয়া উচিত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে যাওয়ার মনস্থ করলে স্ত্রীদের মধ্যে লটারি করতেন। যার নাম আসত তিনি তাঁকে নিয়েই সফরে যেতেন। (বুখারি, ২৫৯৩) তবে হজের সফরে তিনি সব স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। (জাদুল মাআদ, ১/৪৪৫)

উপদেশ গ্রহণ করা: সফরে বের হওয়ার আগে সফরের স্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ অথবা সৎ ও পুণ্যবান ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি, অতএব আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন, অবশ্যই তুমি আল্লাহভীতি (তাকওয়া) অবলম্বন করবে এবং প্রতিটি উঁচু স্থানে ওঠার সময় তাকবির (আল্লাহ আকবার) ধ্বনি দেবে। লোকটি যখন চলে যাচ্ছিল, এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আল্লাহ, তার পথের ব্যবধান কমিয়ে দাও এবং তার জন্য সফর সহজতর করে দাও।’ (তিরমিজি, ৩৪৪৫)

সম্ভব হলে বৃহস্পতিবার সফর শুরু করা: সম্ভব হলে বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া বা সফর শুরু করা উত্তম। কাব বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবারে বের হলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পছন্দ করতেন।’ (বুখারি, ২৯৪৯)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিনে কমই সফরে বের হতেন।’ (বুখারি, ২৯৪৯)

দিনের প্রথম অংশে বা রাতে সফর শুরু করা: অন্যান্য কাজের মতো সকাল সকাল সফরে বের হওয়াও সফরের অন্যতম আদব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও। আর তিনি যখন ছোট-বড় কোনো অভিযানে সেনাবাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদের সকালে পাঠাতেন। (আবু দাউদ, ২৬০৬)। সম্ভব হলে রাতের বেলায় সফর করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ফজরের আগে অন্ধকার অবস্থায় সফর করা উচিত। কারণ রাতের বেলা জমিন সংকুচিত হয়।’ (আবু দাউদ, ২৫৭১)

ভ্রমণকালে পালনীয় কিছু সুন্নত ও আদব রয়েছে, সেগুলো হলো

ভ্রমণের শুরুতে দোয়া পাঠ করা: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে বের হওয়ার সময় উটের ওপর ধীরস্থিরতার সঙ্গে বসার পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এই দোয়াটি পাঠ করতেন, বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখার লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিনা ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লা মুনকালিবুন। বাংলা অর্থ: ‘মহা পবিত্র সেই সত্তা, যিনি একে আমাদের জন্য (বাহনকে) অনুগত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।’ (মুসলিম, ১৩৪২)

সৎ বা ভালো লোকের সঙ্গী হয়ে সফর করা: সফরে ভালো সঙ্গী থাকা জরুরি। কারণ সঙ্গী-সাথির প্রভাবে মানুষ ভালো-মন্দের দিকে ধাবিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সৎ সঙ্গীকে সুগন্ধির সঙ্গে তুলনা করেছেন। যার সঙ্গে থাকলে সুগন্ধি পাওয়া যায়। আর অসৎ সঙ্গীকে কামারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যার সঙ্গে থাকলে কাপড় জ্বালিয়ে দেবে অথবা দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে। (বুখারি, ৫৫৩৪)

একাকী সফর না করা: সফরকালে একাকী না গিয়ে তিনজন বা তার বেশি লোকের সঙ্গে সফর করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একাকী সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দুজন সফরকারী দুটি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা।’ (আবু দাউদ, ২৬০৭)

আমির বানানো: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি একত্রে সফর করলে তারা যেন নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে আমির বানায়।’ (আবু দাউদ, ২৬০৮)

একত্রিত থাকা: আবু সালাবা আল-খুশানি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লোকজন যখন কোনো স্থানে (বিশ্রামের জন্য) নামতেন, তখন তারা বিভিন্ন গিরিপথে ও উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের বলতেন, ‘এসব গিরিপথে ও পাহাড়ি উপত্যকায় তোমাদের বিভক্ত হয়ে পড়াটা শয়তানের ষড়যন্ত্র।’ (আবু দাউদ, ২৬২৮)

তাসবিহ পাঠ করা: সফরে বা অন্য যেকোনো সময় উঁচু স্থানে উঠতে ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। (বুখারি, ২৯৯৩)

বেশি বেশি দোয়া করা: সফর অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। তাই সফর অবস্থায় বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। ১. পিতা-মাতার দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া।’ (আবু দাউদ, ১৫৩৬)

সফরে কুকুর বা ঘণ্টা না রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফেরেশতারা ওই সফরকারী দলের সঙ্গে অবস্থান করেন না, যাতে কোনো কুকুর বা ঘণ্টা থাকে।’ (মুসলিম, ৫৪৩৯)

সঙ্গী-সাথীদের সাহায্য করা: আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা কোনো সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি সওয়ারিতে আরোহণ করে আগমন করল। অতঃপর সে তার দৃষ্টি ডানে-বামে ফিরানো শুরু করল। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যার কাছে অতিরিক্ত সওয়ারি আছে; সে যেন তা তার জন্য নিয়ে আসে যার সাওয়ারি নেই। আর যার কাছে নিজের পাথেয়র অতিরিক্ত পাথেয় আছে; সে যেন তার জন্য তা নিয়ে আসে, যার পাথেয় নেই।’ (মুসলিম, ১৭২৮)

পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা: সফরে সব ধরনের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

মাহরাম ছাড়া নারীদের একাকী সফর না করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারীরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছাড়া সফর করবে না। মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর কাছে গমন করতে পারবে না।’ (বুখারি, ১৮৬২)

অপচয় না করা: সফর অপচয় যেন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। (সুরা ইসর, আয়াত: ২৭)

আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানে সফর না করা: আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির এলাকায় যথাসম্ভব প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একান্ত প্রবেশ করতে হলে কান্নারত অবস্থায় প্রবেশ করবে। (বুখারি, ৪৩৩)

নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার পর দোয়া পড়া: খাওলাহ বিনতু হাকিম (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো স্থানে অবতরণ করে যে এই দোয়াটি পাঠ করবে; ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো জিনিস তার অনিষ্ট করতে পারবে না। দোয়াটি হলো, বাংলা উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তামমাতি মিন শাররি মা খালাক। বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি সকল কিছুর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম, ২৭০৮)

যানবাহনের ওপর নামাজ আদায় করা: সফর অবস্থায় যানবাহনে নামাজ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ইশারায় রুকু ও সিজদা করতে হবে। রুকু থেকে সিজদায় মাথা তুলনামূলক একটু বেশি ঝুঁকাতে হবে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফরে ফরজ নামাজ ছাড়া তাঁর সওয়ারিতেই ইশারায় রাতের নামাজ আদায় করতেন; সওয়ারি যে দিকেই ফিরুক না কেন। এ ছাড়া তিনি বাহনের ওপরেই বিতর আদায় করতেন।’ (বুখারি, ১০০০)

ভ্রমণ থেকে ফেরার সময়ের সুন্নত ও আদবগুলো হলো

যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পরিবারের কাছে ফেরা: সফর হলো কষ্টের স্থান। তাই সফরের কাজ শেষ হলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পরিবারের কাছে ফিরে আসা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সফর আজাবের অংশবিশেষ। যথাসময়ে পানাহার ও নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই সে যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আপনজনের কাছে ফিরে যায়।’ (বুখারি, ১৮০৪)

হঠাৎ করে রাতে বাড়িতে প্রবেশ না করা: দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে হঠাৎ করে বা কোনো প্রকার অবহিতকরণ ছাড়া রাতে বাড়িতে প্রবেশ করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে কখনো (সফর থেকে ফিরে) পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না। তিনি প্রভাতে কিংবা বিকাল ছাড়া পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না।’ (বুখারি, ১৮০০)

নামাজ আদায় করা: কাব বিন মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি, ৪৪৩)

অভ্যর্থনা জানাতে এলে তাকে সম্মান করা: সফরকারীকে কেউ অভ্যর্থনা জানাতে এলে আগত ব্যক্তিকে সম্মান করা উচিত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় এলে আব্দুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে স্বাগত জানায়। তিনি অভ্যর্থনাকারীদের একজনকে তাঁর সওয়ারির সামনে ও অন্যজনকে পিছনে তুলে নেন।’ (বুখারি, ৭৯৮)

পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য কিছু নিয়ে আসা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া দাও, তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (বায়হাকি, ৬/১৬৯)

সফর থেকে ফিরে দোয়া পাঠ করা: আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন,  রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর থেকে ফিরে এসে এ দোয়াটি পড়তেন। দোয়াটি হলো, বাংলা উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা লিরব্বিনা হামিদুন। বাংলা অর্থ: আমরা প্রত্যাবর্তন করলাম তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের মহান রবের প্রশংসাকারী হিসেবে। (মুসলিম, ১৩৪২)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক