![স্বজনহারা মানুষকে সান্ত্বনা দেবেন যেভাবে](uploads/2024/05/14/88-1715669348.jpg)
মুসলমান ভাই ভাই। এ সম্পর্কে কোনো কৃত্রিমতা নেই, কোনো দোটান নেই। এ সম্পর্ক মহান আল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১০)। এ সম্পর্কের মায়া ও টানে মুসলমান পরস্পরের সুখে আনন্দিত হয়। দুঃখে কাঁদে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর প্রাচীরের মতো, যা একটি অপরটিকে মজবুত করে। এই বলে তিনি তাঁর আঙুলগুলো পরস্পর মিলিয়ে দেখান।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৮০)
কোনো মুসলিমের আত্মীয় মারা গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে সান্ত্বনা দিতেন। তাকে বুঝাতেন। তার কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে তার মুমিন ভাইয়ের বিপদে সান্ত্বনা দেবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬০১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে কোনো বিপন্নকে সান্ত্বনা দেয়, সে তার সমান প্রতিদান পায়। ’(তিরমিজি, হাদিস: ১০৭৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্ত্বনার ভাষা ছিল খুবই চমৎকার। তিনি এমন কথা বলে সান্ত্বনা দেন, যা ব্যক্তির দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণ সুনিশ্চিত করত। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মেয়ে (জয়নব) তাঁর খেদমতে লোক পাঠিয়ে বললেন, ‘আমার এক ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায়, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন।’ তিনি বলে পাঠালেন, ‘(তাকে) সালাম দেবে এবং বলবে, সবকিছু আল্লাহরই অধিকারে যা-কিছু তিনি নিয়ে যান। আর তাঁরই অধিকারে যা-কিছু তিনি দান করেন। তাঁর কাছে সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। সুতরাং সে যেন ধৈর্যধারণ করে এবং প্রতিদানের আশায় থাকে।’ তখন তিনি তাঁর কাছে শপথ দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আসেন। তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাদ ইবনে উবাদা, মুয়াজ ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে তুলে দেওয়া হলো। তখন তিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমার ধারণা, তিনি এ বলেছিলেন, যেন তার শ্বাসে মশকের মতো (আওয়াজ হচ্ছিল)। আর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সাদ (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, এ কী?’ তিনি বললেন, ‘এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দার অন্তরে আমানত রেখেছেন। আর আল্লাহ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।” (বুখারি, হাদিস: ১২২৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃতের স্বজনদের জন্য খাবার পাঠাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) বলেন, “(আমার পিতা) জাফর (রা.)-এর শাহাদতের সংবাদ যখন পৌঁছে, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিলেন, ‘জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো; কারণ, তাদের এমন খবর এসেছে, যা নিয়ে তারা ব্যতিব্যস্ত রয়েছে।” (তিরমিজি, হাদিস: ৯৯৮)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক