![পর্যটকদের নিরাপত্তায় যুক্ত হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ](uploads/2024/01/18/1705594318.TP.jpg)
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের আটটি বিমানবন্দরে পর্যটকদের বহুমুখী সেবা, নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে যুক্ত হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। বিমানবন্দরে এপিবিএন ও ইমিগ্রেশন পুলিশের পর পুলিশের এই তৃতীয় বিভাগকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এতে বিমানবন্দর ঘিরে চতুর্মুখী নিরাপত্তাবলয় গড়ে উঠবে বলে আশা করছে পুলিশ।
শাহজালাল বিমানবন্দরে পুলিশের অন্যতম শাখা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১ হাজার ১০০ জন সদস্য মোতায়েন আছেন। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন পুলিশও কাজ করছে।
জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রথমে ১০০ জন সদস্য দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের যাত্রা শুরু হবে শিগগিরই। পর্যায়ক্রমে অন্য বিমানবন্দরগুলোয় তাদের মোতায়েন করা হবে। বাকি বিমানবন্দরগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দর, রাজশাহী বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দর।
পুলিশের এ শাখাটি বিমানবন্দরের পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন বিভাগকে সহযোগিতা করা, যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, বন্দরের চারদিকের নিরাপত্তা জোরদার, কার্গো ভিলেজের পণ্য খালাসের সুষ্ঠু তদারকি করবে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তারা একাধিক হেল্পডেস্কে দায়িত্ব পালন করবে। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ মূলত যাত্রীদের বিদেশ আসা-যাওয়ার পাসপোর্ট ও ক্লিয়ারেন্স দিয়ে থাকে। আর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন। তবে প্রতিটি বিমানবন্দরে যে-সংখ্যক এপিবিএনের সদস্য থাকা দরকার, তা এখন নেই। এতে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ মূলত গঠন হয়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু খোদ বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। এখন শাহজালালসহ দেশের আট বিমানবন্দরে কোন প্রক্রিয়ায় ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হবে, তা নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ট্যুরিস্ট পুলিশ) আবু কালাম সিদ্দিকী গতকাল খবরের কাগজকে জানান, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব শাহাজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান গতকাল খবরের কাগজকে জানান, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকেই আমাদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ট্যুরিস্ট পুলিশ মূলত ইমিগ্রেশন পুলিশ ও এপিবিএনের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে কাজ করবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণে কাজ করবে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্পডেস্ক স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হচ্ছে। যেহেতু কক্সবাজার পর্যটননগরী, সেহেতু সেখানে জনবল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো থাকবে।
সূত্র জানায়, পর্যটনশিল্পের বিকাশে ২০১৩ সালে ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন করে সরকার। বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে এ ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে। এই বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব স্থানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি সেখানে নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। বর্তমান সময়ে তারা ঢাকার হাতিরঝিল ও চিড়িয়াখানায় দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ হিসেবে ভাবা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে। এ বিমানবন্দর দিয়ে প্রচুর পর্যটক এ দেশে আসেন। এ ছাড়া অন্যান্য বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটক আসা-যাওয়া করে থাকেন। জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। কিন্তু বিমানবন্দরগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ট্যুরিস্ট পুলিশ বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের বাংলাদেশে পরিবহনব্যবস্থা ও হোটেলের ঠিকানা দেবে। দেশের আইনের বিষয়ে তাদের অবহিত করবে। ট্যুরিস্টদের ইমিগ্রেশন সমস্যার সমাধান ও হারানো পণ্য উদ্ধারে কাজ করবে। বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার সময় কেউ প্রতারিত হলে সেটিও তারা দেখবে।
সূত্র জানায়, ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের সেবার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল করবে। বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে যারা গ্রাম থেকে আসেন তারা একটি চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। এ ছাড়া একটি চক্র গড়ে উঠেছে, যারা বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের দেখামাত্রই নিজেদের গাইড হিসেবে পরিচয় দেন।
পরে তারা বিভিন্ন ছলে-কৌশলে পর্যটকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা ও মূলবান জিনিসপত্র। ট্যুরিস্ট পুলিশের ডেস্ক স্থাপন হলে বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা আলাদাভাবে সেবা পাবেন।
সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্য দেশ থেকে আসা ট্যুরিস্টদের ইমিগ্রেশনে বেগ পেতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ শৃঙ্খলা রক্ষা করবে।