![ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নড়তে চান না কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা](uploads/2024/03/31/1711861974.Karwan-bazar.jpg)
কারওয়ান বাজার এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানকার পাইকারি মার্কেট আমিনবাজারে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি পরিকল্পিত এবং সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কাঁচাবাজারের পরিবেশ পাবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম এমন আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেটা মানতে নারাজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী নেতা সবাই।
তারা বলছেন, ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’র মতো অবস্থা আমাদের। আগে যাত্রাবাড়ীতে সরানোর কথা বলা হয়েছিল। হঠাৎ করে গাবতলীতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ সেখানকার পরিবেশ খুবই সংকীর্ণ। কারওয়ান বাজারের চারদিকে সড়ক। সারা দেশ থেকে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ ট্রাক কাঁচামাল নিয়ে এখানে ঢুকতে পারে। কিন্তু আমিনবাজারে প্রস্তাবিত পাইকারি বাজারে একসঙ্গে এত ট্রাক প্রবেশ করে অল্প সময়ের মধ্যে মাল খালাস করে বেরিয়ে যেতে পারবে না। ফলে নষ্ট হবে কাঁচামাল, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী স্থানান্তর ইস্যুতে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
কারওয়ান বাজার সিটি করপোরেশন মার্কেটের আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাউদুর রহমান চৌধুরী সুজন খবরের কাগজকে বলেন, ‘১২ দিন আগে মেয়র এসে বলে গেছেন, সরে যেতে হবে গাবতলীতে। কিন্তু সেখানে তো কোনো জায়গা দেওয়া হয়নি। আগে যাত্রাবাড়ীতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমরাও প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে বললেই তো যাওয়া যায় না। সেখানকার সড়ক সংকীর্ণ। একসঙ্গে ৪০০-৫০০ ট্রাক ঢুকতে এবং বের হতে পারবে না। এই মার্কেটে স্থায়ীভাবে বরাদ্দপ্রাপ্ত সব মিলিয়ে ৪৭৬ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের পুনর্বাসন করার পরই সরানো যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়রের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। কারণ ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’র মতো করলে তো হবে না। সবকিছুর ব্যাপারে সময় দেওয়া হয়। আমাদের এখানেও দিতে হবে।’ অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এই আড়তদার নেতা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হলে এই মার্কেটে কীভাবে ২০ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস থাকল? আগে ভাঙল না কেন?
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, ‘ঈদের পর কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেট ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছে। অথচ সেই আমিনবাজারে কোনো স্থাপনাই নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সবজির পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা মার্কেট চাই। যানজটের কথা বলা হচ্ছে। কারওয়ান বাজার থেকে আমাদের মার্কেট সরলেই যে ঢাকা শহরের যানজট কমবে, এমন কোনো তথ্য নেই।’
কারওয়ান বাজার ইসলামিয়া শান্তি সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, কারওয়ান বাজারে পুরো ঢাকা শহর থেকে সহজে আসা যায়। এই কারওয়ান বাজার ঘিরে চারদিকে রাস্তা থাকায় সহজেই পণ্যবাহী শত শত ট্রাক এখানে প্রবেশ করে, দ্রুত মাল খালাস করা যায়। অথচ আমিনবাজারের যেখানে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তরের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে একসঙ্গে ৫০০-৭০০ ট্রাক ঢোকা ও বের হওয়ার মতো কোনো সড়ক নেই। এসব ট্রাক একসঙ্গে ঢুকলে সেখানে এমন যানজট তৈরি হবে যে মাল ট্রাকেই পচতে থাকবে। ট্রাক থেকে খালাস করার মতো উপায় থাকবে না। আমিনবাজারে যে মার্কেট করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাঁচামাল রাখার উপযুক্ত না। কারণ কাঁচামালের জন্য প্রয়োজন আলো-বাতাসযুক্ত খোলামেলা পরিবেশ। এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
দীর্ঘদিন আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে কারওয়ান বাজার সরানোর কথা বলা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের গাবতলীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বশেষ গত ১৮ মার্চ এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সিটি করপোরেশন। সেখানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, গাবতলীতে যে কাঁচাবাজার রয়েছে, সেটি পরিকল্পিতভাবে সব কমপ্লায়েন্স মেইনটেইন করে নির্মাণ করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই ভবন নির্মিত। অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ। চারটি বহির্গমন পথও রয়েছে গাবতলীর কাঁচাবাজারে। ট্রাক থেকে মালামাল আনলোড করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। ব্যবসায়ীদের জন্য বিশ্রামাগারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নদীপথেও মালামাল পরিবহন করা যাবে। বাজারের পাশ দিয়েই আট লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মার্কেট থেকে মেইন রোডের সংযোগ সড়ক ঈদের আগেই নির্মাণ করে দেওয়া হবে। দ্রুত গাবতলীতে কারওয়ান বাজার স্থানান্তর করে ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।
মেয়র আরও বলেন, কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া কারওয়ান বাজারে ট্রাক আসা-যাওয়ার ফলে রাস্তা বন্ধ করে মালামাল নামানো হয়। সেখানে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। রাস্তায় প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট নেতৃত্বে ঢাকার উন্নয়ন প্রসারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী স্মার্ট শহরের কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই পাইকারি কাঁচাবাজার কোনোভাবেই থাকতে পারে না।
তার পরও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা সরতে চাচ্ছেন না। তারা বলছেন, এখানে খুচরা-পাইকারি পর্যায়ে সব পণ্য কেনার জন্য ক্রেতারা খুব সহজে আসতে পারেন। মুদি, সবজি থেকে শুরু করে হার্ডওয়্যার সব ধরনের পণ্য বেচাকেনার সুযোগ রয়েছে। গাবতলীতে গেলে যাতায়াত সমস্যা হবে। সেখানে ব্যবসা হবে না।