![লাইলস-লেব্রনে মার্কিনি দাপট](uploads/2023/12/28/1703737197.Athletics Saltamami.jpg)
২০০৮ থেকে ২০১৭। ৯টি বছর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে রীতিমতো গতির কাঁপন তুলেছিলেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট। গ্রহের সবচেয়ে দ্রুততম মানবটি অবসরে যাওয়ার পর তার জায়গা নিতে পারেনি কেউ। বিশেষ করে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে বোল্টের রেকর্ড আজও অক্ষত, জ্বলজ্বলে দেদীপ্যমান বোল্টপরবর্তী অ্যাথলেটিকস যুগ তাই অনেকটা ধূসর। তার পরও ২০২৩ সালে গতির ঝড় তুলে লাইমলাইটে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেট নোয়া লাইলস। দ্রুততম মানবী একই দেশের রিচার্ডসন। বাস্কেটবলে অল টাইম স্কোরারের সুবাদে অমরত্বের দিকে লেব্রন জেমস। বছরটা ছিল যেন মার্কিনিদের দখলে। বিদায়ী বছরে অ্যাথলেটিকসসহ অন্যান্য ইভেন্ট নিয়ে লিখেছেন মাহমুদুন্নবী চঞ্চল-
বোল্টকে ছোঁয়ার নেশা লাইলসের
উসাইন বোল্ট। গ্রহের দ্রুততম মানব। কয়েক বছর আগে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডকে বিদায় জানালেও জ্যামাইকান এই কিংবদন্তির কয়েকটি রেকর্ড এখনো জ্বলজ্বলে। বিশেষ করে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে। ২০০৯ সালে বার্লিনে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে বোল্টের করা দুই রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেননি কেউ। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ৯.৫৮ সেকেন্ড, ২০০ মিটারে ১৯.১৯ সেকেন্ড; বিশ্বরেকর্ড আজও অক্ষত। প্রায় ১৪ বছর ধরে এই রেকর্ড সমুন্নত রয়েছে বোল্টের।
সেই বোল্টকে স্পর্শ করার প্রবল নেশায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার নোয়া লাইলস। সাম্প্রতিক সময়ে লাইলসের সঙ্গে ফ্রেড কার্লি ও ফার্দিনান্দ ওমানিয়ালাও উচ্চকিত নাম। তবে সবার চেয়ে এগিয়ে অনেকটা লাইলস। কারণ ২০২৩ সালটি দারুণ কেটেছে এই মার্কিনির। বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ ও ২০০ মিটারসহ তিনটি স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। এ বছরের দ্রুততম মানবও তিনি। জিতেছেন বিশ্ব অ্যাথলেট অব দি ইয়ারের পুরস্কারও।
১০০ মিটার স্প্রিন্টে সাম্প্রতিক সময়ে বোল্টের কাছাকাছি যেতে পারেননি কেউ। ২০২২ সালে ফ্রেড কার্লির সর্বোচ্চ টাইমিং ছিল ৯.৭৬ সেকেন্ড। একই বছরে কমনওয়েলথ গেমসে চ্যাম্পিয়ন ফার্দিনান্দ ১০০ মিটারে সময় নিয়েছিলেন ৯.৭৭ সেকেন্ড। সেই তুলনায় ২০২৩ সালে পিছিয়ে ছিলেন লাইলস। ব্যক্তিগত সেরা ৯.৮৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি জেতেন বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ। ২০০ মিটারে ১৯.৩১ সেকেন্ড, যা লাইলসের ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং। একই আসরে লাইলস জেতেন ৪০০ মিটার রিলেতেও। সব মিলিয়ে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের এ বছরটি ছিল ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির উচ্চতার ২৬ বছর বয়সী এই স্প্রিন্টারের।
উসাইন বোল্ট সব অ্যাথলেটদের জন্য আদর্শ তথা অনুপ্রেরণার নাম। জ্যামাইকান কিংবদন্তির ভক্ত নোয়া লাইলসও। গুরু মানলেও বোল্টের রেকর্ড স্পর্শ করার স্বপ্ন রয়েছে তার মনে। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে লাইলস বলেছিলেন, ‘বোল্ট গ্রহের সেরা। তার রেকর্ড ভাঙা বেশ কঠিন। তবে রেকর্ড হয়ই রেকর্ড ভাঙার জন্য। সে লক্ষ্যেই আমার পথচলা।’
দ্রুততম মানবী রিচার্ডসন
নোয়া লাইলসের মতো বিশ্ব অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে এবার আলো ছড়িয়েছেন সা ক্যারি রিচার্ডসন। ২৩ বছর বয়সী মার্কিন এই তরুণী প্রথমবারের মতো জেতেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ। বুদাপেস্টে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে তিনি সময় নেন ১০.৬৫ সেকেন্ড। যা ছিল এই চ্যাম্পিয়নশিপের রেকর্ড টাইমিং। স্বর্ণ জেতার এই লড়াইয়ে রিচার্ডসন পেছনে ফেলেন জ্যামাইকার শেরিকা জ্যাকসন ও শেলি অ্যান্ড ফ্রেজার প্রাইসকে। ১০.৭২ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্বিতীয় হন শেরিকা। ১০.৭৭ সেকেন্ডে ব্রোঞ্জ জেতেন শেলি। ১০০ মিটার জিতে বছরের দ্রুততম মানব হলেও ২০০ মিটারে হতাশ করেন রিচার্ডসন। ২১.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি জেতেন ব্রোঞ্জ। এই ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন জ্যামাইকার শেরিকা জ্যাকসন। রৌপ্য পদক জেতেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাব্রিয়েল থমাস। ২০০ মিটারে হারলেও প্রথমবারের মতো বিশ্বের দ্রুততম মানবী হওয়ার আনন্দে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন রিচার্ডসন। কারণ প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে এসেই বাজিমাত করেন তিনি।
বর্ষসেরা নারী অ্যাথলেট ফেইথ কিপয়েগন
দূরপাল্লার দৌড়ে বেশ সুখ্যাতি কেনিয়ার ফেইথ কিপয়েগনের। এ বছরটা ছিল তার জন্য সোনায় সোহাগা। বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ড গড়ে তিনি স্বর্ণ জেতেন ১৫০০ ও ৫০০০ মিটার দৌড়ে। তার সুবাদে বর্ষসেরার নারী অ্যাথলেটের পুরস্কারও যায় তার শোকেসে। ১৫০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণ জিততে কিপয়েগন সময় নেন ৩ মিনিট ৫৪.৮৭ সেকেন্ড। পেছনে ফেলেন ইথোপিয়ার দিরিব ওয়েলজি ও নেদারল্যান্ডসের সিফান হাসানকে। ৫ হাজার মিটার দৌড়ে কিপয়েগন সময় নেন ১৪ মিনিট ৫৩.৯৯ সেকেন্ড। কেনিয়ার বিট্রিস চেবেট হন তৃতীয়। ডাচ দৌড়বিদ সিফান হাসান জিতে নেন রৌপ্য পদক।
বসের অশ্রুসিক্ত বিদায়
২০২৪ সালে প্যারিসে বসবে অলিম্পিকের জমজমাট আসর। তার আগেই স্বপ্নভঙ্গ ফ্রান্সের পিয়ের-অ্যামব্রোস বসের। ইনজুরির কাছে হার মেনে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ৮০০ মিটারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই অ্যাথলেট। অথচ বসের স্বপ্ন ছিল নিজ দেশে অনুষ্ঠেয় প্যারিস অলিম্পিকে দাপিয়ে বেড়ানো। কিন্তু উরুর ইনজুরি থেকে আর মুক্তই হতে পারেননি। গত বছরে চোটে পড়া বস ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের বাইরে এ বছরের এপ্রিল থেকে। চোট সারাতে তাকে করতে হয়েছে অস্ত্রোপচারও। তার পরও ফিট হতে পারেননি। গত মঙ্গলবার অশ্রুসিক্ত নয়নে দেন অবসরের ঘোষণা। ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক এল’ইকুয়েপে তিনি বলেন, ‘ফেরার চেষ্টা ছিল অনেক। কিন্তু ব্যথা যাচ্ছিল না। অপারেশনের পর ভালো লাগছিল। সাহস পাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অ্যাথলেটিক আর উপভোগ করতে পারছি না। তাই বিদায় বলাটাই শ্রেয়।’
২০১৭ সালে লন্ডনে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৮০০ মিটারে চ্যাম্পিয়ন হন পিয়ের-অ্যামব্রোস বস। এরপর থেকে সেই ফর্মে আর ফেরাই হয়নি ধারাবাহিক চোটের কারণে। প্রিয় ইভেন্টে ২০১২ ও ২০১৮ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল প্যারিস অলিম্পিক নিয়ে। কিন্তু তাকে হার মানতে হলো ইনজুরির কাছে।
অল টাইম স্কোরার লেব্রন জেমস
বাস্কেটবলের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা কে? মাইকেল জর্ডান না লেব্রন জেমস? জর্ডান ছয়বার এনবিএ শিরোপা জিতেছেন, আর জেমস এখন পর্যন্ত জিতেছেন চারবার, জর্ডান পাঁচবার এনবিএর মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হয়েছেন, জেমস জিতেছেন চারবার। অলিম্পিকে দুবার করে স্বর্ণপদক জিতেছেন দুজনই। তবে জেমস এ বছর যে রেকর্ড গড়েছেন, তাতে সেরা বলা হচ্ছে তাকেই। এনবিএর ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোরার এখন লেব্রন জেমস। যুক্তরাষ্ট্রের এই কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড় ভেঙেছেন করিম আব্দুল জব্বারের দীর্ঘদিনের রেকর্ড।
গত ফেব্রুয়ারিতে ৩৮,৩৫২ পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচে নেমেছিলেন জেমস। বাস্কেটবলে প্যাট রাইলি, জুলিয়াস আরভিংদের চোখে শেষ কথা করিমের রেকর্ড ভাঙতে ৩৬ পয়েন্ট দরকার ছিল তার। ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে অমরত্বের তালিকায় নিজেকে সবার ওপরে নিয়ে যান জেমস (৩৮,৩৯০ পয়েন্ট)। ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০.৯ সেকেন্ড আগে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ছাড়িয়ে বল থ্রো করতে একটু পিছিয়ে (ফেডওয়ে জাম্প) ঝুড়িবন্দি করেন জেমস। এরপর থেকে অনেকটা ক্রিস গেইলের মতো নিজেকে সেরা বলতে দ্বিধাবোধ করেন না লস অ্যাঞ্জেলস লেকার্সের হয়ে খেলা জেমস। রেকর্ড স্কোরার হওয়ার পর লেব্রন যেমনটি বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এই খেলায় যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। আমি জানি, আমি কি করতে পারি, তাই সব সময় মনে হয়, এই খেলায় আমিই সর্বকালের সেরা।’