![খুলনার হার এবং বিজয়ের ব্যাটিং!](uploads/2024/02/10/1707558495.Anamul-Haque-Bijoy-KT..jpg)
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ চার বলের তিনটিতেই রিভার্স সুইপ করে থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে বল সীমানার বাইরে ফেলেন এনামুল হক বিজয়। তিন রিভার্স সুইপে পান এক ছক্কা ও দুই চার। শেষের এই উড়ন্ত ব্যাটিংয়ে ইনিংস শেষে স্কোরকার্ডে বিজয়ের নামের পাশে ছিল ৫৮ বলে ৬৭ রান। শেষ চার বলে ১৪ রান করা বিজয় পুরো ইনিংসে ছিল শম্বুক গতিতে। ইনিংস ক্যারি অন করে খেলা ৫৮ বলের ৩২.৭৬ শতাংশ বল থেকে রান নিতে পারেননি। চার হাঁকানোতে ছিলেন অনিয়মিত। প্রথম চার হাঁকানোর পর দ্বিতীয়টার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৫ বল। -তৃতীয়টার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ১৮ বল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় চার হাঁকানোর মাঝে অবশ্য একটা ছক্কা হাঁকান বিজয়। তবুও পুরো ইনিংসজুড়ে তার ব্যাটিং ছিল দৃষ্টিকটু। তার এমন দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ের পরও খুলনা টাইগার্স পায় ১৫৩ রানের সংগ্রহ। মিরপুরের উইকেট বিবেচনায় এই সংগ্রহ লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বোলিংয়ে ঠিকঠাক পরিকল্পনায় এগোতে না পারায় সিলেটের কাছে ম্যাচ হারতে হয় ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ হারল খুলনা টাইগার্স। এক সময় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা খুলনা এই হারে চারে নেমে গেছে। ৭ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৮। অপরদিকে সিলেটের ছিল তৃতীয় জয়। তবে তা টানা নয়। ৯ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৬ হলেও পয়েন্ট টেবিলে অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। ছয়েই আছে তারা।
এনামুল যেভাবে শম্বুক গতিতে ব্যাটিং করেছেন, উইকেট কিন্তু সে রকম ছিল না। এমন উইকেটেও যে ঝড়ো ব্যাটিং করা যায় সেটা প্রমাণ করেছেন হাবিবুর রহমান সোহান ও রায়ান বার্ল। বিজয়কে একপ্রান্তে রেখে উইকেটে ঝড় তোলেন হাবিবুর রহমান সোহান। বিজয়ের এমন দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ের বিপরীতে ৩০ বলে খেলেন ৪৩ রানের ইনিংস সোহান। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার সময় ১৬ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলেন রায়ান বার্ল।
বিজয়ের এমন ব্যাটিংয়ের পর খুলনার বোলাররাও ছিলেন ছন্নছাড়া। ফলে খুলনার এই ম্যাচ হারের দায় অবশ্য বোলারদের কাঁধেও বর্তায়। খুলনা শিবিরের সব বোলারই ছিলেন খরুচে। শুধু কী খরুচে? একের পর এক বাজে বল করে গেছেন তারা। সেই স্রোতে দাঁড়িয়ে এবারের বিপিএলে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পাওয়া রুবেল হোসেন তো দুই ওভারে দেন ৩৬ রান। তার দ্বিতীয় ও ইনিংসের ১৯ নম্বারে রায়ান বার্ল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ৩ ছক্কা ও এক চারে নেন ২৪ রান। সুমন খান-কাসুন রাজিথারাও ছিলেন খরুচে। দুজনই তিন ওভার করে বল করে খরচ করেন যথাক্রমে ৩৬ ও ২৯ রান। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে মার্ক দেয়াল নেন ১৯ রানে তিন উইকেট।
দেয়ালের বোলিংয়ে শুরুর দিকে বেঁচে ছিল খুলনা টাইগার্সের জয়ের আশা। ৬৫ রানের মাথায় পর পর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদেই ছিল সিলেট। তবে সেখান থেকে সিলেটকে জয়ের পথে আনার মূল কাজটা করেন আইরিশ ব্যাটার হ্যারি টেক্টর ৬১ রানের ইনিংস খেলে। এটা নিয়ে খানিকটা হতাশ টেক্টর বলেন, ‘কোনো রান না করে দুই উইকেট হারানো বেশ হতাশাজনক। কারণ, রান রেট প্রায় আটের ঘরে ছিল। খেলাটা ভালো উইকেটে হচ্ছিল।’ তার ওই হতাশা কেটে গেছে দল জয় পাওয়ায়। এই জয়ের পেছনে বড় অবদান রাখা টেক্টরের ব্যাটিং শুরু হয় ধীরগতিতে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে তার রান তোলার গতি। শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে তার ব্যাটে আসে ৬১ রান। তার ইনিংসে ছিল ছয় চার ও তিন ছক্কা। টেক্টরের গড়ে দেওয়া ওই ভিতে সিলেটকে জয়ের বন্দরে নোঙর করান ম্যাচ সেরা জিম্বাবুইয়ান রায়ান বার্ল। ১৬ বলে খেলেন ৩২ রানের ইনিংস।
ম্যাচের ফল ছাপিয়ে খুলনার হারের জন্য দায়ী বিজয়ের এমন শম্বুক গতির ব্যাটিং, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বিজয় অবশ্য দায় দেখেন নিজ দলের বোলারদের। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বোলিং নিয়ে হতাশ। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা ১৫৩ করেছি। এটা খারাপ না। কিন্তু বোলিংয়ে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারেনি। দেয়াল ভালো বোলিং করেছে। তার মতো অন্যরা করলে ভিন্ন ফল আসতে পারত।’