গত বছর এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তানজিদ হাসান তামিমের। মাত্র ৫ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দলেরও সঙ্গী হন তিনি। বাঁহাতি এই ওপেনার বিশ্বকাপে খেলেছেন সব ম্যাচেই। তবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি মোটেও। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে স্কোয়াডে থাকলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। শ্রীলঙ্কা সিরিজেও ওয়ানডে স্কোয়াডে আছেন। সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে দারুণ ছন্দে ছিলেন। যে কারণে এবার তার ওপর বাড়তি নজর থাকছে। এখন পর্যন্ত ১৪ ওয়ানডে খেলা তানজিদ তামিম নিজেকে মেলে ধরতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপে নিজের ব্যর্থতা, বিপিএল সাফল্য ও শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রত্যাশা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ
বিপিএলের পর বেশ কদিন ছুটিতে ছিলেন। কেমন উপভোগ করলেন ছুটি?
আলহামদুলিল্লাহ, পরিবারের সঙ্গে অনেক দিন থাকা হয় না। এবার বেশ কয়েক দিন থাকতে পেরেছি বাবা-মার সঙ্গে। আমার বোন আছে, ছোট ভাগনে আছে। সবার সঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো সময় কেটেছে।
বিপিএল বেশ ভালো কেটেছে আপনার। এরপর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটালেন। ওয়ানডে সিরিজে নিশ্চয়ই সতেজ একজন তানজিদকেই পাওয়া যাবে?
ইন্শাআল্লাহ।
এশিয়া কাপ দিয়ে দলে আসা আপনার। খেলেছেন ২০২৩ বিশ্বকাপেও। তামিম ইকবালের জায়গায় আপনার পারফরম্যান্স অবশ্য ভালো হয়নি। নিশ্চয়ই অনেক চাপ ছিল?
সত্যি বলতে কখনো এভাবে চিন্তা করিনি যে, কার জায়গায় আমি দলে এসেছি। আমার কাছে যখন সুযোগটা এসেছিল, চেষ্টা করেছি তা কাজে লাগানোর। হয়তো বা পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা ছিল। তবে একটা কথা আমি বারবার বলি। যেটা আমি আজ থেকে ২ বছর পর শিখতে পারতাম, সেই জিনিসটা হয়তো বা এই পর্যায়ে কিছুটা হলেও শিখতে পেরেছি, যা সামনে কাজে লাগবে।
খুব কম ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনার বিশ্বকাপ খেলা। এমন কি মনে হয়, এত বড় আসরের আগে আপনাকে আরও প্রস্তুত করা দরকার ছিল?
না, সেটা না। এখন এমন একপর্যায়ে আছি যেখানে সব সময়ই আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত। আর কখনো আমি ওভাবে চিন্তা করিনি যে এটা আমার জন্য চাপ। ক্রিকেট খেলা এমনিতেই চাপের। সব পরিস্থিতিতে চাপ থাকবেই। সেই চাপের পরিস্থিতি আমরা কীভাবে সামাল দেব, সেটা হচ্ছে প্রধান বিষয়। এটা আপনি বিশ্বকাপ বা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, যেখানেই খেলেন না কেন। তবে ওই সময়টা (বিশ্বকাপ) আমাদের জন্য বাজে সময় ছিল। আমি নিজেও ভালো করতে পারিনি। সব মিলিয়ে এটা (বিশ্বকাপ) ভুলে যাওয়াই ভালো। তবে আমার জন্য এটা একটা শিক্ষণীয় ছিল। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বিশ্বের টপ ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলা হয়েছে। একটু আগে যেটা বললাম, যেটা আমি ২ বছর পর শিখতে পারতাম, হয়তো বা আমি সেটা বিশ্বকাপেই শিখতে পেরেছি।
বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ড সফরের স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে খেলা হয়নি। এখন শ্রীলঙ্কা সিরিজ। কী আশা করছেন?
আমি আসলে কখনো ওইভাবে কিছু আশা করি না। কোনো কিছু চিন্তা করি না যে কী করব। আমার মনের কোণে একটা জিনিসই সব সময় থাকে, যখনই আমি সুযোগ পাব, দলের জন্য যেন ভালো অবদান রাখতে পারি। যাতে দল উপকৃত হয় আমার জন্য। এটাই আমার চাওয়া।
বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বিকল্প ওপেনার কম ছিলেন। এখন বিকল্প অনেক। নিজেদের মধ্যে নিশ্চয়ই এক ধরনের প্রতিযোগিতা কাজ করছে?
না। যেই সুযোগ পাক না কেন, সবাই চেষ্টা করে দলের জন্য ভালো অবদান রাখার। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি সে রকম।
বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর এভাবে ফিরে আসার রহস্য কী?
তেমন কোনো কাজ করিনি। কোচদের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তারা মানসিকভাবে খুব চাঙা করেছেন। বিপিএলে প্রায় সব ম্যাচে আমি ভালো শুরু পাচ্ছিলাম কিন্তু ইনিংসগুলো বড় করতে পারছিলাম না। শেষের দিকে আমি ওটাই চেষ্টা করেছি যে, ভালো শুরুর পর যেন বড় ইনিংস খেলতে পারি। এটাই ছিল চেষ্টা। এর বেশি কিছু চেষ্টা করিনি।
এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ ইনিংস (১১৬) আপনার। ছক্কায় আপনিই সবার ওপরে (২৪টি)। এ নিয়ে বিশেষ কোনো অনুভূতি আছে?
আমি সব সময় চেষ্টা করি যেন আমি দলের জন্য ভালো কিছু করতে পারি। দল উপকৃত হলে, ফল পেলেই নিজের পারফরম্যান্সের মূল্য থাকে। ছক্কা মেরেছি বা সর্বোচ্চ ইনিংস, সেটা ম্যাচ পরিস্থিতিতে হয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করি বলের ম্যারিট অনুযায়ী খেলার। যেটা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
এখন আপনার পর্যন্ত ১৪ ওয়ানডের ক্যারিয়ার কতটা খুশি নিজেকে নিয়ে?
এখনো খুশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি। আর এমন এক পেশায় আছি, যেখানে সব সময় খুশি হওয়া যায় না। কারণ ভালো সময়, খারাপ সময়, আমাদের সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমার যেহেতু ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে, চেষ্টা করব এটাতে খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। যে ভুলগুলো আমি করেছি, চেষ্টা থাকবে সেটা যেন শুধরে নিতে পারি।
সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিশ্চয়ই এ নিয়ে কোনো লক্ষ্য আছে?.
আমি কখনো এটা চিন্তাও করিনি। আর আমার সে রকম কোনো লক্ষ্যও নেই। এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মিশন আমাদের। এখানেই পুরোপুরি ফোকাস থাকবে। পরে কী হবে না হবে, সেটা জানি না। আমার পূর্ণ মনোযোগ এখন এখানেই।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
আমরা বরাবরই ওয়ানডে ফরম্যাটে খুব ভালো দল। যেহেতু আমাদের ঘরের মাঠে খেলা, অবশ্যই আমাদের সুবিধা থাকবে। আমার যেটা মনে হয়, আমরাই এগিয়ে থাকব। মাঠে নির্দিষ্ট দিনে যারা সেরা ক্রিকেট খেলবে তারাই জয়ী হবে। এখানে তাই অনুমান করার বিষয় নেই। আশা করি ভালো একটা লড়াই হবে।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছেন। এখন সিনিয়র পর্যায়ে খেলছেন। পার্থক্যটা কেমন?
পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। এখানে সবাই পরিণত এবং সবাই টপ খেলোয়াড়। এখানে খেলার আগে সবাইকে নিয়ে অ্যানালাইসিস হয়। কে কোন জায়গায় দুর্বল, কে কোন জায়গায় শক্তিশালী, এসব নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়। সব মিলিয়ে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকে। এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের সবারই নেওয়া উচিত এবং নিতে হবে। এটা যে যত ভালোভাবে ওভারকাম করতে পারবে, ততই ভালো আমাদের জন্য।
বলা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন পালা বদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামনে দায়িত্ব থাকবে আপনাদের কাঁধেই। সেই জায়গাটায় কি স্বপ্ন দেখেন দল ও নিজেকে নিয়ে?
সব সময় আমার চেষ্টা থাকে দলের জন্য খেলার। সেটাই থাকবে। দল নিয়ে যেটা বললেন, ‘আমরা তরুণরা সবাই অনেক চেষ্টা করি, যেন দলের জন্য ভালো অবদান রেখে জয় উপহার দেওয়া যায়। আমাদের চেষ্টা থাকবে আমরা যেখানেই খেলি না কেন, যে টুর্নামেন্টই খেলি না কেন, সেখানে যেন ডমিনেট করে খেলতে পারি এবং সেই টুর্নামেন্ট যেন জিততে পারি।’