![উড়ন্ত গাড়িতে প্রথম যাত্রী সংগীতশিল্পী জ্যঁ মিশেল জার](uploads/2024/05/10/a2-1715330050.jpg)
বিশ্বে প্রথমবারের মতো যাত্রীসহ আকাশে উড়ে ইতিহাস গড়েছে উড়ন্ত গাড়ি ‘এয়ারকার’। এটি তৈরি করেছে স্লোভাকিয়ান উড়ন্ত গাড়ি তৈরি কোম্পানি ক্লাইনভিশন। সম্প্রতি এই উড়ন্ত গাড়িতে যাত্রী হিসেবে কিংবদন্তি ফরাসি সংগীতশিল্পী জ্যঁ মিশেল জার সফলভাবে প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছেন। ক্লাইনভিশনের তৈরি উড়ন্ত গাড়িতে করে স্লোভাকিয়ার আকাশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন জার। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখে চমকে গেছেন দর্শকরাও।
এয়ারকার হলো ক্লাইনভিশনের তৈরি একটি দ্বৈত-মোডের যানবাহন, যা রাস্তায় গাড়ি ও আকাশে বিমান হিসেবে চালানো যায়। এটি দেখতে স্পোর্টস কারের মতো এবং এর চারটি চাকা ও ডানা রয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় ডানা ভাঁজ করা যায়। আবার আকাশে উড়ার সময় ডানা মেলানো যায়। এয়ারকারটিতে চালকসহ দুটি আসন রয়েছে।
লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে লেজার শোয়ে বিশ্বজোড়া মুগ্ধতা ছড়ানো জার সর্বদাই ইলেকট্রনিক এবং নিউ-এজ সংগীতধারার প্রথম সারির একজন শিল্পী। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে ফরাসি এই সংগীতশিল্পী বেশ পরিচিত মুখ। সেই সুবাদেই স্লোভাকিয়ার কোম্পানি ক্লাইনভিশনের উড়ন্ত গাড়িতে প্রথম যাত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন আদর্শ। এ কারণে স্লোভাকিয়ার পিস্ট্যানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেকর্ড গড়ার মতো এ গাড়িতে দুবার উড্ডয়নের সুযোগ তিনি লুফে নেবেন, তা একরকম নিশ্চিত ছিল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ইনস্টাগ্রামে এই অভিজ্ঞতার একটি ভিডিও শেয়ার করে জার বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, তার কাছে এটি ছিল গৌরবের মুহূর্ত। এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা তার আসন্ন ‘ব্রিজ ফ্রম দ্য ফিউচার’ কনসার্টের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য, তার ভক্তরাও তাকে ‘ভাগ্যবান’ বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।
পরীক্ষামূলক উড্ডয়নটি পিয়েস্টানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্পন্ন হয়। যেখানে এয়ারকারটি স্পোর্টস গাড়ি থেকে বিমানে রূপান্তর হয়। এই গাড়িটি উদ্ভাবন ও চালনা করেছেন অধ্যাপক স্টেফান ক্লেইন। স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এক মুহূর্ত আপনি চালকের সঙ্গে কথা বলছেন, পরের মুহূর্তেই আপনি আকাশে উড়ছেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা!’ কোম্পানিটি এই দুর্দান্ত মুহূর্তটি তুলে ধরে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মসৃণ ও ডানাযুক্ত স্পোর্টস গাড়ি রানওয়েতে চার চাকায় চলছে এবং তারপরই আকাশে উড়ে যাচ্ছে। সফল টেকঅফ ও ল্যান্ডিং পরীক্ষার পর ২০২২ সালে এয়ারকার ফ্লাইটের অনুমতি পায়।
ফরাসি ইলেকট্রনিক শিল্পী জ্যঁ মিশেল জার স্লোভাকিয়ায় উড্ডয়ন করার পরে ক্লাইনভিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টন জাজ্যাক বলেছেন, ‘প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একে ব্যাটারিচালিত করে ফেলব। আমরা রাস্তা ও আকাশের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনছি। গাড়িগুলোকে সেই স্বাধীনতা দিচ্ছি, যেমন এটি স্বাধীনতার প্রতীক হয়েছিল ৫০ বছর আগে।’
আর এই স্বাধীনতার জন্য, কেবল চালকের লাইসেন্স ও পাইলটের লাইসেন্সই নয়, এয়ারকার নামের গাড়ি চালানোর জন্য দুই থেকে তিন মাসের বিশেষ ফ্লাইং কোর্সেরও প্রয়োজন হবে। জাজ্যাক আশা করেছেন, এটি এক বছরের মধ্যে বাজারে আসবে। ২০২২ সালে এয়ারকার একটি বিমান হিসেবে স্লোভাকিয়ায় চালানোর অনুমোদন পায়। অধ্যাপক স্টেফান ক্লেইন ও জাজ্যাক মিলে এটি তৈরি করেছেন।
গাড়িটিতে একটি ১৬০০ সিসির ‘বিএমডব্লিউ ইঞ্জিন’ রয়েছে। ২০২১ সালে এয়ারকার প্রথম আন্তঃনগর ফ্লাইট সম্পন্ন করে। স্লোভাকিয়ার নিত্রা থেকে ব্রাতিস্লাভায় ৩৫ মিনিট উড়ে যায়। ক্লাইনভিশন ২০২৫ সালের মধ্যে এয়ারকারের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা করছে। কোম্পানিটি বিশ্বাস করে এয়ারকার বিমানে ভ্রমণ ও যাতায়াতে পরিবর্তন আনতে পারে। এদিকে মার্চ মাসে ক্লাইনভিশনের গাড়িতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তার স্বত্ব ‘হেবেই জিয়ানঝিন ফ্লাইং কার টেকনোলজি কোম্পানি’ নামের এক চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে দিয়েছে।
এ.জে/জাহ্নবী