![ঈদে বাইকযাত্রা](uploads/2024/06/14/bike-1718378457.jpg)
ঈদে নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যান শহুরে মানুষ। বিভিন্ন যানবাহন করে গ্রামে যান। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ বিমানে, কেউ বা যান ব্যক্তিগত গাড়িতে। এই যাত্রায় অনেকে তাদের শখের বাইককেই সঙ্গী করেন।
ঈদে গণপরিবহনের টিকিট পাওয়া সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ সময়ে নানা ধরনের ঝামেলা দেখা দেয় দূরযাত্রায়। এসব ঝামেলা এড়িয়ে যারা নিজের ইচ্ছেমতো চলাচল করতে চান, তাদের কাছে প্রথম পচ্ছন্দ বাইকযাত্রা। তবে এ সময় সতর্কতার সঙ্গে বাইকে চলাচল করতে হয়, না হলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন আপনিও। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাইকযাত্রায় কোন কোন বিষয় মেনে চলবেন।
প্রস্তুতি
আপনার গন্তব্য অনুযায়ী কোন পথে যাত্রা করবেন তা নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে জিপিএস বা গুগল ম্যাপস ব্যবহার করুন। যাত্রার সময় আগে নির্ধারণ করুন। বাইকে যাত্রা শুরুর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। রাস্তায় কীভাবে খাবার খাবেন তার পরিকল্পনা করুন অথবা নিজের সঙ্গে খাবার বহন করুন। আগে থেকে জরুরি পরিষেবা নম্বর সংরক্ষণ করে রাখুন।
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য আপনার বাইক যান্ত্রিকভাবে ঠিক ও রাস্তার জন্য উপযুক্ত কি না তা নিশ্চিত করুন। যাত্রার আগে টায়ারের চাপ, ব্রেক, চেইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করে নিন। প্রয়োজনে বাইক সার্ভিসিং করিয়ে নিন। প্রয়োজনীয় বাইক মেরামতের সরঞ্জাম, টর্চলাইট, পাওয়ার ব্যাংক, মোবাইল চার্জার ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনীয় টুলস ও স্পেয়ার পার্টস সঙ্গে রাখুন। বাইকে একটি ফার্স্ট-এইড কিট রাখুন।
মোটরসাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে। মাথাকে সুরক্ষা রাখতে ও বাইক চালানোর সময় পোকা বা অন্য কিছুর হাত থেকে রক্ষা পেতে হেলমেট পরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেলমেট পরলে যেমন নিরাপদ থাকবেন তেমনি পুলিশি ঝামেলাও এড়িয়ে যেতে পারবেন।
আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরুন। বাইক চলানোর সময় ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরুন। বেশির ভাগ ট্রাফিক সার্জেন্ট এ বিষয়টিতে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। বাইক চালানোর সময় অবশ্যই সু বা কেডস পরুন। স্যান্ডেল পরে বাইক চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব সু বা কেডস না পরার কারণে মামলার সম্মুখীন হতে পারেন। ভ্রমণবিমা করিয়ে নেওয়া ভালো। পরিবার ও বন্ধুদের আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
বাইকযাত্রায় সঙ্গে রাখবেন যেসব কাগজপত্র
ড্রাইভিং লাইসেন্স
যানাবাহন চালনার দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটি রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ মানুষসহ অন্য গাড়ি ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিতে যানবাহন চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে।
তাই বাইকে চলাচলের সময় চালককে অবশ্যই সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্স রাখতে হবে। এতে পুলিশ অথবা যেকোনো আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর যেকোনো হয়রানি এড়াতে পারবেন।
রেজিস্ট্রেশন নম্বর
ঝামেলাহীনভাবে মোটরসাইকেল চালাতে রেজিস্ট্রেশন নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাইকের বৈধতার সঙ্গে আপনার মালিকানা নিশ্চিত করে। বাইক ডাম্পিংয়ের অনেক বেশি আশঙ্কা থাকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া চালালে।
ট্যাক্স টোকেন
ট্যাক্স টোকেন মূলত বাংলাদেশের রাস্তায় বৈধভাবে বাইক চালানোর অনুমতিপত্র। তাই বাইকযাত্রায় ট্যাক্স টোকেন সঙ্গে রাখুন।
ইনস্যুরেন্স
ইনস্যুরেন্স বাইকের জন্য রক্ষাকবচ। বাংলাদেশর আইন অনুযায়ী রাস্তায় বৈধভাবে বাইক চালাতে বাইকের ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক। এটিও সঙ্গে রাখুন।
যাত্রার সময়
ভোরবেলা যাত্রা শুরু করা ভালো। এ সময় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কম থাকে। একটানা দুই ঘণ্টার বেশি বাইক চালানো এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত বিরতি নিয়ে বিশ্রাম নিন। বিরতির সময় পানি পান করুন ও শরীর সতেজ রাখুন।
বাইক চালনার সময় সর্বদা সতর্ক থাকুন ও ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলুন। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাবেন না। অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। অতিরিক্ত ক্লান্ত হলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। সব সময় ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখুন।
মূল্যবান জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন। একা একা রাতের বেলায় বাইকে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব দিনের বেলায় ভ্রমণ করার চেষ্টা করুন। রাতের বেলায় ভ্রমণ করতে হলে নিরাপদ রাস্তা ব্যবহার করুন ও জনবহুল এলাকা দিয়ে যান। একা ভ্রমণ না করে যদি সম্ভব হয় তাহলে গ্রুপে ভ্রমণ করুন।
জরুরি পরিস্থিতি
যদি আপনার বাইকে কোনো ত্রুটি দেখা দেয়, তাহলে নিরাপদ জায়গায় থামুন এবং মেরামতের চেষ্টা করুন। যদি নিজে মেরামত করতে না পারেন, তাহলে সাহায্যের জন্য স্থানীয়দের শরণাপন্ন হন।
যদি আহত হন, তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিন এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। যদি আবহাওয়ার অবস্থা খারাপ হয়, তাহলে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন। সঠিক প্রস্তুতি, সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করে বাইকযাত্রা নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলতে পারেন। মনে রাখবেন, সাবধানতা অবলম্বনই সফল ভ্রমণের মূল চাবিকাঠি।