![টয়োটার হাইড্রোজেনচালিত গাড়ি](uploads/2024/06/21/a-1718951652.jpg)
বিশ্বখ্যাত জাপানের গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান টয়োটা পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলনির্ভর পিকআপ মডেলের ‘টয়োটা হিলাক্স’ তৈরি করেছে। বর্তমানে এই গাড়িগুলো বিভিন্ন ধরনের রাস্তায় চালিয়ে পরীক্ষা চলছে। যুক্তরাজ্যে এই পিকআপ ট্রাকের প্রোটোটাইপ নির্মাণ শেষ করেছে টয়োটা ম্যানুফ্যাকচারিং ইউকে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রকল্পটি এখন শেষপর্যায়ে রয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় মোট ১০টি প্রোটোটাইপ গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দিয়ে গাড়ির সুরক্ষা, কর্মক্ষমতা, কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব পরীক্ষা চলছে। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে টয়োটা বাস্তব পরিস্থিতিতে গাড়িগুলোর ডেটা সংগ্রহ করছে। বাকি পাঁচটি গাড়ি গ্রাহক ও গণমাধ্যমে প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী প্যারিস অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমসেও গাড়িগুলো প্রদর্শিত হবে।
১৯৯২ সাল থেকে টয়োটা হাইড্রোজেনচালিত যানবাহনের বিকাশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপ বিশ্বের বৃহত্তম হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলনির্ভর গাড়ির বাজার হবে।
টয়োটা জানিয়েছে, হিলাক্স প্রোটোটাইপ প্রকল্প মহাদেশজুড়ে হাইড্রোজেন প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর আরও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
এটি সাধারণ হিলাক্সের মতো দেখতে, তবে এতে মিরাই এফসিইভি গাড়ির প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটির দৈর্ঘ্য ৫৩২৫ মিমি, প্রস্থ ১৮৫৫ মিমি এবং উচ্চতা ১৮১০ মিমি।
গাড়িটিতে তিনটি উচ্চ চাপের হাইড্রোজেন জ্বালানি ট্যাংক রয়েছে। প্রতিটি ট্যাংকে ২ দশমিক ৬ কেজি হাইড্রোজেন ধারণ করার সক্ষমতা রয়েছে। ট্যাংকগুলো ল্যাডার-ফ্রেম চেসিসের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।
টয়োটার হাইড্রোজেনচালিত হিলাক্সের প্রোটোটাইপে ৩৩০টি সেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি পলিমার ইলেকট্রোলাইট ফুয়েল সেল স্ট্যাক রয়েছে, যা গাড়ির সামনের অ্যাক্সেলের ওপরে। এ ছাড়া গাড়িতে ১ দশমিক ২ কিলোওয়াট-আওয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি রয়েছে, যা ফুয়েল সেলের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে। এই ব্যাটারি হাইড্রোজেন ট্যাংকের ওপরে পেছনের দিকে রয়েছে, যেন এর জন্য কেবিনের জায়গা কমে না যায়।
রিয়ার-হুইল ড্রাইভ প্রোটোটাইপটির পেছনের অ্যাক্সেলে একটি ইলেকট্রিক মোটর রয়েছে, যা ১৩৪ কিলোওয়াট শক্তি ও ৩০০ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপাদন করে। টয়োটার দাবি, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের মাধ্যমে টয়োটা হিলাক্স টানা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ চলতে পারে। যা একটি ব্যাটারিচালিত হিলাক্সের চেয়ে বেশি। হাইড্রোজেন সেল ওজনে হালকা হওয়ায় কম জ্বালানি খরচে বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার পাশাপাশি বেশি পণ্যও পরিবহন করা যাবে।
প্রকল্পটি ২০২২ সালের শুরুর দিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল টয়োটা। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে বিভিন্ন কনসোর্টিয়াম অংশীদার যোগ দেয়, যার মধ্যে রয়েছে: ইঞ্জিনিয়ারিং ও পরিবেশগত পরামর্শদাতা ফার্ম রিকার্ডো; ইউরোপীয় থার্মোডাইনামিক্স; ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা ফার্ম ডি২এইচ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি এবং অটোমোটিভ ঝুঁকি বুদ্ধিমত্তা সংস্থা থ্যাচাম রিসার্চ।
২০২৩ সালের প্রথমদিকে গাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০টি গাড়ি তৈরি করা হয়। গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানটি এখনো জানায়নি কবে নাগাদ সাধারণ মানুষের কাছে হাইড্রোজেনচালিত হিলাক্স বিক্রি বা লিজের জন্য প্রস্তুত হবে।
হাইড্রোজেনচালিত হিলাক্স তৈরির পাশাপাশি টয়োটা তার জনপ্রিয় পিকআপ ট্রাকের একটি ব্যাটারিচালিত সংস্করণও প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৫ সালের শেষের দিকে গ্রাহকদের জন্য নির্মিত এই গাড়ি থাইল্যান্ডে উৎপাদন করা হবে
আবরার জাহিন/জাহ্নবী