আজকাল ঘোরাঘুরি বা ভ্রমণ মানুষের জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে উঠেছে। কাজের প্রয়োজনে কিংবা ছুটি কাটানোর জন্য দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করি আমরা। তাই গাড়ি নিয়ে নিরাপদ ও সুন্দরভাবে ভ্রমণ করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস মেনে চলা জরুরি। অটোমোবাইলের আজকের আয়োজনে থাকছে গাড়ি নিয়ে নিরাপদ ও আনন্দময় ভ্রমণের উপায়:
ভ্রমণের পরিকল্পনা
ভ্রমণের আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনার ভ্রমণের রোডম্যাপ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং সময়সূচি সবকিছুই সুসামঞ্জস্য হবে। ফলে ভ্রমণের সময় কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। আপনি নিশ্চিন্তে একটি সুন্দর ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
গন্তব্য নির্ধারণ
প্রথমেই আপনার ভ্রমণের গন্তব্য নির্ধারণ করুন। আপনার মন কী চায়? পাহাড়, সমুদ্র, নাকি শহরের জঞ্জাল ফেলে কোনো একটি নীরব প্রাকৃতিক রিসোর্ট? আপনার মনকে প্রশ্ন করুন। যদি পাহাড় কিংবা সমুদ্র হয়, তবে এমন জায়গা নির্বাচন করুন যেখানে দুটোরই সংমিশ্রণ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আপনার গাড়ির কোন রাস্তায় চলার জন্য বেশি উপযোগী তা মাথায় রাখুন।
রোড ম্যাপিং
গন্তব্য ঠিক করে ফেলার পর, আপনাকে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে কখন যাত্রা করবেন ও কোন পথে যাবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোড ম্যাপিংটা খুব ভেবেচিন্তে করতে হবে। কারণ রোড ম্যাপিংয়ের ওপরই নির্ভর করে পুরো ভ্রমণের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি। ধরুন, আপনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন। এক্ষেত্রে আপনার বাসা যদি মিরপুর হয়, তবে আপনি মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যেতে যেতেই পুরো পথের ক্লান্তি এটুকু পথেই পেয়ে যাবেন। তাই আপনাকে খুব ভোরে বা রাত ১০টার পর রওনা করতে হবে। যেন রাস্তায় যানজটে না পড়েন। আবার রাস্তায় অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না, তা মাথায় রাখুন।
গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ
গাড়ি নিয়ে ভ্রমণে পুরো যাত্রাপথের আনুমানিক দূরত্ব বের করুন। এক্ষেত্রে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিতে পারেন। কত কিলোমিটার পথ আসা-যাওয়া করবেন সে অনুযায়ী গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন। গাড়িতে অতিরিক্ত একটি চাকা ও পানি রাখুন। সম্ভব হলে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল রাখুন। দীর্ঘ যাত্রার জন্য গাড়িটি ভালো করে সার্ভিসিং করে নিন। টায়ারের অবস্থা, ইঞ্জিন অয়েল, ওয়াটার লেভেল, ব্রেক- সবকিছু ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করুন। এ ছাড়া চাকার প্রেসারসহ অন্যান্য বিষয় চেক করুন। গাড়িতে রাখুন জ্যাক, রিঞ্চ, স্প্যানার, টর্চলাইট ইত্যাদি।
বিশ্রাম
ভ্রমণে নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রাম নিন। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানো এড়িয়ে চলুন। যানজটের সময় ধৈর্য ধরুন ও রাগ করবেন না।
খাবার
ভ্রমণে অনেক বেশি ক্লান্তি কাজ করে। এ সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে ইচ্ছা করে। আবহাওয়া ও রুচি অনুযায়ী ভ্রমণে সঙ্গে খাবার রাখুন। এ সময় পানীয় পানেরও প্রয়োজন পরে। তাই সঙ্গে পানি ও কোমল পানীয় রাখতে পারেন। মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত উভয় প্রকারের সংমিশ্রণে তৈরি খাবার নিরাপদ ভ্রমণের অন্যতম সঙ্গী। হাইওয়ের পাশে অনেক রেস্টুরেন্ট পাবেন, তবে সেখান থেকে চড়াদামে মানহীন খাবার কিনে খাওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যদি খুব প্রয়োজন হয় যাচাই করে কিনুন। একটু চেষ্টা করলেই ঘরের তৈরি খাবার সঙ্গে রাখতে পারেন ভ্রমণে। দীর্ঘ যাত্রায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও ফল সঙ্গে রাখুন। পথে খাবার খেতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেস্তোরাঁ বেছে নিন।
প্রয়োজনীয় ওষুধ
ভ্রমণের সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। যদি যাত্রাপথে পরিবারের অন্য সদস্যরাও থাকেন, তখন ওষুধের ব্যাপারটা আরও জরুরি। ভ্রমণের আগে সবার স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিন। সঙ্গে লেবু, আদা, রং চা রাখুন। বিশেষ করে বমি, বদ হজম, অ্যাসিডিটি ও অ্যালার্জির ওষুধ থাকাটা তো বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখুন। নারীদের বিষয়টা মাথা রেখে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ সংগ্রহ করাটা অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলোর মধ্যে একটি।
প্রয়োজনীয় কাপড়
কতদিনের জন্য ভ্রমণ করবেন? কোন কোন জায়গা ভ্রমণ করবেন? সে এলাকাগুলোর আবহাওয়া কী রকম? এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় কাপড় সঙ্গে রাখা জরুরি। দূরবর্তী ভ্রমণে সচরাচর প্রয়োজনীয় কাপড় গুছিয়ে সঙ্গে রাখি না। ফলে ভ্রমণে গিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। না হয় চড়া মূল্যে কাপড় কিনতে হয়। যদি ভ্রমণ স্পট অনেকগুলো হয়, বেশি কাপড় সঙ্গে রাখলে আলাদা আলাদা স্পটে ভিন্ন ভিন্ন পোশাকে ছবি তুলতে পারবেন। ফলে ভ্রমণ এবং ভ্রমণের স্মৃতি হবে অনেক বেশি দুর্দান্ত। তাই প্রিয় পোশাকগুলোও হোক ভ্রমণের সঙ্গী।
পর্যাপ্ত পরিমাণ খরচ
ভ্রমণে টাকা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। বিশ্বের যে প্রান্তেই ভ্রমণ করেন না কেন, সেখানের স্থানীয় মুদ্রা সঙ্গে থাকাটা অনেক বেশি জরুরি। এ ছাড়া পর্যটন স্পটগুলোয় খাবারসহ প্রায় সবকিছুর মূল্যই চড়া হয়ে থাকে। তাই বাজেটে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি অর্থ সঙ্গে রাখার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহারে সচেতন থাকুন।
ফার্স্ট অ্যাইড বক্স
সঙ্গে ফার্স্ট অ্যাইড বক্স রাখাটা অনেক জরুরি। ভ্রমণ যেখানেই হোক, পাহাড় কিংবা সমুদ্র, সব জায়গাতেই পোঁকা মাকড়ের ভয় থাকাটা সাধারণ ব্যাপার। তাই গাড়িতে ফার্স্ট অ্যাইড বক্স থাকাটা বাধ্যতামূলক।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস
মোবাইলসহ ভ্রমণে বেশ কিছু ডিভাইস সঙ্গে রাখাটা জরুরি। পাওয়ার ব্যাংক, কেবল, চার্জার, স্মার্ট ওয়াচসহ একান্ত প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলো মনে করে গাড়িতে রাখুন। সঙ্গে ল্যাপটপ নিতে ভুলবেন না, হয়তো দূরবর্তী ভ্রমণে অফিসের বা নিজের জরুরি কাজে আসতে পারে।
ভ্রমণে গাড়ি পাকিং
গন্তব্যের কাছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করুন। অনেক শহরে স্ট্রিট পার্কিং ও গ্যারেজসহ বিভিন্ন ধরনের পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। যে ধরনের পার্কিং বেছে নেন তা আপনার বাজেট, কতক্ষণ থাকবেন ও গন্তব্যের কাছাকাছি কতটা পার্ক করতে চান, তার ওপর নির্ভর করবে। পার্কিং রিসিট রাখুন। কিছু শহরে পার্কিং রিসিট প্রদর্শন করতে হবে। রিসিটটি রাখতে ভুলবেন না, অন্যথায় জরিমানা গুনতে হবে। পাকিংয়ের সময় গাড়িতে মূল্যবান জিনিসপত্র রখবেন না। যদি সবার নজর পড়ে এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করে থাকেন, তবে ব্যাগ, ল্যাপটপ ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র গাড়িতে রাখবেন না। যদি সম্ভব হয়, নিরাপদ এলাকায় গাড়ি পার্ক করুন। অপরাধের হার বেশি এমন এলাকায় পার্কিং এড়িয়ে চলুন।