কেউ যদি নির্বাচনকে প্রতিহত ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়, তাহলে এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজি হাবিবুল আউয়াল। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশনের রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিলেট অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিইসি বলেন, ‘একটি দল নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জনগণকে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু এটা যদি শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তাহলে খুব বড় চ্যালেঞ্জ নয়। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে কোনো একটা নির্বাচনের পক্ষে যেমন বলা যায়, সে নির্বাচনের সমালোচনাও করা সম্ভব। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছে, এটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা যদি নির্বাচনের দিন বা আগে এই অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচনকে প্রতিহত করার কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করে, ভোটারদের যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়, তাহলে অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের বলা হয়েছে।’
নির্বাচনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি আসন্ন নির্বাচন অবাদ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য হবে। বিশ্বাসযোগ্যকে আমরা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে। গণমাধ্যমের যারা কর্মী তারা কিন্তু ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। অননুমোদিত কোনো মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে ডুকে ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে তাহলে গণমাধ্যমকেই সেই ছবিগুলো তুলে নিয়ে সম্প্রচার করতে হবে। প্রকৃত অবস্থা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর কাছে যদি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, তাহলে যে সংকট আসবে সেটা কেটে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভীতিকর জিনিস সৃষ্টি হয়েছে। যেটাকে বলা হয় ডিজ ইনফরমেশন। কোনো কিছু বানোয়াট করে যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। সেটা নিয়ে আমরা খুব সর্তক থাকব। আমরা যদি জানতে পারি কেউ মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন একটা নির্বাচনকে অবাদ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে হলে একটি সার্বিক অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন আছে। জনগণ যাতে আশ্বস্ত বোধ করেন। তারা নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবেন এবং ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়িতে ফিরে আসতে পারবেন। এই বিশ্বাসটুকু জনগণের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের শুধু দেশীয় দায়িত্ব নয়। এর জন্য ইন্টারন্যাশনাল বাধ্যবাধকতা আছে। আমাদের ইউনিভার্সাল ডেকোরেশন অব হিউম্যান রাইটসে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড সেট করা আছে। আইসিসিপিআরে আমরা অনুস্বাক্ষর করেছি। সেখানে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, কীভাবে নির্বাচিত হবে, মানদণ্ডটা কি হবে সুস্পষ্ট করে বলা আছে। তাই আমাদের রাষ্ট্রের প্রতি যেমন বাধ্যবাধকতা আছে তেমনি ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির মধ্যেও আমাদের বাধ্যবাধকতা আছে।’
এমএ/