![৩২ বছরেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়](uploads/2024/01/29/1706519017.Mymensing-Toll-Story.jpg)
১৯৯১ সালে ময়মনসিংহের পাটগুদাম এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ)। ৪৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ব্রিজ পারাপারে ওই বছর থেকেই টোল দিয়ে আসছে বিভিন্ন যানবাহন। নির্মাণ ব্যয়ের কয়েকগুণ টাকা ওঠে আসলেও এখন পর্যন্ত চলছে টোল আদায়। দীর্ঘ সময় টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলের পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিকরা। তবু বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে টোল।
এই ব্রিজ দিয়ে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাকসহ প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার যানবাহন চলাচল করে। বর্তমানে প্রতিটি যানবাহন থেকে আকারভেদে ১৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে। বড় ট্রাক ১৩৫ টাকা, মাঝারি ট্রাক ১০০, মিনি ট্রাক ৭৫, বড় বাস ৬৫, মিনিবাস ৩৫, মাইক্রোবাস ৪০, প্রাইভেটকার ২০, পাওয়ার টিলার ৬০ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ১৫ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ধীরে ধীরে টোলের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী ইমাম পরিবহনের চালক মইনুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিবহন-সংশ্লিষ্ট সবারই দাবি টোল আদায় বন্ধ হোক। কিন্তু এই দাবি আমলেই নেওয়া হচ্ছে না। টোল আদায় বন্ধ হলে যাত্রীদের কাছ থেকে কিছু ভাড়া কম নেওয়া যেত। আমারও নিশ্চিন্তে গাড়ি চালাতে পারতাম।’
দিনের কয়েকবারই এই সেতু পারাপার হন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক মোজাম্মেল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুঃখ বলায় জায়গা নেই। সারা দিন গাড়ি চালিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা পাই তা দিয়ে চলে না। কারণ দিনের মধ্যে যতবার সেতু পারাপার হতে হয়, ঠিক ততবারই ১৫ টাকা করে টোল দিতে হয়। রাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা গাড়ির মালিককে বুঝিয়ে দিতে হয়। একমাত্র টোল আদায়ের জন্য শান্তিতে গাড়ি চালাতে পারছি না।’
টোলবক্স এলাকার বাসিন্দা এখলাছ উদ্দিন বলেন, ‘বাঁশ দিয়ে গাড়ি থামানোর পাশাপাশি সড়কে বিট (গতিরোধক) দেওয়া হয়েছে। এই বিটে বালুবাহী ট্রাকগুলো ঝাঁকুনি খেয়ে বালু সড়কে পড়ে। অনেকটা দূর পর্যন্ত বালু পড়তেই থাকে। এতে বিভিন্ন সময় মোটরসাইকেলের চাকা পিছলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যানবাহনের মালিক-চালকসহ সবার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে এই টোলবক্স।’
জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় পরিবহন খাতের সবাই ক্ষুব্ধ। কিন্তু সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। টোল আদায়ের কারণে একদিকে যেমন পরিবহন মালিক-চালকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের যাত্রীবাহী গাড়ির সময় নষ্ট হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম। তিনি বলেন, ‘সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এখনো টোল আদায় করা হচ্ছে। আদৌ টোলমুক্ত হবে কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। সরকারের উচিত সবার দাবি মেনে নিয়ে টোল আদায় বন্ধ করা।’
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘উদ্বোধনের পর থেকে এই সেতু নির্মাণ ব্যয়ের কয়েকগুণ রাজস্ব আদায় হয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন বছর মেয়াদে ৪৮ কোটি টাকা ইজারা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে টোল আদায় বন্ধের নির্দেশনা আসলে এটি বন্ধ করা হবে।’