![নন্দনকানন বৌদ্ধবিহার দখলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ](uploads/2024/03/09/1709959749.Chattogram.jpg)
চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহারে ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে গিয়ে বৌদ্ধ সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কয়েকজন ভিক্ষুর কথা-কাটাকাটি থেকে বিরোধ হাতাহাতিতে গড়ায়।
এ ঘটনায় রেখা রানী বড়ুয়া নামে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বৌদ্ধ সমিতি মহিলা বাংলাদেশের সভাপতি শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন। এ বছর শিক্ষায় একুশে পদকপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের শিক্ষক ড. জিনবোধি ভিক্ষুর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনেন ওই নারী নেত্রী। তিনি এ ঘটনায় জিনবোধি ভিক্ষুসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে নগরীর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘শুক্রবার সকালে পূজা ও প্রার্থনার জন্য নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারে গেলে, আমাকে দেখামাত্র জিনবোধি ভিক্ষুর নেতৃত্বে কিছু লোক আমাকে মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে কাপড় খুলে আমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। আমার স্বামী আমাকে রক্ষা করতে এলে তিনিও মারধরের শিকার হন। এ সময় বৌদ্ধ নর-নারী ও সাধারণ পূজারিরা আমাকে রক্ষা করতে এলে তারাও মারধরের শিকার হন।’
অন্যদিকে অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু খবরের কাগজকে বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে বৌদ্ধবিহার দখল করে রেখেছে, তারা আমাদের অনুষ্ঠান পণ্ড করার জন্য আজ ভিক্ষুদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। সকালে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে তারা বিহারের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ভক্ত এবং ভিক্ষুরা প্রবেশ করেন। যখন হাজারও মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়, তখন তারা দরজা খুলে দিতে বাধ্য হয়।’
রেখা রানী বড়ুয়াকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তিনি শ্লীলতাহানি করেননি। ওই নারী তার মোবাইল কেড়ে নিলে তিনি মোবাইলটি ফেরত নিতে চেয়েছিলেন। এটা কোনো শ্লীলতাহানির ঘটনা নয়। এমনকি রেখা রানী বড়ুয়া তাকে ব্যাগ দিয়ে আঘাত করেছেন উল্লেখ করে ড. জিনবোধি বলেন, ‘সে জুতা পর্যন্ত তুলেছে। এই ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছি। মসজিদ, মন্দির কিংবা বৌদ্ধবিহার হলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো সমিতির দখলে থাকতে পারে না।’
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সর্বোচ্চ সংগঠন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বোধিমিত্র মহাস্থবির খবরের কাগজকে বলেন, ‘মহামানব গৌতম বুদ্ধের মতে গৃহত্যাগের পর বৌদ্ধ সন্যাসীরা যেখানে কোনো রকম গৃহী মানুষের সংস্পর্শে যেতে পারে না। সেখানে একজন নারীর সম্ভ্রম ও শ্লীলতাহানি কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি আজ নারী দিবসে একজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন একটা ঘটনা ঘটবে, তা আমি মোটেও কল্পনা করিনি। এই ঘৃণ্য কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।’
এদিকে নারীর প্রতি শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ ও জিনবোধি ভিক্ষুর শাস্তির দাবিতে সম্মিলিত নারী সমাজ মিছিল করেছে। তারা সরকার কর্তৃক জিনবোধি ভিক্ষুকে দেওয়া একুশে পদক প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম ওবায়দুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুক্রবার বৌদ্ধবিহারে একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে দুটি পক্ষ ছিল। একটি পক্ষ অনুষ্ঠান করতে চায়, আরেকটি পক্ষ অনুষ্ঠান করতে দেবে না। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা বাকিটা তদন্ত করে দেখব।’