![আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কধস: মুগ্ধতার সড়কে ভয়ের পতাকা](uploads/2024/06/13/mughdhota-1718251966.jpg)
একপাশে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি, অন্যদিকে সারি সারি দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়। মাঝখানে এগিয়ে গেছে পিচঢালা সর্পিল পথ। প্রকৃতি যেন এখানে একেবারেই কোলাহলহীন; শান্ত-স্নিগ্ধ। রাঙামাটির আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের বাঁকে বাঁকে এই পার্থিব মুগ্ধতার মোহে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। কিন্তু মুগ্ধতার এই সড়কে এখন মোড়ে মোড়ে ঝুলছে ভয়ের ‘লাল পতাকা’ আর ‘সতর্কতা’র সাইনবোর্ড। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ধসে গিয়ে সড়ক বিচ্ছিন্ন হলে যোগাযোগ ও পর্যটনশিল্পে মারাত্মক সংকট তৈরি হবে। এর প্রভাব পড়বে স্থানীয় অর্থনীতিতে। তবে সড়কটির ধসরোধ ও মেরামতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাঙামাটি এলজিইডি।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ও সড়কের দুই পাশে ধস দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানেই সড়ক ধসে গিয়ে চলার পথ সরু হয়ে গেছে। এতে বন্ধ রয়েছে ভারী যান চলাচল। হালকা যানবাহনগুলো চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। তবে এরই মধ্যে চলাচলে সতর্কতা জানিয়ে সড়কের ছয়টি জায়গায় লাল পতাকা টানিয়ে ও ‘বিপজ্জনক সড়ক’ লিখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে রাঙামাটি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ।
তবে এসব সতর্কতার পরও সড়কটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে দুর্ভোগ আর আতঙ্ক কমছে না। মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটির মগবানের গলাছড়ি এলাকায় গিয়ে কথা হলে এমনটিই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী জামিল। কিন্তু মাঝপথে সড়কটির বেহাল অবস্থা দেখে শঙ্কা যেন তার মনে আছড়ে পড়ছিল। বললেন, ‘সড়কটি এমনিতেই সরু, এটা আরও প্রশস্ত করা দরকার। ভাঙা দেখে ভয় লাগছে। এটা পর্যটন এলাকা। পর্যটকরা এসে যদি দুর্ঘটনার শিকার হন, তা হলে এটা সবার জন্যই দুঃখজনক বিষয়। এভাবে চললে পর্যটক কমতে থাকবে। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে সবার একটু নজর দেওয়া দরকার।’
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক কবির হোসেন বলেন, ‘সড়কটি ভেঙে সরু হয়ে গেছে। আমরা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। দুটি গাড়ি পাশাপাশি আসা-যাওয়ার সময় মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে যানবাহন ও যাত্রী উভয়ের ক্ষতি হচ্ছে। পর্যটকরা শঙ্কা নিয়ে যাতায়াত করেন। সড়কটি দ্রুত মেরামত ও বড় করা দরকার।’
রাঙামাটির মগবানের গলাছড়ির বাসিন্দা সুরেশ চাকমা বলেন, ‘এখন আম-কাঁঠালের সময়। এসব ফল কোথাও পাঠাতে হলে ট্রাকের প্রয়োজন। কিন্তু রাস্তা তো এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট গাড়িতে নিলে সময় ও ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। অনেক সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সড়কটা মেরামত করা হলে মানুষের যাতায়াত সহজ হতো। যানবাহন চলাচলের ঝুঁকিটাও কমে যেত।’
১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি মূলত রাঙামাটি শহরের সঙ্গে কাপ্তাইয়ে যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ হিসেবে নির্মাণ করা হয়। যদিও যোগাযোগকে ছাপিয়ে সড়কটির দুপাশের লেকভিউ আর নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে দ্রুত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে শহরের অদূরে, সহজ যোগাযোগ ও কম সময়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে এখানে। পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়ে চলেছে রিসোর্ট-পর্যটন স্পট। সড়কটি রাঙামাটির পর্যটনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
এ ছাড়া সড়কটি ঘিরে পাহাড়ি এই জনপদে গড়ে উঠেছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এসেছে বিদ্যুৎ। বেড়েছে কৃষিবাণিজ্য। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিশেষ করে মৌসুমি ফল, ফসল, সবজি, এমনকি লেকের টাটকা মাছ ভালো দামে পর্যটকদের হাতে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে। এ ছাড়া চাষিরা তাদের ফসল সহজেই শহরে পাঠাতে পারছেন। কিন্তু সড়কটির সাম্প্রতিক দুরবস্থায় চরম ভোগান্তি আর শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয়রা।
সড়কটির ধসরোধ ও মেরামতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাঙামাটি এলজিইডি। নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, ‘সড়কটির ছয়টি স্থানে ভাঙন ও ধসের ঘটনা ঘটেছে। আমরা লাল পতাকা ও সতর্কতার সাইনবোর্ড দিয়েছি। ধসরোধ ও মেরামতের জন্য আরসিসি ব্লক ও পানি নিষ্কাশন ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’