![মৌলভীবাজারে মন্দা থান কাপড়ের ব্যবসায়](uploads/2024/04/01/1711950728.ctg.jpg)
কয়েক দিন পরেই ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে পোশাক ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। রমজানের আগ থেকেই প্রস্তুতি থাকে থানকাপড় ও থ্রিপিস ব্যবসায়ীদের। তবে এবারের ঈদে থানকাপড়ের দোকানগুলোর বেশির ভাগই এখনো ক্রেতাশূন্য। ফলে ক্রেতার অপেক্ষায় অলস সময় পার করছেন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। তাদের দাবি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারেও। যেসব ক্রেতা আসছেন তারাও কিনছেন প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কাপড়ের দোকানগুলোতে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা কাপড় দেখে, দরদাম করে না কিনেই চলে যাচ্ছেন। এতে হতাশ ব্যবসায়ীরা। আশানুরূপ কেনাবেচা হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে আশা করছেন দু-এক দিনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত কেনাবেচা শুরু হতে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর ঈদকে সামনে রেখে অন্যবারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কাপড় দোকানে তুলেছেন তারা। বিশেষ করে থান কাপড়ের ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই বেশি করে কাপড় কিনেছেন। কারণ অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় থান কাপড় আগে বিক্রি হয়। কিন্তু এবার বাজারে ক্রেতা কম। ঈদ মৌসুমে যদি থান কাপড় বিক্রি না হয় তবে পরবর্তী সময়ে বিক্রি করা কষ্টকর হয়ে যায়। ১ রমজান থেকে ২০ রমজান এই সময়টায় বেশি কাপড় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এবার প্রত্যাশিত বিক্রি হচ্ছে না। সন্তোষজনক কেনাবেচা না হওয়ায় হতাশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি থান কাপড়ের ব্যবসায়ীরা।
তবে ক্রেতারা জানান, নিত্যপণ্যের অধিক দামের ফলে বেশির ভাগ মানুষ অর্থসংকটে রয়েছেন, পাশাপাশি কাপড়ের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া থান কাপড় কিনে পোশাক তৈরিতে সময় ও সেলাই খরচ বেশি হয়ে থাকে। তাই অনেকেই রেডিমেট পোশাক কেনার কথা ভাবছেন।
শহরের পশ্চিমবাজার এলাকার একটি শপিংমলের কর্মচারী রাহেল মিয়া বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের বাজেট তো আর বাড়েনি। তাই কেনাবেচা কম হচ্ছে। আমাদের বাড়তি দাম দিয়ে থান কাপড় কিনতে হয়। গত রমজান থেকে এবার দেশি কাপড়ে গজপ্রতি প্রায় ১০ টাকা ও বিদেশি কাপড়ে ৪০ টাকা বেড়েছে। সব খরচ মিলিয়ে আমাদের পোশাকের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’
শহরের মধ্যে থান কাপড়সহ অন্য কাপড়ের ছোট ও মাঝারি দুটি দোকান আছে শাহিন আহমদের। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা পাচ্ছি না। সব মিলিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।’
গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি বছর থান কাপড়ের বিক্রি অনেক কমে গেছে বলে জানান থান কাপড়ের ব্যবসায়ী সাহির আহমদ। তিনি বলেন, ‘বেশি বিক্রি ও লাভের আশায় অধিক টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি কম। এখন অপেক্ষায় আছি ঈদের যে কয়েক দিন বাকি আছে সেই দিনগুলোতে কিছু বিক্রি করতে পারি কি না।’
এখন পর্যন্ত ব্যবসা কম হলেও আশাবাদী ব্যবসায়ী সঞ্জিত দাস। তিনি বলেন, ‘কাপড় কিনতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকেই দরদাম করে না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। প্রতিটি দোকানেই লাখ লাখ টাকার নতুন নতুন পোশাক আনা হয়েছে। অল্প অল্প বিক্রি হচ্ছে।’
দর্জির কাজ করা আসগর মিয়া জানান, অন্য বছরের তুলনায় কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার কম আসছে। কেনাকাটা করতে আসা সাহেলি আক্তার বলেন, প্রতিটি দোকানেই আকর্ষণীয় থান কাপড় ও থ্রিপিস রয়েছে। কিন্তু দাম খুবই বেশি। এসব কাপড় পছন্দ হলেও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে।
আপর ক্রেতা শামীমা ইসলাম বলেন, ‘থান কাপড় কিনে পোশাক সেলাই করতে সময় যেমন বেশি লাগে তেমনি সেলাই খরচ বেশি। তাই রেডিমেড কাপড়ই কিনি। তবে ছোট বাচ্চাদের জন্য অল্প থান কাপড় কিনব।’
কেনাকাটা করতে আসা সোনিয়া মান্নান বলেন, ‘টুকটাক কাপড় কিনতে বেরিয়েছি। তবে আমার পছন্দ রেডিমেড কাপড়।’ ইপি বেগম নামে এক ক্রেতা জানান, এ মুহূর্তে ঈদ বাজারের কালেকশন দেখতেই মূলত তিনি মার্কেটে এসেছেন। ঘুরে দেখছেন, পছন্দ হলে কিনবেন।’
জেলা বিজনেস ফোরামের সদস্য সচিব শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, ‘বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কেনাবেচা আশানুরূপ হচ্ছে না। তবে আমরা আশাবাদী শেষ পর্যন্ত কেনাবেচা ভালো হবে।’