![ঘূর্ণিঝড় রিমাল: খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা](uploads/2024/05/28/khatungong-1716881725.jpg)
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ায় ভুগছে নগরবাসী। নগরের অলিগলি ও রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না বললেই চলে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্যবাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য। বেচাকেনা কমেছে। ফলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত ৭০ ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য কমেছে বলে দাবি করছেন সেখানের ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (২৭ মে) চাক্তাই খাতুনগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বড় পণ্যবাহী কোনো ট্রাক নেই। হাতেগোনা কয়েকটি ছোট পিকআপে পণ্য নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ীরা।
তবে অন্য দিনগুলোতে খাতুনগঞ্জে সারি সারি পণ্যবাহী ট্রাক দেখা যায়।
দোকান খোলা রাখলেও কেনাবেচা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত ভ্যান, ট্রলি সড়কের পাশে সাজিয়ে রেখেছেন শ্রমিকরা। অলস সময় পার করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত রবিবার রাত থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে চট্টগ্রামে। তার ওপর রয়েছে জোয়ারের প্রভাব। দোকান খোলা রাখলেও বৈরী আবহাওয়ায় খাতুনগঞ্জে ক্রেতার আনাগোনা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে ক্রেতাসংকটে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলেও জানান তারা।
চাক্তাই এলাকায় আফরা ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘চাক্তাই খালে স্লুইস গেট খোলা থাকায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এ বছর কোনো পানি ওঠেনি। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় গত রবিবার থেকে খাতুনগঞ্জে ক্রেতার উপস্থিতি তেমন নেই। তাই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।’
চাক্তাইয়ের মেসার্স লাল মিয়া সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী আসাদ আসিফ বলেন, ‘এ বছর আমরা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা দেখছি না। তাই আমাদের মালামাল এখনো নিরাপদে আছে। এই ঘূর্ণিঝড়টি শুরু হওয়ার অনেক আগ থেকেই লেখালেখি চলছে। ফলে মানুষ তা সহজেই জানতে পেরেছে। গত বুধবার থেকে খাতুনগঞ্জে ক্রেতার আনাগোনা কমতে শুরু করেছে। ফলে গত পাঁচ দিন ধরে আমাদের এখানে উল্লেখযোগ্য কেনাবেচা হয়নি।’
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘একটা ঘূর্ণিঝড় মানেই আমাদের চিন্তা বেড়ে যাওয়া। আমরা ব্যবসায়ীরা ধারদেনা করে দোকানে পণ্য তুলি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর অনেক ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই প্রতিবছর আমরা অনেক ব্যবসায়ীকে হারিয়ে ফেলছি। খাতুনগঞ্জে দিনে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্রেতাসংকটে কেনাবেচা অনেকটাই কমে গেছে। গত দুদিনে আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ কেনাবেচা কমে গেছে।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে তেমন ক্রেতা নেই। আগে সরাসরি না এলেও ব্যবসায়ীরা ফোনে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে বলে দিতেন। আমরা তা পাঠিয়ে দিতাম। এখন সেটাও নেই। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আর চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে পণ্য খালাসও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। আশা করছি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমে গেলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আবার ব্যবসা বাণিজ্য সচল হয়ে উঠবে। সামনে কোরবানি। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে চাই।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়েছিল। প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গত শনিবার রাত ১০টায় জেটি থেকে বড় জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে এবং ছোট জাহাজগুলোকে কালুঘাটের উজানে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ইক্যুইপমেন্ট জেটি এবং ইয়ার্ড থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। তবে পণ্য খালাস এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সোমবার সারা দিন চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার ওপরে হালকা থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের রিমালের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপরে নতুন করে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার সারা দিন ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাস প্রবাহিত হয়েছে। মাঝে-মাঝে দমকা হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছে। আওহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাতুনগঞ্জের কেনাবেচা স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।